বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সুমিত্রা-রুপাদের স্বপ্ন কেড়ে নিল সিকদারের বাগানবাড়ি

  •    
  • ২২ জানুয়ারি, ২০২২ ০৮:৪৬

বাপ-দাদার ভিটেমাটি থাকতেও দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সুমিত্রা রানী ও তার স্বজনরা। তাদের অভিযোগ, প্রভাবশালী এক পরিবারের শখের বাগানবাড়ি বানাতে গিয়ে উচ্ছেদ করা হয় ওই পরিবারটিকে।

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক মৌজার মধুপুর গ্রাম। এই গ্রামেই অন্তত ৩০ একর জমির ওপর ২০০৯ সালে একটি বাগানবাড়ি গড়ে তোলার কাজ শুরু করে প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদারের পরিবার।

পুকুরের মধ্যে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন চারতলা ভবন, হরিণের খামার, দুটি পুকুরের সংযোগস্থলে সেতু আর নানা প্রজাতির গাছপালা দিয়ে সাজানো হয় বাগানবাড়িটি।

অভিযোগ উঠেছে, এই বাগানবাড়ি বানাতে গিয়েই একটি হিন্দু পরিবারকে জোর করে উচ্ছেদ করেছে সিকদার রিয়েল এস্টেট। তবে উচ্ছেদের বিষয়টি অস্বীকার করছে ওই প্রতিষ্ঠান।

সুমিত্রার দাবি, ওই বাগানবাড়ির মধ্যেই তাদের ৪১ শতাংশ জমি; ছিল বাড়িও। ২০১৮ সালে ওই বাড়ি থেকে জোর করে তাড়িয়ে দেয়া হয় সুমিত্রা ও তার স্বজনদের। নির্মাণ করা হয় সীমানাপ্রাচীর আর বিশাল ফটক।

সুমিত্রার বাবা অমূল্য চরন দে ওই জমির মালিক ছিলেন। তার মৃত্যুর পর বিআরএস জরিপে সুমিত্রার ভাই রতন কুমার দে ও জগদীস চন্দ্র দে’র নামে ওই জমির মালিকানা হয়। দুটি টিনের ঘরে পরিবারটি বসবাস করত।

সুমিত্রাদের টিনের ঘর

২০০৯ সালে রতন কুমার দে ও ২০১৩ সালে তার স্ত্রী ঝর্না রানী দে তিন শিশুকন্যা রেখে মারা যান। এরপর সুমিত্রা ও তার ভাই জগদীশ দে ওই শিশুদের লালনপালনের দায়িত্ব নেন।

ভিটেমাটি হারানোর পর নানা রোগ-শোক ভর করে জগদীশের শরীরেও। ২০২০ সালে তিনিও মারা যান।

সংসারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় এবং বাড়ি থেকে বিতাড়িত হওয়ায় ভাইয়ের তিন কিশোরী কন্যা নিয়ে বিপাকে পরেন সুমিত্রা। আশ্রয় নেন পাশের ডিঙ্গামানিক গ্রামের কাদির শেখের পরিত্যক্ত রান্না ঘরে।

উচ্ছেদের বর্ণনা দেন সুমিত্রা

সেই দিনের স্মৃতি মনে করে সুমিত্রা বলেন, ‘আমি পাট লইতাছিলাম। পাট লওয়া শ্যাষ কইরা ৩টা সাড়ে ৩টার দিকে বাড়ি গেলে বাড়িতে ঢুকতে দেয় নাই। সিকদারের ছেলেরা দাঁড়াইয়া থাইক্যা বাউন্ডারি দিসে। কইছিলাম, ঘরে খাওনদাওন, কাপড়চোপড় আছে, এগুলো আনতে দেন। কিন্তু দেয় নাই। পরনের ময়লা কাপড় লইয়া, তিনডা মাইয়ারে লইয়া মাথা গোঁজার লিগ্যা মানুষের দ্বারে দ্বারে যাই। কিন্তু সিকদারগো ভয়ে কেউই আমাগো রাখতে সাহস পায় না। পরে এই বাড়ির রান্দোন ঘরে থাকি।’

তিনি বলেন, ‘এই শোকে আমার ভাইডাও মইরা গেল। একটা মাইয়া যেই বেতন পায় হেইয়া দিয়াই কোনোরকম চলি।’

সুমিত্রা জানান, নিজের বাড়ির ভিটায় ফিরে যাওয়াই এখন তাদের স্বপ্ন।

রতন দে’র মেয়ে রুপা রানী দে বলেন, ‘সিকদারের ছেলেরা বাড়ি এলেই গোলাগুলি করত, আরও অনেক কাজ করত। ভয়ে আমরা বাড়ি থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে থাকতাম। মা-বাবা নাই, কাকাও মারা গেছে, এখন শুধু পিসিই বেঁচে আছেন। জমি আর আমাদের জন্য চিন্তা করতে করতে তার শরীরও ভালো নেই।’

রুপা জানান, মহিলা অধিদপ্তরের একটা প্রজেক্টে কাজ করে তিনি ৮ হাজার টাকা বেতন পান। তা দিয়ে ঘর ভাড়া, তিন বোনের পড়ার খরচ, পোশাক, খাওয়া কোনোটাই পুরোপুরি করা সম্ভব হয় না। সব সময়ই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন তারা।

তিনি আরও জানান, মন্ত্রী এনামুল হক শামীম তাদের একবার দেখতে গিয়েছিলেন। ভিটেমাটি ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে তিনি আশ্বাসও দিয়েছেন।

এদিকে সিকদার রিয়েল স্টেটের প্রকৌশলী ও ব্যবস্থাপক সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘সুমিত্রারা এখানে বসবাস করতেন। এখনও তাদের দুটি ঘর আছে। আমাদের নিরাপত্তার জন্যই বাউন্ডারি দেয়া হয়েছে। তাদের উচ্ছেদ করা হয়নি। তারা চলে গেছেন। তাদের যদি কোনো কাগজপত্র থাকে এবং সেটা যদি তারা দেখাতে পারেন তাহলে যেভাবে মীমাংসা করতে চান, সেভাবেই মীমাংসা করা হবে।’

জমির মালিকানা জানতে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গেলে ভূমি কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন মোল্লা নথিপত্র দেখে জানান, দাবি করা জমিটির মালিক হচ্ছেন অমূল্য চন্দ্র দের দুই ছেলে রতন কুমার দে ও জগদীস চন্দ্র দে। ভাইদের এই জমির খাজনা বাংলা ১৪২৫ সন পর্যন্ত পরিশোধ করেছেন সুমিত্রা রানি দে।

এ বিভাগের আরো খবর