বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জ্বালানি তেলের দাম ছুটছে ১০০ ডলারের দিকে

  •    
  • ২০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:১৮

যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বিনিয়োগ কোম্পানি ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাক্স পূর্বাভাস দিয়েছে, তেলের দাম ১০০ ডলারের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এই বছরের মাঝামাঝিতেই ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে। অন্যদিকে জেপি মরগান বলছে, এই বছর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১২৫ ডলারে গিয়ে পৌঁছেতে পারে। ২০২৩ সালে ১৫০ ডলারে গিয়ে ঠেকতে পারে।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম চড়ছেই। বুধবার ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৮৯ ডলার। একই সঙ্গে ইউ এস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ফিউচারের দাম প্রায় ২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৭ ডলার ৩১ সেন্টে। এই দর ২০১৪ সালের অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বিনিয়োগ কোম্পানি ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাক্স পূর্বাভাস দিয়েছে, তেলের দাম ১০০ ডলারের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এই বছরের মাঝামাঝি সময়েই ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

অন্যদিকে আমেরিকাভিত্তিক বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক এবং আর্থিক সেবা হোল্ডিং সংস্থা- জেপি মরগান বলছে, এই বছর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১২৫ ডলারে গিয়ে পৌঁছেতে পারে। ২০২৩ সালে ১৫০ ডলারে গিয়ে ঠেকতে পারে।

অবশ্য গত বছরের অক্টোবরে তেলের বাজারের উত্থানের সময় গোল্ডম্যান স্যাক্স বলেছিল, প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ১০০ ডলারে গিয়ে পৌঁছবে। কিন্তু ৮৫ ডলারে উঠে তা নিম্নমুখী হয়েছিল। সে সময় সংস্থাটি তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছিল, কোভিড-১৯ এর কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় যে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছিল তা দূর হচ্ছে। পাশাপাশি দেশে দেশে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া গতি পেয়েছে। ফলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ছে।

বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এই দর গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যেভাবে ১০০ ডলারের দিকে যাচ্ছে, তাতে চড়তে থাকা মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দেবে; যেটি বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে। ২০২২ সালে এই তেলের দাম ইতোমধ্যে ১৪ শতাংশ বেড়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে আবার শুরু হয়েছে উত্তেজনা। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে গত সোমবার যে হামলা চালিয়েছে, তাতে তিনজন মারা গেছেন। আরব আমিরাত আবার এই হত্যাকাণ্ডের বদলা নেওয়ার হুংকার জানিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের নতুন এই উত্তেজনায় আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ছে।

কয়েক সপ্তাহ ধরেই জ্বালানি বিশ্লেষকেরা শঙ্কা করছিলেন, তেলের দাম আবারও বাড়বে। মূলত ইউক্রেনে রাশিয়া আক্রমণ করতে পারে, এই আশঙ্কায় তারা এমনটা বলেছিলেন। তবে আরব আমিরাতে এই হামলার ঘটনায় সৌদি আরব বলেছে, তেলের বাজার স্থিতিশীল রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা তারা চালিয়ে যাবে।

এদিকে হামলার পর সংযুক্ত আরব আমিরাতের তেল কোম্পানি অ্যাডনক বলেছে, এখনো তারা সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

জ্বালানি বিশ্লেষকেরা অবশ্য বলছেন, ইউরোপ ও আমেরিকায় এবার তীব্র শীত পড়ায় ঘর গরম রাখতে জ্বালানির চাহিদা অনেকটাই বেড়েছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণেও জ্বালানির দাম বাড়ছে।

মহামারির শুরুতে জ্বালানির চাহিদা কমে যাওয়ায় দাম শূন্যেরও নিচে চলে গিয়েছিল। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তেলের দাম এখন সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেছে। কয়েক মাস আগেই ধারণা করা হচ্ছিল, তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়।

এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র বাজারে তেল ছেড়ে সরবরাহ বৃদ্ধির চেষ্টা করে। চীন ও ভারতও একই পথে হাঁটে। এতে তেলের মূল্যবৃদ্ধির ধারায় ছেদ পড়ে। এ ছাড়া ওপেকও দিনে অতিরিক্ত চার লাখ ব্যারেল তেল বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দেয়।

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন আতঙ্কে গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট তেলের দাম কমতে কমতে ৬৬ ডলারে নেমে গিয়েছিল। ব্রেন্ট তেলের দর কমে হয়েছিল ৬৮ ডলার।

তিন-চার দিন ওই একই জায়গায় স্থির ছিল তেলের বাজার। কিন্তু ওমিক্রন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়লেও করোনার নতুন ওই ধরনে আক্রান্ত হয়ে মানুষ খুব একটা মারা না যাওয়ায় এই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক বেশ খানিকটা কেটে যায়। এতে বিশ্বে তেলের চাহিদা বাড়বে-এ সম্ভাবনাকে সামনে রেখে আবার বাড়তে শুরু করে দাম। সেই ঊর্ধ্বগতি এখনও অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে দর।

২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। গত বছরের জানুয়ারি মাসে জ্বালানি তেলের দাম ছিল গড়ে প্রতি ব্যারেল ৪৯ ডলার। এরপর থেকে গড়ে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ফেব্রুয়ারি মাসে ৫৩ ডলার, মার্চে ৬০, এপ্রিলে ৬৫, মে মাসে ৬৪, জুনে ৬৬, জুলাইয়ে ৭৩ এবং আগস্টে ৭৪ ডলার। অক্টোবর মাসে এই দাম ৮৫ ডলার ছাড়িয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছিল, শিগগিরই তা ১০০ ডলার হয়ে যেতে পারে।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে গত ৪ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ সরকারও ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে এক লাফে ১৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ৮০ টাকা নির্ধারণ করে।

বাংলাদেশ যখন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে যে দর ছিল, এখন সেই দরকেও ছাড়িয়ে গেল।

এ বিভাগের আরো খবর