নতুন বছরে পুঁজিবাজারে চাঙাভাব অব্যাহত আছে। চলতি সপ্তাহে টানা চার দিন আর বছরের ১৪ কর্মদিবসের ১২ দিনই বাড়ল সূচক। ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে লেনদেনও। একেক দিন একেক খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রবণতার মধ্যে এবার আগ্রহ দেখা গেল বস্ত্র খাতে।
বুধবার ৩৩ পয়েন্ট বেড়ে সূচকের যে অবস্থান, সেটি গত ১৮ নভেম্বর অর্থাৎ দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। সেদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সার্বিক সূচক ছিল ৭ হাজার ৯১। ঠিক দুই মাস এক দিন পর সূচক দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮৯ পয়েন্টে।
এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত সূচক বাড়ল ৩৩২ পয়েন্ট। গত বছরের শেষ কর্মদিবসে লেনদেন ছিল ৯২১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সেখান থেকে বেড়ে বুধবার দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৩৫ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
২০২১ সালের শেষ দিকে পুঁজিবাজারে লেনদেনের খরা দেখা গেলেও চলতি বছরের দ্বিতীয় কর্মদিবসে লেনদেন এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে দেয়ার পর তা এখন দুই হাজার কোটি টাকার দিকে ছুটছে। মাঝে একদিন দুই হাজার কোটি টাকার আশেপাশে লেনদেন হয়েওছিল। তবে পরে সেখান থেকে কমে।
চলতি বছর একেকদিন বিমা খাত, পরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, প্রকৌশল, খাদ্য, ওষুধ ও রসায়নে আগ্রহ দেখা গেছে। প্রতি দিনই বিবিধ খাত হয় লেনদেনের শীর্ষে বা দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল।
৩৩ পয়েন্ট উত্থানে সূচকের অবস্থান দাঁড়িয়েছে দুই মাসের সর্বোচ্চ
গত কয়েক দিন ধরে বস্ত্র খাতে আগ্রহ ধীরে ধীরে বাড়ছিল। আজ তা বেড়ে হলো দুইশ কোটি টাকার পাশেপাশে। লেনদেনের পাশাপাশি বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির লেনদেনও।
লেনদেনে বস্ত্র খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহে ৬৮ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। কমেছে ২২ শতাংশ কোম্পানির।
সবচেয়ে বেশি কোম্পানির দর অবশ্য বেড়েছে প্রকৌশল এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতে। এর মধ্যে প্রকৌশলে ৮৪ শতাংশ এবং ওষুধ খাতের ৮১ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারে অর্থ যোগ হয়েছে।
লেনদেন শেষে ডিএসইতে মোট ১ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৭১২ কোটি টাকা।
দিনের সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া খাত অবশ্য ছিল বিবিধ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ওষুধ ও রসায়নের সঙ্গে বস্ত্রের অবস্থান ছিল কাছাকাছি।
বিবিধ খাতে লেনদেন হয়েছে সবচেয়ে বেশি ২৭৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ওষুধ ও রসায়নে হাতবদল হয়েছে ১৯৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। তৃতীয় অবস্থানে থাকা বস্ত্রে হাতবদল হয়েছে ১৯৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
চামড়া, প্রকৌশল, বিমা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতেও লেনদেন ছাড়িয়েছে একশ কোটি টাকার বেশি।
সূচক বাড়ালো যেসব কোম্পানি
সূচক বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকায় ছিল বেক্সিমকো গ্রুপ। গত দুই থেকে তিন মাস ধরে এই গ্রুপের কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর ক্রমেই কমছিল। এর মধ্যে এক দিনে বাড়ল চারটি কোম্পানির দর। তবে কোম্পানিটির ইসলামি সুকুক বন্ড অভিহিত মূল্যের আরও একটু নিচে নেমে গেছে।
সূচক বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকায় ছিল বেক্সিমকো গ্রুপ
সূচক যত পয়েন্ট বেড়েছে, তার অর্ধেকের বেশি বাড়িয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেড একাই। টানা দরপতনের মধ্যে থাকা এই কোম্পানিটির শেয়ারদর এক দিনেই বেড়েছে ৫.২৭ পয়েন্ট। এতে সূচক যোগ হয়েছে ১৮.৯ পয়েন্ট।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা এসিআই লিমিটেডের শেয়ারদর ৭.৫৭ শতাংশ বাড়ার কারণে সূচকে যোগ হয়েছে ৪.৫৯ পয়েন্ট।
বেক্সিমকো গ্রুপেরই আরেক কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মার দর ১.৭৬ শতাংশ বাড়ার কারণে সূচকে যোগ হয়েছে ৪.৩ পয়েন্ট।
তিতাস গ্যাস, ব্র্যাক ব্যাংক, গ্রামীণ ফোন, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ইউনিলিভার, স্কয়ার ফার্মা ও লিনডে বিডিও সূচকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পয়েন্ট যোগ করেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানিই সূচকে যোগ করেছে ৪৬ পয়েন্ট।
বিপরীতে সবচেয়ে বেশি ৭.৪৩ পয়েন্ট সূচক কমিয়েছে রবি। কোম্পানিটির শেয়ারদর কমেছে ১.২৬ পয়েন্ট।
ইউনাইটেড পাওয়ার, লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট, ওয়ালটন, বিএসআরএম স্টিল, ট্রাস্ট ব্যাংক, অলিম্পিক একসেসোরিজ, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট, জিপিএইচ ইস্পাত ও ডাচ বাংলা ব্যাংকও সূচক কিছুটা কমিয়েছে।
সূচক নিচে টেনে নামিয়েছে এই ১০টি কোম্পানি
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পনি সূচক কমিয়েছে ২২.০১ পয়েন্ট।
দর বৃদ্ধির ১০ কোম্পানি
সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ১০টি কোম্পানির ৫টিই বস্ত্র খাতের।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শেয়ার দর বেড়েছে গ্লোবাল হ্যাভি কেমিক্যারের ৯.৮৮ শতাংশ। আগের দিন শেয়ারদর ছিল ৩৩ টাকা ৪০ পয়সা, সেটি বেড়ে হয়েছে ৩৬ টাকা ৭০ পয়সা।
আরও দুটি কোম্পানির শেয়ার দর নয় শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর একটি নতুন তালিকাভুক্ত ইউনিয়ন ইন্স্যরেন্স, যার দর বেড়েছে ৯.৭৭ শতাংশ। অপরটি সেন্ট্রাল ফার্মা, যার দর বেড়েছে ৯.৩৫ শতাংশ।
চতুর্থ অবস্থানে থাকা দেশ গার্মেন্টসের দর ১৮৮ টাকা ১০ পয়সা থেকে ৮.৭১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২০৪ টাকা ৫০ পয়সা।
সাত শতাংশের বেশি শেয়ার দর বেড়েছে পাঁচটি কোম্পানির। এর মধ্যে বস্ত্র খাতের শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের দর ৭.৭৯ শতাংশ, সোনারগাঁও টেক্সটাইলের দর ৭.৩৫ শতাংশ, মুন্নু ফেব্রিক্সের দর ৭.৫৬ শতাংশ ও তাল্লু স্পিনিংয়ের দর ৭.৫১ শতাংশ দর বেড়েছে। এছাড়া ওষুধ ও রসায়ন খাতের এসিআইয়ের দর ৭.৫৭ শতাংশ।
পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে এই খাতগুলো
দর পতনের ১০ কোম্পানি
দর পতনের শীর্ষে ছিল রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, যার দর কমেছে ৫.১৯ শতাংশ। চার শতাংশের বেশি দর কমেছে তিনটি কোম্পানির। এর মধ্যে শমরিতা হসপিটালের ৪.৬১ শতাংশ, প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৪.৩৭ শতাংশ ও পদ্মা লাইফের দর ৪.২৩ শতাংশ কমেছে।
এছাড়া আইসিবি এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর ৩.৭৫ শতাংশ, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের দর ৩.৬৪ শতাংশ, আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর ৩.২৯ শতাংশ, জিলবাংলা সুগার মিলের ৩.১১ শতাংশ শেয়ার দর কমেছে।
নবম অবস্থানে থাকা এম আই সিমেন্ট ২.৯১ শতাংশ আর দশম অবস্থানে থাকা ফাস ফাইনান্স দর হারিয়েছে ২.৮৫ শতাংশ।
লেনদেনে সেরা ১০
সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেডের ১৭৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ১ কোটি ১৮ লাখ ৫৬ হাজার ৩৬টি।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ফরচুন সুজের লেনদেন হয়েছে ১৭১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ ১৮ হাজার ২৯৬টি।
বেশিরভাগ খাতেই লেনদেন বেড়েছে বুধবার
তৃতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনে লেনদেন হয়েছে ৮৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৬৩ লাখ ১৭ হাজার ৪৪০টি।
সাইফ পাওয়ারটেকে ৬৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, এসিআইয়ে ৪১ কোটি ৪১ লাখ টাকা, জিপিএইচ ইস্পাতে ৩৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, ওরিয়ন ফার্মায় ৩২ কোটি ২৯ লাখ টাকা, ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সে ৩০ কোটি ৮ লাখ টাকা, প্যারামাউন্ড টেক্সটাইলে ২৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা এবং পাওয়ারগ্রিডের ২৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে।