চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য বোঝাই কনটেইনার (এলসিএল) ডেলিভারিতে নানামুখী সংকট তৈরি হচ্ছে। স্বাভাবিক পণ্যের চেয়ে এসব পণ্য ডেলিভারি পেতে ৭-৮ দিন বেশি সময় লেগে যায়। এতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তৈরি পোশাক খাত।
সমস্যাগুলো সমাধানে চট্টগ্রাম বন্দরে ডেলিভারি শেড বৃদ্ধি ও শেডের আধুনিকায়নের দাবি জানিয়েছে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
সংগঠনটির সাবেক সহ সভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সালাম জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য নিয়ে দুই ধরনের কনটেইনার আসে চট্টগ্রাম বন্দরে। এর মধ্যে শুধুমাত্র একজন আমদানিকারকের পণ্য বোঝাই কনটেইনারকে বলা হয় এফসিএল কনটেইনার। আর কয়েকজন আমদানিকারকের পণ্য বোঝাই কনটেইনারকে বলা হয় এলসিএল কনটেইনার।
বিশ্বের উন্নত বন্দরগুলোর ভেতরে এলসিএল কনটেইনার থেকে পণ্য বের করে বিভিন্ন আমদানিকারককে বুঝিয়ে দেয়া হয় না। পুরো কনটেইনার নির্দিষ্ট একটি জায়গায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। ওখান থেকে আমদানিকারকেরা নিজেদের পণ্য খালাস করে নিয়ে যান।
চট্টগ্রাম বন্দরে এলসিএল কনটেইনারগুলো ইয়ার্ডের ভেতরে খোলা হয়। সব পণ্য বের করে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের সরবরাহ দেয়া হয়। এতে বিশাল জায়গা ও সময় বেশি লাগে। যদি কোনো জাহাজে দেড়শ টিইইউএসের বেশি এলসিএল কনটেইনার আসে তাহলে সামাল দিতে বন্দরকে হিমশিম খেতে হয়।
একইভাবে এসব কনটেইনার বোঝাই করে পণ্য আনা ব্যবসায়ীদেরও সংকটে পড়তে হয়। এ ধরনের এক একটি কনটেইনার থেকে পণ্য খালাস করতে ৭-৮ দিন পর্যন্ত বাড়তি সময় লাগে। অনেক সময় এর প্রভাব পড়ে কারখানায়। কাঁচামাল সংকটে পড়ে কারখানার উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যায়।
বিজিএমইএর সদস্য খন্দকার বেলায়েত হোসেন জানান, শুধু আমদানি পণ্য খালাসে নয়, রপ্তানি পণ্য বোঝাই কনটেইনারের ক্ষেত্রেও সংকট আছে। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে রপ্তানি পণ্য বোঝাই কনটেইনারগুলোর শতভাগই আসে বেসরকারি অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল (আইসিডি) হয়ে। আইসিডি থেকে এসব কনটেইনার এনে জাহাজে বোঝাই করে দেয়া হয়।
অধিকাংশ সময়ই আইসিডি থেকে কনটেইনারগুলোকে সরাসরি জাহাজের হুক পয়েন্টে নিয়ে আসা হয়। কনটেইনারগুলো আগেভাগে এনে বন্দরের অভ্যন্তরে রাখার ব্যবস্থা করা হলে রপ্তানিপণ্য বোঝাই কনটেইনার জাহাজীকরণ বেশি গতিশীল হতো।
বিশেষ করে চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনালে রপ্তানি পণ্য বোঝাই কনটেইনার রাখার মতো কোনো নির্দিষ্ট জায়গা নেই। অবশ্য নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে ১ হাজার ও জেনারেল কার্গো বার্থ এলাকায় ১৪ শ টিইইউএস রপ্তানি পণ্য বোঝাই কনটেইনার রাখার স্লট রয়েছে। চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনালে (সিসিটি) এই ধরনের একটি জায়গা নির্দিষ্ট করা হলে রপ্তানিকারকদের সুবিধা হতো।
তিনি বলেন, ‘বন্দর থেকে আমদানি পণ্যের কনটেইনার খালাস করতে প্রথমে যেতে হয় ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারে। ওখান থেকে কনটেইনারটির অবস্থান জানানো হয়। লোকবল সংকটসহ বিভিন্ন কারণে ওয়ান স্টপ সার্ভিস থেকে অধিকাংশ সময়ই কনটেইনারের অবস্থান জানা সম্ভব হয় না। কখনও কখনও অবস্থান বলা হলেও কনটেইনার খুঁজে পাওয়া যায় না।
‘জেনারেল কার্গো বার্থে (জিসিবি) প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এতে আমদানি পণ্য খালাসে অনাকাঙ্খিতভাবে বাড়তি সময় লাগছে। বাড়ছে খরচ। কারখানাগুলোকে নিয়মিত কাঁচামাল সংকটে পড়তে হচ্ছে।’
সংকটের কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘বন্দরে প্রচুর জাহাজ আসছে। কনটেইনারের সংখ্যাও বেড়েছে। বাড়তি চাপ সামাল দিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।’
পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) চালু হলে এ সমস্যা থাকবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।