সদ্যসমাপ্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে একটি ‘অনন্য’ নির্বাচন হিসেবে অভিহিত করেছেন বিশিষ্টজন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, ‘এই নির্বাচন থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। এটা নিয়ে গবেষণা করা উচিত।’
শনিবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ভার্চুয়াল সংলাপে এ অভিমত জানান তারা।
সংলাপে অংশ নেন নারায়াণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তিনবারের নির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী।
এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, আরমা দত্ত ও ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক রওনক জাহান।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন আমাদের আপ্লুত করেছে। আইভী প্রায়ই ষড়যন্ত্রের কথা বলেন। এটা ঠিক নয়। তার (আইভীর) সাফল্যের পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে কাজ।’
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন নিয়ন্ত্রিত ছিল না। ফলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। সরকারের জন্য এই নির্বাচন ঝুঁকি ছিল না। কারণ আইভী হলেন ‘ম্যারাডোনা’ তারকা। আইভীর জিতে আসার সম্ভাবনা ছিল উজ্জ্বল। তৈমূর আলম খন্দকার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। তবে এটা কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। কেননা ইভিএমে জালিয়াতি প্রমাণ করার সুযোগ নেই।’
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে অনন্য অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।’
আইভীর ক্লিন ইমেজের কারণে জয়ের পথ সুগম হয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের নারীরা আইভীকে নিয়ে গর্ব করেন। ২০১১ থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার উন্নয়নকাজ হয়েছে নারায়ণগঞ্জে। এসব কাজে আইভীর বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়নি।’
নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন নিয়ে গবেষণার করার পরামর্শ দেন তিনি।
‘নারায়ণগঞ্জ মেয়রের ক্ষমতা নেই’ এ কথা সত্য নয় বলে জানান তোফায়েল আহমেদ। তিনি মনে করেন, মেয়রের হাতে অনেক ক্ষমতা আছে। ক্ষমতা দরকার কাউন্সিলর ও পৌরসভা মেয়রদের।
জলাবদ্ধতা, ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) বাঁধ, পরিবেশ দূষণসহ নারায়ণগঞ্জের অনেক সমস্যা রয়েছে। মেয়রের পক্ষে একা সব সমস্যা দূর করা সম্ভব নয়। পরিবেশ দূষণ করে নারায়ণগঞ্জে শিল্পায়ন করা ঠিক হবে না বলে মত দেন তিনি।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন আর জাতীয় নির্বাচন এক নয়। সেলিনা হায়াৎ আইভী জনগণের প্রার্থী। সংসদ নির্বাচনে টাকার বিনিময়ে প্রার্থী নির্ধারণ করা হয়। ব্যাংকের মালিক, টেলিভিশনের মালিকরা নির্বাচনের টিকিট পান।’
সব নির্বাচনে জনগণের প্রার্থী না থাকলে গণতন্ত্র টেকসই হবে না বলে মত দেন তিনি।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কার্যকর একটি নির্বাচন কমিশন জরুরি বলে মনে করেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ বাড়ছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
স্থানীয় নির্বাচন আর জাতীয় নির্বাচনকে কখনই এক করে দেখতে চান না বিএনপির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু দেখতে চাইলে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে। আইভী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতীক হয়ে উঠেছেন। মার্কা নিয়ে নির্বাচন নয়, ব্যক্তি বনাম সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়েছেন আইভী।’
সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান আইভীর কাছে জানতে চান, নারী ভোটাররা তাকে কেন আকৃষ্ট করেছে? জবাবে আইভী বলেন, ‘আমি কখনই সহিংসতা পছন্দ করি না। যতুটুক পেরেছি নারায়ণগঞ্জের জনগণের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা শহরের মধ্যে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে। আমি কখনও চিন্তা করিনি, ভোট কমে যাবে। সব সময় মনে হয়েছে সৎপথে কাজ করতে হবে।’