উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে অনশনে বসেছেন সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার রাতে তারা ঘোষণা দিয়েছিলেন, বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ না করলে অনশনে বসবেন।
বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হওয়ায় ২৪ শিক্ষার্থী বুধবার বেলা ৩টা থেকে অনশন শুরু করেন। তাদের এই কর্মসূচিতে সমর্থন দেন আন্দোলনে থাকা অন্য শিক্ষার্থীরাও।
লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের পক্ষে নুসরাত আরেফিন জানান, রোববার সন্ধ্যায় উপাচার্য যখন আইআইসিটি ভবনে ছিলেন, তখন তিন দফা দাবি নিয়ে তারা কোষাধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। কোষাধ্যক্ষ তাদের দাবি নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনার জন্য আইআইসিটি ভবনে যেতে চান। সে সময় পুলিশ বিনা উসকানিতে শিক্ষার্থীদের লাঠিচার্জ করে, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পরবর্তীতে উপাচার্য তাদের ওপরই হামলার অভিযোগ তোলেন। এ থেকে বিষয়টা স্পষ্ট যে উপাচার্যের নির্দেশেই নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে। যিনি শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেনে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার নৈতিক ও যৌক্তিক কারণ হারিয়েছেন।
এ কারণে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিতে তারা আমরণ অনশন করছেন বলে জানিয়েছেন। এই অনশনের কারণে কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে এর দায় উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির বলেও জানান আন্দোলনকারীরা।
অনশনে অংশ নেয়া জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘উপাচার্য রীতিমতো আমাদের সঙ্গে হাসি-তামাশা করছেন। আমাদের প্রতি তার কোনো সংবেদনশীলতা নেই। আমরা ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলাম। তিনি তাতে গুরুত্ব না দিয়ে বরং মিডিয়ায় আমাদের নামে মিথ্যাচার করছেন।
‘ফলে তিনি উপাচার্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। এখন আমরা তার পদত্যাগ চাই। উপচার্য পদত্যাগ করার আগ পর্যন্ত আমাদের অনশন চলবে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমরা অনশনে থাকব।’
এক হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের আন্দোলন রোববার থেকে রূপ নিয়েছে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে। ওই প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের পর শিক্ষার্থীদের এখন একটাই দাবি, উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন লিজার বিরুদ্ধে খাবারের খারাপ মান, অব্যবস্থাপনা ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আনেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। তার প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে সরে যান। দাবি পূরণ না হওয়ায় শনিবার সন্ধ্যায় ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়ক আটকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন।
এরপর মধ্যরাতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সরে গেলেও রোববার সকাল থেকে ফের শুরু হয় তাদের বিক্ষোভ।
বিকেলে তারা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অবরুদ্ধ করলে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে। শিক্ষার্থীরাও ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। এরপর শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।
শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে কয়েকটি রাবার বুলেট ছোড়া হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ গুলিবিদ্ধ হন। এরপর পুলিশ উপাচার্যকে বের করে তার বাসভবনে নিয়ে যায়।
পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের পর রোববার অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীদের সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।
জরুরি সিন্ডিকেট সভা শেষে রোববার রাতে উপাচার্য ফরিদ প্রাধ্যক্ষ জাফরিনের পদত্যাগের বিষয়টি জানান। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে নামেন।
এর মাঝে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অজ্ঞাতপরিচয় ২ থেকে ৩ শ শিক্ষার্থীকে আসামি করে সোমবার রাতে সিলেটের জালালাবাদ থানায় মামলা করে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকেলে এই মামলা প্রত্যাহারের জন্য পুলিশকে সময় বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্যের পদত্যাগের সময় বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে এ দাবি মানা না হলে আমরণ অনশনে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ আন্দোলন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ মিছিল করেন।