করোনার টিকার জন্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় সাত লাখ টাকা তুলে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় কেউ লিখিত অভিযোগ না দিলেও স্থানীয়দের দেয়া তথ্যে উপজেলা প্রশাসন তদন্ত শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার গঠন করা হয়েছে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হাশেম।
যার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি হলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম।
ইউএনও জানান, শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দিতে সার্বিক খরচ বহন করছে সরকার। সেখানে শিক্ষার্থী বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা নেয়ার কোনো নিয়ম নেই।
তিনি আরও জানান, স্থানীয়ভাবে অভিযোগ উঠেছে যে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কিছু প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। অভিযোগের সত্যতা আছে কিনা জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৩ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর মধ্যে জেলা সদর থেকে টিকা আনার জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া বাবদ প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৫০ টাকা করে আদায় করার অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, টিকা পরিবহনের জন্য স্কুলপ্রতি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এই টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তোলা হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, বরিশাল থেকে আগৈলঝাড়া উপজেলায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া ২২ শ টাকা করে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের টিকা আনার জন্য ১৩ দিনে ২২ শ টাকা হিসেবে ২৮ হাজার ৬ শ টাকা এবং আরও দুই দিন টিকা আনার ভাড়া বাবদ চালককে দেয়া হয়েছে ৩ হাজার টাকা। টিকা সরবরাহের জন্য সর্বসাকুল্যে খরচ হয়েছে ৩৪ হাজার ৬ শ টাকা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বখতিয়ার আল মামুন বলেন, ‘সরকার টিকা সরবরাহের সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করে। সেখানে টিকা পরিবহনে টাকা তোলার প্রশ্নই ওঠে না। শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শুনেছি। অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। আশা করি সঠিক সত্যটি বেড়িয়ে আসবে।’
আঞ্চলিক উপপরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। টিকা দেয়ার জন্য টাকা তোলার নিয়ম নেই। যদি কেউ এমন কাজ করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘টিকা আগৈলঝাড়ায় এনে দেয়ার জন্য পাঁচজন শিক্ষক নেতা মিলে বিভিন্ন স্কুল থেকে টাকা তুলেছেন। সেই টাকা জমা রেখেছিলেন শিক্ষা অফিসের অফিস সহায়ক মন্টু বাবুর কাছে। আগামী রোববার টাকার হিসেব দেয়ার কথা, কিন্তু তার আগেই বিভিন্ন অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
‘এমনভাবে উত্থাপন করা হচ্ছে যেন মনে হচ্ছে টিনের বক্সে একদিকে ৫০ টাকা ফেলেছেন অন্য দিকে টিকা নিয়েছেন। বিষয়টি তেমন নয়। শিক্ষক নেতারা টাকা উত্তোলন করে এখন আমার ওপর দায় দিচ্ছেন। ৭ লাখ টাকা উত্তোলন হাস্যকর বিষয়। সম্ভবত ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা উত্তোলন হতে পারে, কিন্তু এর মধ্যে আমাকে কেন জড়ানো হচ্ছে তা বুঝতে পারছি না।
এর আগে নওগাঁ ও পাবনাতেও করোনাভাইরাসের টিকা বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।