জালিয়াতচক্রের মাধ্যমে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সার্ভারে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন আরসাপ্রধান আতাউল্লাহর ভাই মো. শাহ আলী। এ চক্রের যোগসাজশে ২০১৮ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংগ্রহ করেন তিনি।
২০১৯ সালে চট্টগ্রামে এনআইডি জালিয়াতচক্রটি ধরা পড়ে। এরপর থেকেই ত্রুটিপূর্ণ কয়েকটি এনআইডি অকার্যকর করে দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে শাহ আলীর এনআইডিও রয়েছে।
তবে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গোষ্ঠীটির প্রধানের ভাই কীভাবে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন করার সুযোগ পেলেন, ইসি তা খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস।
পরিচয়পত্র নিবন্ধন শাখার একাধিক কর্মকর্তা জানান, ২০১৯ সালে জালিয়াতচক্র ধরা পড়ার পর কমিশন থেকে ল্যাপটপ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা জানাজানি হয়। মূলত ওই ল্যাপটপ ব্যবহার করে চক্রটি রোহিঙ্গা এবং অন্যদের অর্থের বিনিময়ে ভোটার করত।
পরবর্তী সময়ে তদন্তেও সেটি উঠে আসে। আরসা প্রধানের ভাই শাহ আলীও একই মাধ্যমে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিউজবাংলাকে বুধবার সকাল ১১টার দিকে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘শাহ আলীর এনআইডি ২০১৯ সাল থেকেই লক করা। ভোটার নিবন্ধন ফরম অসম্পূর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় এটি অকার্যকর করে দেয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে ইসি থেকে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। কীভাবে নিবন্ধন করার সুযোগ পেয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
শাহ আলীকে গত রোববার কক্সবাজার উখিয়ার কুতুপালং ৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নৌকার মাঠ থেকে গ্রেপ্তার করে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)।
এ সময় তার কাছ থেকে একটি দেশীয় বন্দুক, একটি বড় আকারের ছোরা ও এক হাজার ইয়াবা ও ইয়াবা বিক্রির ১ লাখ ১০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
পরে উখিয়া থানায় পুলিশের মামলার এজাহারে তার কাছ থেকে বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায় বলে উল্লেখ করা হয়।
এতে বলা হয়, শাহ আলী চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার দেওয়ান বাজারের জয়নব কলোনির স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করে এনআইডি সংগ্রহ করেছিলেন।
তবে ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মাহমুদ হাসনী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য কাউন্সিলর অফিস থেকে নাগরিকত্ব সনদ নিতে হয়। আমার জানা মতে, এ নামের বা চেহারার কাউকে আমি সনদ ইস্যু করিনি।
‘ভুয়া সনদ তৈরি করে তারা এনআইডির নিবন্ধন করতে পারে। এলাকার কোনো স্থায়ী বাসিন্দা এ ব্যক্তিকে কখনও এলাকায় দেখেনি।’
মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ১১ লাখ রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের জন্য করা হয় ক্যাম্প। আর এসব ক্যাম্পে শুরু থেকেই নানা ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিল আরসা।
গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা কুতুপালং ক্যাম্পে ব্রাশফায়ারে নিহত হন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের নেতা মুহিবুল্লাহ। তাকে হত্যায় যারা জড়িত তারা সবাই আরসার সদস্য হিসেবে অভিযোগ রয়েছে।