বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জাবি ছাত্রীদের বিয়ে হয় না অডিও ‘এডিটেড’: শাবি উপাচার্য

  •    
  • ২০ জানুয়ারি, ২০২২ ২১:৩৬

উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা একদম বোগাস। আমি এ রকম কোনো কথা বলিনি। এগুলো কেউ এডিট করে প্রচার করতে পারে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিয়ে ‘আপত্তিকর মন্তব্য’ করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

তার নামে ছড়িয়ে পড়া অডিওটিকে ‘বোগাস’ আখ্যায়িত করে উপাচার্যের দাবি, এ ধরনের কোনো মন্তব্য তিনি করেননি। কেউ এডিট করে অডিওটি প্রচার করছে।

শাবি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে সোমবার থেকে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যেই অডিও ক্লিপটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

শাবি উপাচার্যের কথিত অডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘যারা এই ধরনের দাবি (ছাত্রী হলে রাত ১০টা পর্যন্ত ঢোকার অনুমতি) তুলেছে, যে বিশ্ববিদ্যালয় সারা রাত খোলা রাখতে হবে, এইটা একটা জঘন্য রকম দাবি। আমরা মুখ দেখাইতে পারতাম না। এখানে আমাদের ছাত্রনেতা বলছে যে, জাহাঙ্গীরনগরের মেয়েদের সহজে কেউ বউ হিসেবে চায় না।

‘কারণ সারা রাত এরা ঘোরাফেরা করে। বাট আমি চাই না যে আমাদের যারা এত ভালো ভালো স্টুডেন্ট, যারা এত সুন্দর, এত সুন্দর ডিপার্টমেন্টগুলো, বিখ্যাত সব শিক্ষক... তারা যাদের গ্র্যাজুয়েট করবে, এ রকম একটা কালিমা লেপুক তাদের মধ্যে।’

শাবি উপাচার্যের এ ধরনের মন্তব্যে তৈরি হয়েছে নতুন ক্ষোভ। এর প্রতিবাদে সরব হয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও এই বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।

যে বৈঠকে শাবি উপাচার্য এমন মন্তব্য করেন বলে দাবি করা হচ্ছে সেটি কবে হয়েছে তা নিয়ে ভিন্ন মত থাকলেও বেশির ভাগ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, সেটি ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারির।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর দাবি, ছাত্রী হলের সান্ধ্য আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এক বৈঠকে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এমন কথা বলেন।তারা জানান, বক্তব্যের সময় উপাচার্য যে ছাত্রনেতার বরাত দিয়েছেন তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তখনকার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন। তিনিও ওই বৈঠকে একই ধরনের মন্তব্য করেন।

সুলতানা ইয়াসমিন নামের এক ছাত্রী বলেন, ‘এটি উপাচার্যেরই কণ্ঠ। ছাত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে সেদিন তিনি এসব কথা বলেছিলেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক বৃহস্পতিবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার সামনেই উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও ছাত্রলীগ সভাপতি রুহুল আমিন এসব আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন।’ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ছাত্রী হলের সান্ধ্য আইন বাতিলসহ কিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে তখন আন্দোলন করছিলাম আমরা। এই আন্দোলনের নাম ছিল ‘অর্বাচীন’।‘এটা ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির দিকের ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের পর পরই। সমাবর্তন হয়েছিল ২০২০ সালের জানুয়ারিতে।”ওমর ফারুক বলেন, ‘ওই আন্দোলনের পর উপাচার্য তার কক্ষে আমাদের বৈঠকে ডেকেছিলেন। বৈঠকে ছয়জন সাধারণ শিক্ষার্থী, ছয়জন ছাত্রলীগ নেতা ও ৩২ জন শিক্ষক ছিলেন। আলোচনার সময় উপাচার্য ও ছাত্রলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের নিয়ে এসব আপত্তিকর কথা বলেন। মেয়েদের রাতে বাইরে থাকা নিয়েও অনেক আপত্তিকর কথা বলেছিলেন তারা।’

ভিসির পদত্যাগের দাবিতে শাবি শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন। ছবি: নিউজবাংলা

ওই বৈঠকের পর ২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন অনিরুদ্ধ অমিয় নামে এক শিক্ষার্থী। তিনি ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

স্ট্যাটাসে অনিরুদ্ধ লেখেন, ‘একজন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর যখন অন্য একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের নিয়ে খুবই অসংগতিপূর্ণ মন্তব্য করেন, তখন আসলে তার সঙ্গে আলোচনার জায়গাই থাকে না।

‘‘খুব স্পেসিফিক বললে ওনার বক্তব্য এ রকম ছিল- ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের কেউ বিয়ে করতে চায় না। আমি চাই না আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদেরও এই দশা হোক।’ ওনার আরেকটা বক্তব্য এমন ছিল- লাইব্রেরি খোলা রাখার মূল কারণ হচ্ছে মেয়েদের রাতের বেলা বাইরে রাখা। এমন কথা শোনার পর লিটারেলি থ হয়ে গিয়েছিলাম।”তবে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বৃহস্পতিবার বলেন, ‘এটা একদম বোগাস। আমি এ রকম কোনো কথা বলিনি। এগুলো কেউ এডিট করে প্রচার করতে পারে।’অডিও ক্লিপে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিয়ে মন্তব্যে যে ছাত্রনেতার প্রসঙ্গ এসেছে সেই রুহুল আমিনও দাবি করছেন, এ ধরনের কোনো মন্তব্য তিনি করেননি।বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিনের ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেছে। তিনি এখন ক্যাম্পাসে থাকেন না।নিউজবাংলাকে রুহুল আমিন বলেন, ‘এ রকম কথা আমি কোনো দিন বলিনি। আমি এমন লোকই না। এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। কেউ এডিট করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটা ছড়িয়েছে।’

উপাচার্য এ ধরনের মন্তব্য করেছিলেন কি না- জানতে চাইলে রুহুল বলেন, ‘আমার এ রকম কিছু মনে পড়ছে না। তবে এ সময়ে এটি ছড়িয়ে দেয়ায় মনে হচ্ছে এগুলো এডিট করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছড়ানো হচ্ছে।’যে বৈঠকে উপাচার্য এমনটি বলেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে, সেই বৈঠকে উপস্থিত শিক্ষার্থী উমর ফারুকের দাবি- বৈঠকে তখনকার ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদার ও তৎকালীন প্রক্টর অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমদও উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যাপক রাশেদ বৃহস্পতিবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো কথা সেদিন উপাচার্য বলেছেন বলে আমার জানা নেই। একটি বৈঠকে তো অনেক ধরনের কথাই হয়। সব কথা তো আর মনে রাখা সম্ভব না।’

তবে অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমদ গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ক্যাম্পাসে গত রোববার পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের ঘটনায় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।

এ বিভাগের আরো খবর