শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলায় মর্মাহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। এ ঘটনায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তবে পুলিশের ওই অ্যাকশনের সঙ্গে তার ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানিয়েছেন উপাচার্য।
নিজ বাসভবনে বুধবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘যে ঘটনা ঘটেছে, পুলিশ হামলা করেছে, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট মেরেছে, এই ঘটনায় আমি মর্মাহত। এজন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। কোন পরিস্থিতিতে পুলিশ অ্যাটাক করল, তদন্ত কমিটি তা খতিয়ে দেখবে।’
‘এ ঘটনায় আমরা একটা তদন্ত কমিটি করেছি। তারা যদি উপাচার্যের কোনো দোষ খুঁজে পায়, সরকারও তদন্ত কমিটি করতে পারে। এতেও যদি কোনো দোষ মিলে তখন তারা যে সিদ্ধান্ত দেবে না মেনে নেব। এখানে রাখঢাকের কিছু নেই।’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘প্রতিদিন শিক্ষক প্রতিনিধিরা গালিগালাজ সহ্য করে আলোচনা করার প্রস্তাব করছেন, কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করছে। এ ছাড়া সমস্যা সমাধানের চূড়ান্ত সময়ে এসে কারা সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি করে পুলিশকে চড়াও হতে বাধ্য করেছিল, তা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।’
তিনি জানান, সরকার তদন্ত কমিটি করে কোনো সুপারিশ করলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন।
শিক্ষার্থীদের প্রতি ভালোবাসার কথা উল্লেখ করে উপাচার্য জানান, সব দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। বিভ্রান্ত না হয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার সহায়তার আহ্বানও জানান তিনি।
উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে রোববার রাত থেকে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের একাংশ বুধবার দুপুর থেকে আমরণ অনশনে বসেছেন।
শিক্ষকরা রাতে অনশনরত শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিলেও তারা তা প্রত্যাখান করেন।
অনশনে অংশ নেয়া জাহিদুল ইসলাম দুপুরে বলেন, ‘উপাচার্য রীতিমতো আমাদের সঙ্গে হাসি-তামাশা করছেন। আমাদের প্রতি তার কোনো সংবেদনশীলতা নেই। আমরা ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলাম। তিনি তাতে গুরুত্ব না দিয়ে বরং মিডিয়ায় আমাদের নামে মিথ্যাচার করছেন।
‘ফলে তিনি উপাচার্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। এখন আমরা তার পদত্যাগ চাই। উপচার্য পদত্যাগ করার আগ পর্যন্ত আমাদের অনশন চলবে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমরা অনশনে থাকব।’
যেভাবে আন্দোলন শুরু
এক হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের আন্দোলন গত রোববার থেকে রূপ নিয়েছে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে। ওই প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের পর শিক্ষার্থীদের এখন একটাই দাবি, উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন লিজার বিরুদ্ধে খাবারের খারাপ মান, অব্যবস্থাপনা ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আনেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। তারা প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে গত বৃহস্পতিবার রাত (১৩ জানুয়ারি) থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে সরে গেলেও দাবি পূরণ না হওয়ায় শনিবার সন্ধ্যায় ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়ক আটকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন।
এরপর মধ্যরাতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন তারা। রোববার সকাল থেকে আবারও ক্যাম্পাসে শুরু হয় বিক্ষোভ।
বিকেলে তারা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনকে অবরুদ্ধ করলে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে। শিক্ষার্থীরাও ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। এরপর শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এ সময় পুলিশ রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে।
এর মধ্যেই পুলিশ উপাচার্যকে বের করে তার বাসভবনে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ গুলিবিদ্ধ হন। আহত হন পুলিশ, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৫০ জন।
সে রাতেই জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীদের পরদিন দুপুর ১২টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।
ওই সভা শেষে জানানো হয়, প্রাধ্যক্ষ জাফরিনের পদত্যাগ করেছেন।
এরপর পুলিশ ডেকে হামলা চালানোর অভিযোগ তুলে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে সেই রাত থেকে ফের বিক্ষোভে নামেন শিক্ষার্থীরা। তারা হল ছেড়ে যাবেন না বলেও জানান।
মঙ্গলবার রাতে তারা ঘোষণা দেন, বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে দাবি না মানা হলে আমরণ অনশনে বসবেন।
বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হওয়ায় ২৪ শিক্ষার্থী বুধবার বেলা ৩টা থেকে অনশন শুরু করেন। তাদের এই কর্মসূচিতে সমর্থন দেন আন্দোলনে থাকা অন্য শিক্ষার্থীরাও।