আগুনে পুড়ে গেছে বসতঘর এবং সেই ঘরে থাকা প্রায় সবকিছুই। তাই শৈত্যপ্রবাহ চললেও সাত দিনের সন্তানের গায়ে পাতলা কম্বল গায়ে জড়িয়ে বারান্দায় রাত পার করতে হচ্ছে আঞ্জুয়ারা বেগমের।
সর্বস্ব হারানোর দুঃখের চেয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের আঞ্জুয়ারার এখন চিন্তা তার নবজাতক শিশুকে কনকনে ঠান্ডা থেকে বাঁচানো নিয়ে।
সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের পটুয়া পাইকপাড়া গ্রামে গত বুধবার রাত ১১টার দিকে আগুন লাগে। এতে পুড়ে যায় গ্রামের অর্ধশতাধিক ঘর। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরও ১০-১২টি বসতি।
ক্ষতিগ্রস্তদের একজন আঞ্জুয়ারা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগুনে যখন ঘর পুড়ছিল তখনকার চেয়ে এখন কয়েক গুণ বেশি দুশ্চিন্তা হচ্ছে। বাচ্চা বারবার প্রস্রাব করছে। এমনিতেই বাচ্চাটার ঠান্ডায় সর্দির সমস্যা হয়েছে। এখন ভেজা কাপড়ে থাকলে আরও বেশি ঠান্ডা লেগে যাবে। পরনেরটা ছাড়া আমাদের কারোই আর কোনো কাপড় নাই।’
সদ্য প্রসূতি স্ত্রী ও নবজাতককে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন রডমিস্ত্রি রুহুল আমিন।
রুহুল বলেন, ‘২০ দিন আগে আমার স্ত্রীর সিজার হয়েছে। শ্বশুরবাড়ি থেকে দেয়া সব সহযোগিতা, ওষুধপত্র আগুনে পুড়ে গেছে। বাচ্চার মায়ের আলাদা যত্ন নিতে বেশি বেশি খাওয়ানো দরকার। চিকিৎসা আর ওষুধ দরকার। আমরা গরিব মানুষ। কিছু বুঝতে পারতেছি না কীভাবে কী হবে?’
দিনমজুর ধজির মিয়া ওরফে ধজু ভুগছেন ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে। শারীরিক দুর্বলতার কারণে ঠিকমতো হাঁটাচলাও করতে পারেন না।
তিনি জানান, আগুনে তার সঞ্চয়ের ৬০ হাজার টাকা পুড়ে গেছে। প্রতিদিন নিতে হয় ইনসুলিন, খেতে হয় ওষুধ। সেসবও পুড়ে শেষ। দ্রুত তার ওষুধ প্রয়োজন।
স্থানীয় ফারুক হোসেন জানান, পাইকপাড়ায় ২ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশু আছে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন। দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের শিশু ও বয়স্কদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে না পারলে তারা বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বেন। প্রাণহানিও ঘটতে পারে।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে চাল, ডাল ও তেল দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
তবে এ বিষয়ে এখনও সেভাবে নজর দিতে পারেননি বলে জানান জেলা সিভিল সার্জন নূর নেওয়াজ আহমেদ।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকায় পাইকপাড়ায় আলাদাভাবে নজর দেয়া সম্ভব হয়নি। সেখানে মেডিক্যাল ক্যাম্পের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনাও পাওয়া যায়নি। তবে আমি সেখানে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব।’