ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী লঞ্চে আগুনের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন মারা যাওয়া স্কুলশিক্ষক মনিকা রানী হালদারের শেষকৃত্য হয়েছে।
এর আগে বুধবার বেলা দেড়টার দিকে মনিকা রানীর মরদেহ বরগুনায় এসে পৌঁছায়। প্রথমেই তার মরদেহ নেয়া হয় জেলা পৌর শহরের গগন মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে।
ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক ছিলেন মনিকা রানী। প্রিয় শিক্ষকের মৃত্যুতে এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সেখানে গীতা পাঠ এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন শেষে গ্রামের বাড়ি ফুলঝুরিতে তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়।
ঝালকাঠির পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় সুগন্ধা নদীতে ২৩ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চ আগুনে পুড়ে যায়। মনিকা রানীসহ সেদিন লঞ্চে থাকা তার স্বামী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বাবু বঙ্কিম চন্দ্র মজুমদারও দগ্ধ হন।
মনিকার ছেলে বিকাশ জানান, অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর প্রথমে তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেয়া হয়। সেখানে ২৫ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। আগুনে দগ্ধ তার স্বামী বাবু বঙ্কিম সেখানে চিকিৎসাধীন।
নিউজবাংলাকে গগন মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মেডিক্যাল চেকআপের জন্য আমার সহকারী শিক্ষক মনিকা রানী গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর ছুটি নিয়ে ঢাকায় যান। সেখানে চিকিৎসা শেষে তারা স্বামী-স্ত্রী অভিযান-১০ লঞ্চে করে ফিরছিলেন।
‘২৪ ডিসেম্বর তার স্কুলে ক্লাস নেয়ার কথা ছিল। বিদ্যালয়ে তিনি ঠিকই ফিরলেন, তবে লাশ হয়ে।’
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটউটের আবাসিক সার্জন ডা. এস এম আইউব হোসেন বলেন, ‘মনিকা রানীর শরীরের ৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। প্রথম থেকে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। অবস্থার অবনতি হলে পরে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়েছে।’
বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৪৮ জনের মরদেহ এসেছে বরগুনায়। এর মধ্যে ২৪ জনের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় তাদের গণকবরে দাফন করা হয়েছে। বাকিদের মরদেহ শনাক্ত করে তাদের স্বজনরা নিয়ে গেছেন। এখন পর্যন্ত নিহতদের পরিবারকে দাফন-কাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা করা হয়েছে।’
আগুনের ঘটনায় বরগুনা, ঝালকাঠি ও ঢাকায় তিনটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় লঞ্চের মালিকসহ পাঁচজন কারাগারে রয়েছেন।