চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
জরুরি এক বৈঠক শেষে বেলা ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. শহীদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘ঘটনার কারণ ও জড়িতদের চিহ্নিত করতে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কমিটিতে সহকারী প্রক্টর ড. রামেন্দু পাড়িয়ালকে আহ্বায়ক, আরেক সহকারী প্রক্টর এসএএম জিয়াউল ইসলামকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী হলের আবাসিক শিক্ষক ড. মোরশেদুল আলম ও শাহ আমানত হলের আবাসিক শিক্ষক হাসান মোহাম্মদ রোমান শুভ রয়েছেন সদস্য হিসেবে।
ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. শহীদুল ইসলাম জানান, বৈঠকে আরও কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সিদ্ধান্তগুলো হল বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব পয়েন্টে সংঘর্ষের ঘটনা বেশি ঘটে, সেসব পয়েন্টে আগামী ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত অতিরিক্ত ৬০ জন দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হবে। একই তারিখ পর্যন্ত ছাত্রদের হলগুলোতে প্রভোস্ট ও হাউজ টিউটরদের সার্বক্ষণিক অবস্থান নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া পয়েন্টগুলোতে আলো বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পূর্বশত্রুতার জেরে মঙ্গবার মধ্যরাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হন। এর মধ্যে তিনজনকে গুরুতর অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।
সংঘর্ষে জড়ানো পক্ষ দুটি শাখা ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক গ্রুপ ‘বিজয়’ ও ‘সিএফসি’। উভয় পক্ষই শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
সংঘর্ষের সূত্রপাত যেভাবে
গত ১৩ জানুয়ারি চবি ছাত্রলীগের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু এবং উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক শেখ নাজমুল। সে সময় প্রধান ফটক অবরোধ করে পূর্ণাঙ্গ কমিটির জন্য বিক্ষোভ করেন শাখা ছাত্রলীগের পাঁচটি গ্রুপ। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে আগামী ২৫ জানুয়ারির মধ্যে শাখা ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার ঘোষণা দেন চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু। তখন থেকে গ্রুপগুলোর মধ্যে ক্যাম্পাসজুড়ে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করে।
১৭ জানুয়ারি মধ্যরাতে গ্রুপ বিজয়ের এক নেতার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ঢিল ছোঁড়ার অভিযোগ ওঠে সিএফসির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। সোহরাওয়ার্দী হলের মোড়ে এ অনুষ্ঠান চলছিল। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সারাদিন ক্যাম্পাসে দুই পক্ষের মধ্যে দিনভর উত্তেজনা বিরাজ করে।
পরবর্তীতে মধ্যরাতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষ। এ সময় উভয়পক্ষই ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। রাত প্রায় ১টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। পরে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিজয় গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইলিয়াস। আর সিএফসি গ্রুপের নেতৃত্বে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইলিয়াস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২৫ তারিখের মধ্যে কমিটি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বর্তমান সভাপতি। সেটি বানচাল করার জন্য তিনি এখন উস্কানি দিচ্ছেন। গতকাল সিএফসি গ্রুপের কর্মীরা শাহ আমানত থেকে সোহরাওয়ার্দীর দিকে এগিয়ে এসে আমাদের আক্রমণ করার জন্য। পরে আমরা প্রতিরোধ করি।’
সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘চবি ছাত্রলীগের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মোহাম্মদ ইলিয়াস (বিজয় পক্ষের নেতা) দীর্ঘদিন ধরে অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। আর সেই সূত্র ধরে তারা সংঘর্ষে জড়িয়েছে।’