র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সৃষ্টি বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন।
শুক্রবার দুপুরে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের নগদীপুর গ্রামে শিক্ষানুরাগী যুক্তরাজ্য প্রবাসী জিল্লুর রহমানের নাগরিক সংবর্ধনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব সৃষ্টি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। তারা এই বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, দক্ষ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র র্যাবকে শিখিয়েছে তাদের নিয়ম ও শৃঙ্খলা। কীভাবে মানুষের সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে, কীভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে (হাউ টু ইন্টারগেশন)- র্যাবকে এসব কিছু শিখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট স্বীকার করেছে, র্যাবের কারণে আমাদের এখানে সন্ত্রাসবাদ কমেছে। বিদেশিরা একতরফা তথ্য পেয়ে আমাদের র্যাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।’
গত ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ রয়েছেন।
শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ-সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলেছিলেন, তখন তার পাশে ছিলেন যুক্তরাজ্য শাসিত জিব্রাল্টারের ব্যবসা, পর্যটন ও বন্দরমন্ত্রী ভিজয় দারিয়ানানি; যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্য টম হান্ট ও পল ব্রিস্টো।
আরও উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য শামীমা শাহরিয়ার, যুক্তরাজ্য প্রবাসী নদগীপুর গ্রামের বাসিন্দা জেড আই ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা জিল্লুর হোসাইন, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির প্রমুখ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘র্যাব বাংলাদেশে নিজেদের কাজকর্মের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করেছে। তারা খুবই কার্যকরী (ইফেক্টিভ), খুব দক্ষ (ভেরি ইফেশিয়ান্ট)। তারা দুর্নীতিগ্রস্তও নয়। এ কারণেই তারা জনগণের আস্থা অর্জন করেছে। তাদের কারণে আমাদের দেশের সন্ত্রাসী কার্যক্রম কমে গেছে। গত কয়েক বছরে হলি আর্টিজানের পর আর কোনো সন্ত্রাসী তৎপরতা হয়নি। এটা সম্ভব হয়েছে র্যাবের কারণেই।’
তিনি বলেন, ‘আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট নিজে র্যাবের কৃতিত্বের কথা স্বীকার করেছে। কিন্তু এখন কিছু লোক যারা আইনশৃঙ্খলা পছন্দ করে না, যারা সন্ত্রাস পছন্দ করে কিংবা ড্রাগ পছন্দ করে তারাই র্যাবকে পছন্দ না করে বিদেশিদের কাছে নালিশ করছে।’
মন্ত্রী আবদুল মোমেন আরও বলেন, ‘স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্রে এক লাখ মানুষ নিখোঁজ হয়। তো এর দায় কে নেবে? আর আমাদের দেশে যারা নিখোঁজ হয়, পরবর্তী সময়ে দেখা যায় আবার তারা বের হয়ে আসছে। গত ১০ বছরে ৬০০ জন নিখোঁজ হয়েছে।’
বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন ও হারিছ চৌধুরীর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘হারিছ চৌধুরী ১৫ বছর ধরে নিখোঁজ ছিলেন। তিনি ঢাকায়ই আত্মগোপন করে ছিলেন। হুজুর সেজে তাবলিগ করতেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে মারা যান তিনি। সালাহ উদ্দিন সাহেবকে আসামের শিলং পাওয়া গেছে।
‘যারা র্যাবকে পছন্দ করে না, তারাই অপপ্রচার করছে। সব দেশেই কিছু মৃত্যু হয়। বাংলাদেশেও কিছু হয়েছে। আগে বেশি ছিল, এখন খুব কম হচ্ছে। তার পরও যখন এমন মৃত্যু হয়, তখন বিচারিকভাবে সেটি তদন্ত হয়।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে দুটি ক্ষেত্রে র্যাব অন্যায় করেছিল, সেই ঘটনার বিচার হচ্ছে। ওদের শাস্তিও হচ্ছে। র্যাবের যদি দুর্বলতা থাকে, যদি কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়, অবশ্যই সেখানে নতুন করে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। কিন্তু কোনো ব্যক্তিবিশেষের ওপর হঠাৎ করে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে সেটা ন্যায়সংগত নয়।’
যারা র্যাব ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নালিশ করেছে তাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা আসেন, দেখেন, লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। আসল ঘটনা উদ্ধার করেন। তারপর আপনারা সিদ্ধান্ত নেন।’