প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগের বিলটি আজ সংসদে উঠছে।
চলমান শীতকালীন অধিবেশনে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল ২০২২’ উত্থাপনের কথা রয়েছে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের। রোববারের কার্যসূচিতে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য বিলটি আনা হয়েছে। আইনমন্ত্রী বিলটি তোলার পর পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে আইন, বিচার ও সংসদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হবে।
১৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার (ইসি) নিয়োগ আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।
ওই দিন মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘আর্টিকেল ১১৮(১)-এর একটি বিধান আছে, রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দিতে পারেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এই আইন নিয়ে আসা হয়েছে। এটা খুব বেশি বড় আইন না। এ ধরনের আইন আমরা আগেও হ্যান্ডল করে এসেছি। সেই ধারা অনুযায়ীই এটা করা হয়েছে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এখানে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশের জন্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হবে। এটা অন্যান্য আইনে যেভাবে আছে, ঠিক সেভাবেই। অনুসন্ধান কমিটি করা হবে রাষ্ট্রপতির অনুমতি নিয়ে। সেটার দায়িত্ব ও কার্যাবলি একজন যোগ্য প্রতিনিধির সুপারিশ করা।
কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ফ্রেব্রুয়ারিতে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সরগরম দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। এর মধ্যেই ইসি গঠন নিয়ে আইনে চূড়ান্ত অনুমোদনের পর তা সংসদে তোলা হচ্ছে।
পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বঙ্গভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে সংলাপে অংশ নেয়া সব রাজনৈতিক দলই রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে ইসি আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে।
স্বাধীনতার ৫০ বছরেও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে কোনো আইন তৈরি হয়নি দেশে। সংবিধান অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির হাতে।
২০১২ সাল থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে চার কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে দেশে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ২০১২ সালে এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৭ সালে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসির কমিশনারদের নিয়োগ দিয়েছিলেন।
সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘(১) প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।’
সংবিধানের আলোকে ওই আইন না হওয়ায় প্রতিবারই নির্বাচন কমিশন গঠনে জটিলতা দেখা দেয়। সেই জটিলতা এড়াতে শেষ দুবার সার্চ কমিটি গঠন করে ইসি গঠন হলেও বিতর্ক থামেনি।
গত দুবারের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, নতুন বছরের আগেই মধ্য ডিসেম্বরে সংলাপ শুরুর উদ্যোগ নেন রাষ্ট্রপতি। মধ্য জানুয়ারিতে সংলাপ শেষ হয়। সার্চ কমিটি গঠিত হয় জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে। নাম প্রস্তাব ও বাছাই শেষে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সিইসি ও ইসির নাম প্রকাশ করা হয়।
কমিশনার হওয়ার যোগ্যতা-অযোগ্যতা
কারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা কমিশনার হতে পারবেন তার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা ঠিক করে দেয়া হয়েছে খসড়া আইনের ৫ ও ৬ ধারায়।
১৭ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে; মিনিমাম ৫০ বছর হতে হবে। কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি বা বিচার বিভাগীয় পদে কমপক্ষে ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তাহলেই উনি হয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা নির্বাচন কমিশনার হতে পারবেন।’
অযোগ্যতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘অযোগ্যতা হলো তিনি যদি কোনো আদালত কর্তৃক ইনসেন্স অর্থাৎ অপ্রকৃতস্থ ঘোষিত হন, তা হলে পারবেন না। দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর দায়মুক্ত না হলেও পারবেন না। কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন বা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন তা হলে।
‘আমাদের যাদের সঙ্গে ডুয়েল সিটিজেনশিপ আছে সেখানে তারা থাকতে পারবেন। কিন্তু অনেকে সিটিজেনশিপ স্যারেন্ডার করে দিয়েছেন। তারা আর পারবেন না। নৈতিক স্খলন যদি হয় এবং ফৌজদারি অপরাধে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ড হয়, তা হলে পারবেন না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে যদি কোনোভাবে কনভিক্ট হন, তা হলেও পারবেন না।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা কমিশনার থেকে অবসরে যাওয়ার পর কী কী করতে পারবে না, খসড়া আইনে তাও উল্লেখ করা আছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
অনুসন্ধান কমিটিতে থাকবেন কারা
অনুসন্ধান কমিটিতে কারা থাকবেন সেটিও ঠিক করে দেয়া হয়েছে আইনে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এতে থাকবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক, যিনি এটার চেয়ারম্যান হবেন।
‘তারপর থাকবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, কন্ট্রোলার বা অডিটর জেনারেল, চেয়ারম্যান পিএসসি। আরও দুজন থাকবেন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাগরিক।’