বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আইনের মারপ্যাঁচে চরের জমির মালিকানা

  •    
  • ১৯ জানুয়ারি, ২০২২ ১৫:২২

নদীভাঙনে সর্বস্বান্ত হয় মানুষ। তবে একবার ভেঙে গিয়ে নদীর গতি পরিবর্তন হয়ে সেখানে আবারও চর জেগে উঠতে পারে। এমন হলে অতীতে জমি হারানো মানুষ আবারও তাদের পুরোনো সম্পত্তি ফিরে পান। যদিও এর জন্য তাদের পাড়ি দিতে হয় আইনের দীর্ঘ মারপ্যাঁচ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে পদ্মা নদীর ভাঙনে হারিয়ে গেছে অনেক ফসলি জমি, ঘর-বাড়ি। আবার নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় চর জেগেছে কোনো কোনো এলাকায়।

চর জেগে ওঠায় নদীতে বিলীন জমি ফিরে পেয়েছেন অনেকেই। নিজ নিজ জমির পরিমাণ অনুযায়ী সীমানা ঠিক করে চাষাবাদও করে আসছেন। কিন্তু জমি ফিরে পাওয়ার আনন্দ এখন ফিকে হতে বসেছে ওই সব প্রান্তিক মানুষের। জমির মালিকানা প্রমাণে তাদের ছুটতে হচ্ছে দপ্তর থেকে দপ্তরে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ঘোড়াপাখিয়া মৌজার জমি ১৯৯৮ সালে পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। প্রায় দু-তিন বছর ওই এলাকায় পদ্মার পাড় ভাঙে। এতে অসংখ্য আমবাগান, ফসলি জমিসহ ঘর-বাড়ি, স্কুল-মাদ্রাসা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে যায়।

তবে এর কয়েক বছরের মাথায় পদ্মার গতিপথ বদলে আবারও চর জেগে ওঠে ঘোড়াপাখিয়া মৌজা। এতে অতীতের বিলীন হয়ে যাওয়া জমি আবারও ফিরে পায় ওই এলাকার মানুষ। পরে জমির মালিকরা স্থানীয়ভাবে বসে সেই জেগে ওঠা চরে নিজেদের জমি পরিমাপ করে আইল সীমানা নির্ধারণ করে নেন। এরপর নিজ নিজ জমিতে তারা বিভিন্ন ফসল আবাদ শুরু করেন।

কিন্তু এসব জমি এখনও সরকারিভাবে শিকস্তির অন্তর্ভুক্ত (নদীতে বিলীন)। ফলে এই জমির খাজনা নেয়া বন্ধ। এতে জমির নামজারি বা বেচাকেনা কোনো কিছুই করতে পারছেন না জমির মালিকরা। জমি দখলে মিললেও কাগজে-কলমে এখনও মেলেনি এসব মানুষের।

পদ্মায় বিলীন হয়েছিল ওই এলাকার দোরশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি এখন অস্থায়ীভাবে অন্যের জমিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। এর স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য কেনা হয়েছে জমি।

বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের অনুমোদন পেয়ে শিক্ষকরা জমির কাগজপত্র সংগ্রহ করতে যখন ভূমি অফিসে গেলেন, তখন দেখেন তাদের বিদ্যালয়ের জমিও কাগজে-কলমে এখনও নদীতে বিলীন। এ জন্য বিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণ এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন আগে চর জাগলেও গোটা ঘোড়াপাখিয়া মৌজাকেই শিকস্তি জমি করে রাখা হয়েছে।’ সম্প্রতি ওই এলাকায় শুরু হয়েছে ডিয়াড়া জরিপ (নদীতীরবর্তী জমির জরিপ) কার্যক্রম। এ জরিপ কার্যক্রম শুরু হওয়ায় আবারও চরের জমির মালিকানা নিয়ে বিভিন্ন আইন ও বিধিবিধান সামনে আসছে।

এ অবস্থায় পূর্বপুরুষের জমির মালিকানা শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয় কি-না সেই চিন্তায় আছেন মানুষ।

সরকার আমাদের জমির খাজনা নিচ্ছে না। খাজনা দিতে গেলে বলছে বন্ধ আছে। আর এখন জমির রেকর্ড করতে যারা আসছে তারা আবার খাজনার কাগজ ছাড়া জমি রেকর্ড করবে না। তাহলে আমাদের জমির কী হবে?

জরিপ কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা বলছেন, যাদের দখলে আছে, সেই সঙ্গে জমির খাজনার কাগজপত্র ঠিক আছে, তাদের জমি রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত হবে।

মো. জামাল নামের এক জমির মালিক বলেন, ‘নদী আসছিল, দুই বছর পর চলে গেছে। আমরা মাটির আইন সীমানা নিজেরা ঠিক করে নিয়েছি। আমাদের কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু সরকার আমাদের জমির খাজনা নিচ্ছে না। খাজনা দিতে গেলে বলছে বন্ধ আছে। আর এখন জমির রেকর্ড করতে যারা আসছে তারা আবার খাজনার কাগজ ছাড়া জমি রেকর্ড করবে না। তাহলে আমাদের জমির কী হবে?’

এসবুল, আহসান আলী, হযরত আলীসহ বেশ কয়েকজন জমির মালিক একই রকম দুশ্চিন্তার কথা জানালেন। তাদের দাবি, আগে জমির খাজনা চালু করা হোক। তারা সরকারকে খাজনা দিতে চান। তারপর জমির রেকর্ডের কাজ করা হোক।

ইব্রাহিম আলী নামের এক মালিক বলেন, ‘এখন শুনছি সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নিতে হবে। এই জমি আমার পৈতৃক সম্পত্তি। আমি কেন আবার বন্দোবস্ত নেব। আর কেন অফিসে অফিসে ঘুরব। আমি কি ভূমিহীন যে বন্দোবস্ত নেব। জমি নেমে গিয়েছিল, আবার জেগে উঠেছে। এখন যার যার জমি তাদের দলিল দেখে খাজনা চালু করে দিলেই তো হয়।’

জরিপ কাজ যারা করছে, তারা ভিন্ন একটা ডিপার্টমেন্ট। তারা কাজটা শেষ করুক। এরপর যদি কারো জমি শিকস্তি হয়ে থাকে, তিনি যদি আবেদন করেন অবশ্যই আমরা বিষয়টি দেখব।

চলমান ডিয়ারা জরিপ কার্যক্রমে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বে থাকা ফজলুল করিম বলেন, ‘জরিপ কার্যক্রম নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি রয়েছে। আমার সোজা কথা, যার জমি তিনি আইল সীমানা ঠিক রাখবেন। আমরা তার কাগজ দেখে রেকর্ড দেব।’

নদীতে বিলিন হওয়া জমির বিষয়ে আইনের ব্যাখ্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মহসীন মৃধা বলেন, ‘যখন কোনো জমি নদীতে বিলীন হয়ে যায়, তখন তাকে শিকস্তি জমির অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং এর খাজনা নেয়া বন্ধ থাকে। এরপর যদি ৩০ বছরের মধ্যে ওই জমির চর জেগে ওঠে তখন তা পোয়স্তি জমি। তখন ওই জমির মালিকের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকেই বন্দোবস্ত দেয়া হয়। তবে তাকে আবেদন করে বন্দোবস্ত নিতে হয়।’

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘জরিপ কাজ যারা করছে, তারা ভিন্ন একটা ডিপার্টমেন্ট। তারা কাজটা শেষ করুক। এরপর যদি কারো জমি শিকস্তি হয়ে থাকে, তিনি যদি আবেদন করেন, অবশ্যই আমরা বিষয়টি দেখব।’

এ বিভাগের আরো খবর