বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘শাটডাউন’ পরিস্থিতি, তবু লকডাউন নয়

  •    
  • ১৯ জানুয়ারি, ২০২২ ২১:২৯

আইইডিসিআর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে, আমরা বিষয়টি নজরে রাখছি। এখন পর্যন্ত লকডাউনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শুধু করোনা শনাক্ত হার বা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় না। জীবিকা ও অর্থনীতির বিষয়টিও আমাদের মাথায় রাখতে হয়।’

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ক্রমাগত বাড়ছে। বুধবার সকাল পর্যন্ত পূববর্তী ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হার ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। সংক্রমণের এই হার গত ৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এমন মাত্রায় সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর গত বছরের জুলাইয়ে দেশে শাটডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার লকডাউনের কথাও এখনই ভাবছে না।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, এখনই যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। তারা বলছেন, সংক্রমণের এই হার দুই সপ্তাহ অব্যাবহ থাকলে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। ভেঙে পড়তে পারে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা।

সরকারও পরিস্থিতির ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধি-নিষেধ কার্যকরে ক্রমশ কঠোরতা আরোপ করা হচ্ছে। তবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এখনই লকাডাউনের মতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না সরকার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে করোনা সংক্রমণের মাত্রা বিবেচনায় উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে ১২টি জেলা। সপ্তাহখানেক আগেও রেড জোনে ছিল দুটি জেলা-রাঙ্গামাটি ও ঢাকা। কয়েকদিনের মধ্যে নতুন করে ১০টি জেলা উচ্চ ঝুঁকিতে প্রবেশ করেছে।

গত ৯ দিনে সংক্রমণের হার ২০ শতাংশ বেড়েছে। ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে ১১ দফা সুপারিশ ও নির্দেশনা না মানা এবং সব ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করার পরও সংক্রমণ পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে ৯ হাজার মানুষের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিচেনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ১১ শতাংশ। এ সময়ে করোনা সংক্রমণে মারা গেছেন ১২জন।

দেশে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৬ লাখ ৪২ হাজার ২৫৪ জনের দেহে। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ১৭৬ জনের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সাত দিনে দেশজুড়ে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৩৪ হাজার ৪০৫ জন। এটা পূর্ববর্তী সাত দিনের (৩-৯ জানুয়ারি) চেয়ে ২৩ হাজার ৯৩১ জন বেশি। এই সময়ে শনাক্ত বেড়েছে ২২৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত এক সপ্তাহে মৃত্যু হয়েছে ৫৭ জনের, যা পূর্ববর্তী সপ্তাহের চেয়ে ৩৭ জন বেশি।

ঢাকাকে সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অধিদপ্তরের হিসাবে, গত কয়েক দিন ধরে সারাদেশে মোট করোনা আক্রান্তের ৮০ শতাংশের কাছাকাছি রোগী পাওয়া গেছে ঢাকায়।

দেশে করোনা সংক্রমণ গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ শতাংশের নিচে ছিল। ১১ জানুয়ারি শনাক্ত হার ৫ ছাড়িয়ে যায়। গত ৯ দিনে শনাক্ত ২০ শতাংশ বেড়ে বুধবার তা ২৫ দশমিক ১১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

এমন পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল গত বছরের আগস্টে। সংক্রমণ ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তখন শাটডাউনের সুপারিশ করে করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি।

এবার সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকলেও এখনই শাটডাউনের চিন্তা করছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। কেননা সংক্রমণের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যাটা অনেক কম। সে সময় দিনে করোনায় শতাধিক মানুষের মৃত্যুর সংবাদ এলেও এবার সংখ্যাটা ১০ থেকে ১২ জনে সীমাবদ্ধ রয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লকডাউনের পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে, আমরা বিষয়টি নজরে রাখছি। এখন পর্যন্ত লকডাউনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।

‘সব পরিস্থিতি বিবেচনা করে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শুধু করোনা শনাক্তের হার বা সংক্রমণ ও মৃত্যুর বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় না। জীবিকা ও অর্থনীতির বিষয়টিও আমাদের মাথায় রাখতে হয়।’

আগামীতে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে লকডাউন দেয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি না করার অনুরোধ জানান তিনি।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘দিন দিন সংক্রমণ বাড়ছেই। তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখনই দিনে ৩০ থেকে ৫০ হাজার শনাক্ত ধরা পড়তে পারে, যদি যথেষ্ট পরিমাণে টেস্ট করা হয়।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘দেশে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন ধরা পড়ার পর ধারণা করো হয়েছিল তা প্রতিরোধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। তা হয়নি। দ্রুততার সঙ্গে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। করণীয় নির্ধারণে সময়ক্ষেপণ করা হয়েছে। অন্য দেশে যখন ওমিক্রমের সংক্রমণ ক্রমে বাড়ছে তখনও দেশে নানা ধরনের মেলা ও নির্বাচন চলতে দেখেছি। এই সময়ের মধ্যে দেশে ওমিক্রন ও ডেল্টা বেড়েছে। ফলে দেশে সংক্রমণ ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

করোনার সার্বিক পরিস্থিতি সব অর্থেই ভয় জাগাচ্ছে। এ ছাড়া ওমিক্রনের বিস্তার রোধে সরকার যে ১১ দফা বিধিনিষেধ দিয়েছে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে কিছুদিনের মধ্যে হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়বে। চিকিৎসকের ওপরও বাড়তি চাপ পড়বে। চাপ বাড়বে। এমনকি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। তাই টিকার পরিসর বাড়াতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, ‘জনগণ সচেতন না হলে, তারা স্বাস্থ্যবিধি না মানলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। তবে কয়েক দিনের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নে কঠোর হবে সরকার।’

এ বিভাগের আরো খবর