বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সুকুক লেনদেনে বাধা উচ্চহারে কমিশন

  •    
  • ২২ জানুয়ারি, ২০২২ ০৯:৩২

সুকুক বা বন্ড কেনার ক্ষেত্রে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ নির্ধারিত লেনদেনের মাশুল ৫০ টাকা, অগ্রিম কর দিতে হয় আড়াই টাকা ও বাকি সাড়ে ২২ টাকা ব্রোকারেজ হাউসের কমিশন। মোট সাড়ে ৭৪ টাকা দিতে হয় কমিশন। এক লাখ টাকা পর্যন্ত বন্ড কেনাবেচার ক্ষেত্রে এই হারে কমিশন দিতে হবে। এই নীতির কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পক্ষে কম পরিমাণে বন্ড কেনা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় মুনাফার নিশ্চয়তার পরও বেক্সিমকোর আনা ইসলামি গ্রিন সুকুক বন্ডে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই বললেই চলে। বন্ডটি পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরুর পর হাতবদল হচ্ছে খুবই কম। চাহিদা না থাকায় দ্বিতীয় দিনই তা নেমে গেছে অভিহিত মূল্যের নিচে। ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের বন্ড এখন পাওয়া যাচ্ছে ৯০ টাকা ৫০ পয়সায়।

বন্ডটি বছরে ন্যূনতম ৯ শতাংশ মুনাফা দেবে, যেভাবে ব্যাংকে টাকা রাখলে এখন পাওয়া যায় ৬ শতাংশের কম। মুনাফার হার আরও বেশি হতে পারে, আর বছর শেষে বন্ডে বিনিয়োগের বিপরীতে ২৫ শতাংশ কম দামে শেয়ার পাওয়ার সুযোগের কারণে মুনাফার হার ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশিও হতে পারে।

এত আকর্ষণীয় মুনাফার সুযোগ থাকার পরও বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহ কেন?- প্রাপ্ত তথ্য বলছে, বন্ডটি নিয়ে ধারণার অভাবের পাশাপাশি কারণ হিসেবে আছে এটি কেনাবেচায় মাত্রাতিরিক্ত মাশুলও।

এমনিতে শেয়ার কেনাবেচায় ১০০ টাকার বিপরীতে সর্বনিম্ন ২০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ পয়সা পর্যন্ত কমিশন কাটে ব্রোকারেজ হাউস। তবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মাশুল, অগ্রিম কর আর ব্রোকারেজ হাউসের কমিশন মিলে সুকুক বন্ডে লাগতে পারে এর চেয়ে বহুগুণ।

সুকুক বা বন্ড কেনার ক্ষেত্রে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ নির্ধারিত লেনদেন মাশুল ৫০ টাকা, অগ্রিম কর দিতে হয় আড়াই টাকা ও বাকি সাড়ে ২২ টাকা ব্রোকারেজ হাউসের কমিশন। মোট সাড়ে ৭৪ টাকা দিতে হয় কমিশন। একই হারে কমিশন দিতে হবে সুকুক বিক্রি করার ক্ষেত্রেও।

এক শ টাকা থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত বন্ড কিনলে সব মিলিয়ে কমিশন কাটা হচ্ছে সাড়ে ৭৪ টাকা। আর সেই একটি সুকুক বিক্রি করলেও একই হারে কমিশন দিতে হচ্ছে।

অর্থাৎ বড় অঙ্কের কিনলে কমিশনের চাপ বেশি বোধ না হলেও কেউ যদি কম টাকার কিনতে চান, তার কমিশন বেশি পড়ে যাচ্ছে।

ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ট্রেডারদের বক্তব্য, পুঁজিবাজারে যে বন্ডগুলো আছে সেগুলোর অভিহিত মূল্য ৫ হাজার টাকা। আর বন্ডে যারা বিনিয়োগ করেন, তারা ডে ট্রেডিংয়ের উদ্দেশ্যে বা অল্প টাকায় বিনিয়োগ করে না। তারা বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে থাকেন। কিন্তু সুকুকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ থাকায় বিষয়টি ভিন্ন হতে পারত। এখানে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ করার সুযোগ থাকা উচিত ছিল।

একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের তথ্য বলছে, সুকুক আসার পর কেউ ১০টি, কেউ ৫০টি বন্ড কেনার অর্ডার দিতে গিয়ে কমিশনের কথা জেনে পিছিয়ে এসেছে।

কেউ যদি বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করেন, তাহলে তাকে কমিশনের কারণে একসঙ্গে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বন্ড বিক্রি করতে হবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ক্রেতা পাওয়া কঠিন।

অথচ যেকোনো কোম্পানির শেয়ার একটি করেও কেনাবেচা করা যায় এবং সে ক্ষেত্রে কমিশন হয় প্রতি ১০০ টাকায় ২০ বা ৫০ পয়সা হিসাবেই।

এ কারণে প্রথম দিন অভিহিত মূল্যের চেয়ে বেশি টাকায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বন্ড কেনার আদেশ এলেও পরের দিনগুলোতে ক্রয়াদেশ ক্রমেই কমছে।

গত ১৩ জানুয়ারি লেনদেন শুরুর প্রথম দিন সর্বোচ্চ দর উঠে ১১০ টাকা। দিন শেষে দর দাঁড়ায় ১০১ টাকা। সেদিন হাতবদল হয় ৩২ লাখ ৩২ হাজার ৭৭২টি বন্ড।

দ্বিতীয় কর্মদিবস ১৬ জানুয়ারিতেই অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে আসে বন্ড। সেই সঙ্গে কমে চাহিদা। লেনদেন হয় ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৪টিতে।

লেনদেন শুরুর ঠিক এক সপ্তাহ পর ২০ জানুয়ারি হাতবদল হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৭৬৪টি বন্ড।

কমিশনের নীতির কারণে সুকুক বন্ড লেনদেনে ধীরগতির এই বিষয়টি নজরে এসেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনেরও (বিএসইসি)।

সংস্থাটির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বন্ডের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আগ থেকেই একটি চার্জ নির্ধারণ করা আছে। সেটি সুকুকের ক্ষেত্রেও কার্যকর হচ্ছে। তবে অন্যান্য বন্ডের তুলনায় সুকুকে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী বেশি। কিন্তু কমিশন বা চার্জ বেশি হওয়ায় আগ্রহ হারাচ্ছে। সেটি আমাদের নজরে এসেছে।

‘চার্জ নির্ধারণে বিএসইসি’র কিছু করার নেই। ডিএসই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে বিষয়টি দ্রুত সমাধানে ডিএসইকে এরই মধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশা করি এ সমস্যা থাকবে না।’

ডিএসইর উপমহাব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান বলেন, সুকুকের কমিশনের বিষয়টি সমাধানে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

সুকুক বন্ড বিনিয়োগকারীদের বছরে ৯ শতাংশ ন্যূনতম মুনাফা দেয়ার পাশাপাশি আরও নানা সুযোগের কথা উল্লেখ আছে। বলা হয়েছে, বেক্সিমকো লিমিটেডের লভ্যাংশ ১০ শতাংশের বেশি হলে যতটুকু বেশি হবে, তার ১০ শতাংশ যোগ হবে সুকুকের লভ্যাংশে।

২০২১ সালের জন্য বেক্সিমকো লিমিটেড বিনিয়োগকারীদের ৩৫ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। আগামীতেও যদি একই হারে লভ্যাংশ দেয়, তাহলে এই ৩৫ শতাংশে ১০ শতাংশের অতিরিক্ত ২৫ শতাংশের ১০ শতাংশ হিসেবে আড়াই শতাংশ সুকুরের লভ্যাংশে যোগ হবে। অর্থাৎ তখন বন্ডধারীরা সাড়ে ১১ শতাংশ লভ্যাংশ পাবেন।

সুকুকের এই লভ্যাংশ করমুক্ত রাখার বিষয়েও আলোচনা চলছে। এমনিতে লভ্যাংশের ওপর ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ কর কাটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। সুকুকে সেটি না কাটা হলে প্রকৃত মুনাফা বেশি হবে।

আবার প্রতিবছর বিনিয়োগকারীরা ২০ শতাংশ টাকা তুলে নিতে পারবেন অথবা তিনি চাইলে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার নিতে পারবেন।

এখানেই রয়েছে বাড়তি মুনাফার সুযোগ। কারণ এই শেয়ার পাওয়া যাবে ২৫ শতাংশ কম দামে। রেকর্ড ডেটের আগের দুই সপ্তাহের ভরিত গড় হিসাব করে এই শেয়ার দেয়া হবে।

অর্থাৎ শেয়ার মূল্য ১০০ টাকা হলে বিনিয়োগকারী পাবেন ৭৫ টাকায়, শেয়ার মূল্য ২০০ হলে পাবেন ১৫০ টাকায়, আর শেয়ার মূল্য ৩০০ হলে পাবেন ২২৫ টাকায়, শেয়ার মূল্য ৪০০ টাকা হলে তিনি পাবেন ৩০০ টাকায়। এভাবে যে শেয়ার তিনি পাবেন, তাতে ৩৩ শতাংশ মুনাফা করার সুযোগ আছে। সব মিলিয়ে এক লাখ টাকায় ৫ বছরে ন্যূনতম ৭৮ হাজার টাকা মুনাফা পাবেন তিনি।

সুকুক হলো ইসলামিক শরিয়াহ নীতিমালা মেনে পরিচালিত বন্ড বা আর্থিক পণ্য। প্রচলিত বন্ডের সুদের পরিমাণ নির্ধারিত থাকে, কিন্তু তার বিপরীতে কোনো সম্পদের ব্যাকআপ থাকে না। তবে সুকুক নির্দিষ্ট সম্পদ বা প্রকল্পের বিপরীতে গঠিত হয়। ওই সম্পদ ও প্রকল্পের আয়ই আনুপাতিক হারে পেয়ে থাকেন সুকুক ইউনিটধারীরা।

সুদবিহীন সুকুক বন্ডের ৩ হাজার কোটি টাকার বেশির ভাগ অংশই দুটি সৌরচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ করবেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো লিমিটেড।

এ বিভাগের আরো খবর