রাতের অন্ধকারে লাগা আগুন কেড়ে নিয়েছে মাথা গোঁজার ঠিকানা। পুড়ে গেছে ঘরের আসবাবসহ নানা সরঞ্জাম। সেই শোকে প্রতিবেশী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের গলা জড়িয়ে ক্ষণে ক্ষণে কেঁদে উঠছে দিনমজুর নেকো মিয়ার স্ত্রী শিরিন আক্তার। কাঁদতে কাঁদতে তিনি সংজ্ঞা হারাচ্ছেন। আবারও ডুকরে কেঁদে উঠেছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে নিউজবাংলা। একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘কনকনে শীতে তেমন মাঠে কাজ মেলেনি। বাড়িতে পালিত গাভির দুধ বিক্রি করে তার সংসার ও সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চলত। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তার ৩টি গরু ও ৩টি ছাগল পুড়ে কয়লা হয়ে যায়। সকালে একটি ক্ষেতে সেগুলো মাটিচাপা দেয়া হয়েছে।’
সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের পটুয়া পাইকপাড়া গ্রামে বুধবার রাত ১১টার দিকে আগুন লাগে। এতে পুড়ে গেছে গ্রামের অর্ধশতাধিক ঘর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ১০-১২টি বসতি।
সরেজমিনে দেখা যায়, আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এই গ্রামে এসেছেন। সঙ্গে আনা শীতবস্ত্র ও শুকনো খাবার দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে থাকার চেষ্টা করছেন তারা। সব হারানো পরিবারগুলোর কান্নায় সেখানে ভারী হয়ে আছে পরিবেশ।
স্বজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে দেখা যায় শিরিন আক্তার
পুড়ে যাওয়া ঘরের মধ্যে নিজের নতুন বই আর খেলনা খুঁজেছিল ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী লিমা আক্তার। সে বলে, ‘আমার নতুন বইগুলো পুড়ে গেছে। আমার বাবার জামানো টাকা, আমাদের কাপড়চোপড় সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’
আগুনের সূত্রপাত নিয়ে এদিন স্থানীয়দের মধ্যে ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে। কেউ বলছেন, আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। অনেকে আবার চুলা কিংবা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগার বিষয়টি সামনে এনেছেন।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ ফরহাদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগুন লাগিয়ে দেয়ার কোনো আলামত আমরা পাইনি। যখন আগুন লাগে তখন বিদ্যুৎ ছিল ওই গ্রামে। আমরা ধারণা করছি, কোনো চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত।’
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাতেই ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ ও শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। সকাল থেকে তাদের নামের তালিকা ও ক্ষতির পরিমাণ তালিকাভুক্তির কাজ চলছে। আমরা সরকারিভাবে যতটুকু পারি তাদের জন্য করব।’