বিশ্বের অন্তত ৪০ দেশের নাগরিকের ক্রেডিট কার্ড ক্লোন করে টাকা হাতিয়ে নেন তুরস্কের নাগরিক হাকান জারবানকান। স্কেমিংয়ের মাধ্যমে এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলায় সিদ্ধহস্ত তিনি।
পুলিশ দাবি করেছে, বাংলাদেশে ঢুকে স্কেমিংয়ের মাধ্যমে বুথ থেকে টাকা তুলতে গিয়ে ধরা পড়েছেন হাকান। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হাকান স্বীকার করেন কার্ড জালিয়াতিসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার তথ্য।
হাকানের সহযোগী হিসেবে যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনি বাংলাদেশি নাগরিক মো. মফিউল ইসলাম। তাদের কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, পাঁচটি মোবাইল ফোন, দুটি ক্রেডিট কার্ড ও ১৫টি ক্লোন কার্ড জব্দ করা হয়।
ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বিদেশি এ নাগরিকের অপরাধ তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি জানান, তুরস্কের নাগরিক হাকান জারবানকান গত ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা আসেন। রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে তিনি অবস্থান করেন। ২ থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে তিনি ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের বিভিন্ন বুথে কার্ড ক্লোনিং স্কেমিংয়ের মাধ্যমে শতাধিকবার টাকা তোলার চেষ্টা করেন। এন্টি ফেমিং প্রযুক্তি ব্যবহার করায় অ্যালার্ম সিস্টেমের মাধ্যমে তা জেনে যায় ইস্টার্ন ব্যাংক।
তুর্কি হাকানকে কার্ড ‘জাতিয়াতির মাস্টার’ অভিহিত করে পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বেশ কয়েকবার ঢাকা এসেছেন হাকান। তিনি ব্যবহার করেন একাধিক পাসপোর্ট। ঢাকায় তার সহযোগী মফিউল ইসলাম। কার্ড জালিয়াতির অভিযোগে মফিউলের ভাই গ্রেপ্তারের পর এখন ভারতের কারাগারে আছেন।
হাকান জারবানকান সম্প্রতি ইস্টার্ন ব্যাংকের বিভিন্ন বুথে শতাধিকবার ক্লোন কার্ড ব্যবহার করে টাকা তুলতে ব্যর্থ হন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি টের পেয়ে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে জানায়। তারই সূত্রে মঙ্গলবার রাতে গুলশান-১ এলাকা থেকে সহযোগীসহ হাকানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পল্টন থানায় মামলার পর তাদের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পাঁচ দিনের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হাকান জানান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানী, কানাডা ও স্পেনসহ প্রায় ৪০টি দেশের নাগরিকের ক্রেডিট কার্ড ক্লোন করে স্কেমিংয়ের মাধ্যমে টাকা তুলেছেন। ঢাকায় একটি ব্যাংকের বিভিন্ন বুথ থেকে তিন দিনে ৮৪ বার টাকা তোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরই এক পর্যায়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এটিএম জালিয়াতির এক মামলায় হাকানকে ২০১৯ সালে ভারতের আসাম রাজ্যের পাল্টন বাজারে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তখন তার সঙ্গে ধরা পড়েন দুজন বাংলাদেশি নাগরিক। তারা কার্ড ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে ১০ লাখ রুপি তোলার পর ধরা পড়েন। ২০ মাস জেলে থাকার পর নিজেকে অসুস্থ দাবি করলে হাকানকে আগরতলার গোবিন্দ বল্লভ প্যান্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন হাসপাতাল থেকে কৌশলে পালিয়ে যান এ তুর্কি নাগরিক।
ভারতীয় এক ব্যক্তির সহায়তায় দুই লাখ রুপি খরচ করে হাকান পালিয়ে সিকিম হয়ে নেপালে চলে যান। নতুন করে ট্রাভেল ডকুমেন্ট তৈরি করে দেশে ফিরে যান। নতুন পাসপোর্ট তৈরি করে ফের কার্ড জালিয়াতির জন্য তিনি ঘুরতে থাকেন একাধিক দেশে। এটিএম কার্ড জালিয়াতির আন্তর্জাতিক এ চক্রের সদস্য রয়েছে বিভিন্ন দেশে। তাদের পরিচয়সহ কিছু তথ্য দিয়েছেন হাকান।