দেশের কোনো এলাকায় সন্ধ্যা ৬টার পর নদী থেকে বালু উত্তোলন করা যাবে না বলে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশনা দিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।
যেখান-সেখানে বালু উত্তোলন বন্ধ, উঁচু স্থানে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ করা এবং নদীর তীরবর্তী বাঁধগুলোতে যাতে ঘরবাড়ি মতো অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠে, সে বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের শেষ দিনের দ্বিতীয় অধিবেশনে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত প্রস্তাবে এসব নির্দেশনা দেন তিনি।
অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের করা ব্রিফিংয়ে জাহিদ ফারুক বলেন, ‘বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্ষা মৌসুমে অধিক পানি প্রবাহ হয়। আবার শুষ্ক মৌসুমে পানি একদমই কমে যায়। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা রক্ষার। ‘যেকোনোভাবে নদীতে পানি সচল রাখতে হবে। নাব্যতা রক্ষা করতে হবে, যাতে নৌযান খুব সহজে চলাচল করতে পারে।’
অধিবেশনের আলোচনা প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকদের যেটা অনুরোধ করা হয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে আমরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় নদী রক্ষা করছি, তবে একই সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করছি, সারা দেশে অবৈধ বালু উত্তোলনের হিড়িক চলছে। দেশে এর মহাসমারোহ শুরু হয়েছে।
‘এটা বন্ধ করতে না পারলে আমরা যদি নদীর একটি বাঁধ লোহা দিয়েও নির্মাণ করি, সেটিও একসময় ঢলে পড়বে। তখন আমরা নদীকে রক্ষা করতে পারব না। নির্মাণাধীন বাঁধ ভেঙে পড়বে।’
বালু উত্তোলন নিয়ে জাহিদ ফারুক বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসকদের জানিয়েছি, ড্রেজিং ম্যাটেরিয়ালস একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। সেটি খুব শিগগিরই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। সেখানে বালি উত্তোলনের সময়টা সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বেঁধে দেয়া হবে।
‘বালি উত্তোলন কোনোভাবেই সন্ধ্যা ৬টার পরে করা যাবে না। এটা ছাড়া সরকারের যেসব উন্নয়নমূলক প্রকল্প রয়েছে, তা চলমান রাখার জন্য বালির প্রয়োজন হবে, কিন্তু তার জন্য যত্রতত্র বালি উত্তোলন করলে চলবে না। তা উত্তোলন করতে হবে নির্দিষ্ট বালুমহাল থেকে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রকৌশলীদের নিয়ে বালুমহাল চিহ্নিত করুন।’
বাঁধে স্থাপনা নির্মাণ নিয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বাঁধের ওপর কোনোভাবেই অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। সাধারণভাবে আপনারা দেখেছেন নদীর ওপর যে বাঁধ থাকে, সেখানে কিছু ঘরবাড়ি গড়ে ওঠে। বাঁধের ওপর এভাবে ঘরবাড়ি করলে এবং রান্নাবান্না করলে সেখানে ইঁদুরের বাসা হয়। এতে বাঁধের মাটির তল দুর্বল হয়ে পড়ে, কিন্তু ওপর থেকে জানাই যাবে না যে, বাঁধটি দুর্বল হয়ে পড়েছে।
‘ফলে বন্যার সময় যখন পানির প্রবল স্রোতের ধাক্কা লাগে, তখন এই বাঁধগুলো ভেঙে যায়। তখন কিন্তু অনেকেই বলে এই বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ড তৈরি করেছে এবং এর নির্মাণকাজ ভালো হয়নি।’
আশ্রয়ণ প্রকল্পের স্থান নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। আপনারা দেখবেন আশ্রয়ণ প্রকল্প কিন্তু সাধারণভাবে নদীর কিনারাতে করা হয়। ফলে যখনই বন্যা হয়, তখনই কিন্তু পানি এসে আশ্রয়ণ প্রকল্প ডুবে যায়। এতে সরকারকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।
‘আমরা জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়েছি, আপনারা যখন এই আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা করবেন, প্রকল্পস্থান নির্ধারণের ক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে নেবেন, অথবা স্থান নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটু উঁচু জায়গা বেছে নেবেন। তাহলে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পটি পানিতে ডুবে যায় না। সে ক্ষেত্রেও নিচু স্থান হলে বালি ফেলে তা উঁচু করে নেয়া যায়। তাহলে আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলো টেকসই হবে।’
উপকূলীয় অঞ্চলে বাঁধ রক্ষার বিষয়ে ডিসি সম্মেলনের অধিবেশনে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।
তিনি বলেন, ‘উপকূলীয় অঞ্চলের বাঁধ রক্ষার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। উপকূলীয় বাঁধগুলো ভেঙে যাচ্ছে। এগুলো ষাটের দশকের প্রকল্প। এখনই প্রকল্পগুলোর পরিবর্তন করা হচ্ছে। এখানে বিশ্বব্যাংকের তত্ত্বাবধানে কাজ হচ্ছে। এখানে ১৩৯টা ফোল্ডার আছে। ১০টি ফোল্ডারের কাজ সমাপ্তির পথে। আরও ২০টি ফোল্ডারের কাজ প্রক্রিয়াধীন।
‘এ ছাড়া স্থানীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে আরও সাতটি প্রকল্প চলমান। উপকূলীয় প্রকল্পের এসব কাজগুলো সম্পন্ন হয়ে গেলে আগামী সাত থেকে আট বছর পরে উপকূলীয় অঞ্চল একটি সহনীয় পর্যায়ে আসবে। তখন উপকূলবাসীকে জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে আমরা রক্ষা করতে পারব।’