উপাচার্য ইস্যুতে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে আলোচনা করতে ঢাকায় আসছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করা ৫ সদস্য শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর উদ্দেশে যাত্রা করবেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বানে তাদের এই যাত্রা। আলোচনায় গেলেও তাদের অনশন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনিও। রাজধানীর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে শুক্রবার বিকেলে এক আলোচনা সভা শেষে শুক্রবার সাংবাদিকদের শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমিতির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে রাতে আলোচনা করব।
এক হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে গত ১৩ জানুয়ারি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তার পর নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে আন্দোলনের মোড় উপাচার্য অপসারণের এক দফা দাবিতে। ১৯ জানুয়ারি থেকে আমরণ অনশনে বসেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের কয়েক দফা চেষ্টায়ও অনড় অবস্থান থেকে সরানো যায়নি তাদের।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন শিক্ষামন্ত্রী। ফোনে শুক্রবার বিকেলে আন্দোলনরতদের সঙ্গে কথা বলেন দীপু মনি। গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে লাউড স্পিকারে মন্ত্রী কথা বলেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে।
ফোনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের সন্তানরা ভালো থাকবে। তাদের যেন কোনো কষ্ট না হয়। ক্যাম্পাসও ঠিক থাকবে।
‘বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসনের ব্যাপার আছে। আমরা তাতে দ্রুত হস্তক্ষেপ করতে চাই না। তবে শিক্ষার্থীরা কষ্ট পাবে, এটাও চাই না। সব সমস্যার সমাধান আছে। এটারও নিশ্চয় আছে। আলোচনার মাধ্যমে সেই সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।’তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪-৫ জন যদি আসেন, শিক্ষক সমিতির নেতারাও যদি আসেন, তবে আমরা আলাপ করে একটা সমাধানে পৌঁছাতে পারব।’মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আপনারা নিজেদের মধ্যে কথা বলে আসবেন। পরে নিজেদের মধ্যে যেন ঝামেলা না হয়।’শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলাপকালে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘আমরা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী। সন্ধ্যার আগেই আমাদের ৫ জন ঢাকায় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে যাবেন। আশা করছি, মন্ত্রী আমাদের দাবি মেনে নেবেন।’তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় গেলেও অনশন যথারীতি চলবে।’এর আগে শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে শিক্ষামন্ত্রীর আলোচনার প্রস্তাব নিয়ে ক্যাম্পাসে যান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আশফাক, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনসহ কয়েকজন নেতা। তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পর আওয়ামী লীগ নেতারা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের বাসভবনে যান আলোচনার জন্য।
সেখান থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল। তার আগে সাংগঠনিক সম্পাদকের মোবাইল ফোনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
নাদেল বলেন, ‘এভাবে অচলাবস্থা দীর্ঘদিন চলতে পারে না। আমাদের সন্তানদের এই কষ্ট মেনে নিতে পারছি না।’
‘শিক্ষামন্ত্রীর বার্তা নিয়ে এখানে এসেছি। দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের পথ বের করার চেষ্টা করব। উপাচার্যও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল বাশার বলেন, ‘আমাদের একটাই দাবি। তা হলো উপাচার্যের পদত্যাগ। এই দাবি আদায় না হলে আমরা আন্দোলন থেকে সরছি না। প্রয়োজনে আমরা মারা যাব।’
এদিকে অনশনকারীদের মধ্যে অসুস্থ হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। বেলা ৩টা পর্যন্ত ১২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা সেখানেও অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান নেয়াদের সবার স্যালাইন চলছে।