আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমতে শুরু করেছে। সেই সময়টাতে দেশে এই ভোগ্যপণ্যের দাম লিটারপ্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা বাড়ানোর চেষ্টায় আছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।
এ অবস্থায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে না কমছে, নাকি বর্তমান দর অপরিবর্তিত থাকছে- সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে আজ বুধবার।
খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী ভোজ্যতেলের বর্ধিত দাম গত ৮ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। তবে সরকার কৌশলী অবস্থানে থেকে ইতিমধ্যে বাড়তি দাম কার্যকর ছাড়াই ১০ দিন পার করে দিয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, ভোজ্যতেলের দাম পুনর্বিবেচনার বিষয়ে অনেক দিন থেকেই খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের চাপে রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ভোজ্যতেলের উৎপাদক ও বাজারজাতকারী সংগঠন থেকে গত ২ জানুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে ভোজ্যতেলের বর্ধিত দাম কার্যকরের কথা জানানো হয়।
ভোজ্যতেল খাত-সংশ্লিষ্ট শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন আজ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় বৈঠকটি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, ভোজ্যতেলের দাম পুনর্বিবেচনার বিষয়ে অনেক দিন থেকেই খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের চাপে রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ভোজ্যতেলের উৎপাদক ও বাজারজাতকারী সংগঠন থেকে গত ২ জানুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে ভোজ্যতেলের বর্ধিত দাম কার্যকরের কথা জানানো হয়।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন খুচরা বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনে ৮, খোলা সয়াবিনে ৯ ও খোলা পাম অয়েলে ১০ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানায়। তাদের এ সিদ্ধান্ত গত ৮ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
তথ্যমতে, অ্যাসোসিয়েশনের এই নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের খুচরা মূল্য দাঁড়াবে ১৪৫ টাকা। বোতলজাত সয়াবিনের খুচরা মূল্য পড়বে ১৬৮ টাকা। সে হিসাবে বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিন বিক্রি হবে ৮০০ টাকায়।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভোজ্যতেল সমিতির এই সিদ্ধান্তে বাদ সেধেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কারণ বিশ্ববাজারে যখন পণ্যটির দাম কমছে, তখন দেশে বাড়ানোর প্রস্তাবটি সরকারের জন্য অনেকটাই বিব্রতকর। ফলে তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি সামাল দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কৌশলী অবস্থান নিয়ে ভোজ্যতেলের বাড়তি দাম ৮ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া থেকে ব্যবসায়ীদের বিরত রাখে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, এবার দাম পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকার সার্বিক দিক দেখে-বুঝে এগোতে চাইছে। সে লক্ষ্যে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ও ব্যবসায়ীরা যে পদ্ধতিতে ভোজ্যতেলের মূল্য নির্ধারণ করে আসছে তা পাল্টাতে চায় সরকার। এ জন্য মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি সংশোধন ও ব্যয় বিবরণী হালনাগাদ করার কথা জানায় সরকার। এর পাশাপাশি সরকার, ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে এ সংক্রান্ত কারিগরি কমিটি গঠনের কথাও জানানো হয়।
বাড়তি দাম কার্যকরে খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের নির্ধারণ করা সময়ের পর আরো দশ দিন গড়িয়ে গেছে। এ সময়টাতে কারিগরি কমিটি একাধিক নির্বাচিত পরিশোধন কারখানা পরিদর্শন করে। কমিটি একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত ভোজ্যতেলের দর, বিভিন্ন দেশে পরিশোধিত তেলের বাজারমূল্য এবং দেশে মূল্য নির্ধারণের মানদণ্ডে গত এক দশকে পরিবর্তনগুলো চিহ্নিত করেছে। আবার মূল্য নির্ধারণের কারিগরি দিকগুলো একসঙ্গে যুক্ত করলে সে অনুযায়ী ভোজ্যতেলের প্রতি লিটার দাম বর্তমান বাস্তবতায় কত হওয়া উচিত তা-ও চিহ্নিত করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এসব কৌশলী কর্মযজ্ঞ শেষ হওয়ার পর গঠিত কারিগরি কমিটি বাণিজ্যমন্ত্রীকে একটি সুপারিশ দিয়েছে। সেই সুপারিশ সামনে রেখে ভোজ্যতেলের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছে সরকার।
সিটি গ্রুপের পরিচালক (অর্থ) বিশ্বজিৎ সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার ভোজ্যতেলের দাম কমাতে বললে আমরা কমিয়ে দেব। তবে তার জন্য আমাদের ভ্যাট-ট্যাক্স ও শুল্কে ছাড় দিতে হবে। আর সেটা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে আমাদের বাড়তি দামের প্রস্তাব তো সরকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই দেখেছে। এখন সিদ্ধান্ত দেবে সরকার। সরকার যা বলবে, আমরা তাই শুনব।’
বুধবারের বৈঠকেই দাম পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত আসবে কি না তা জানতে চাওয়া হয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও আমদানি) এএইচএম সফিকুজ্জামানের কাছে। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এতদিন আমরা ব্যবসায়ীদের থামিয়ে রেখেছিলাম। এ সময়ে আমরাও আমাদের কাজগুলো গুছিয়ে এনেছি। বাণিজ্যমন্ত্রীকেও বিষয়গুলো অবহিত করেছি। এরপরই ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসার সময় নির্ধারণ করা হয়। এ বৈঠক থেকেই ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হবে।’
তবে দাম বাড়ছে না কমছে, নাকি অপরিবর্তিত থাকছে- সে বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি এই কর্মকর্তা।
ভোজ্যতেল আমদানি ও বাজারজাতকারী নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক (অর্থ) বিশ্বজিৎ সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার ভোজ্যতেলের দাম কমাতে বললে আমরা কমিয়ে দেব। তবে তার জন্য আমাদের ভ্যাট-ট্যাক্স ও শুল্কে ছাড় দিতে হবে। আর সেটা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে আমাদের বাড়তি দামের প্রস্তাব তো সরকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই দেখেছে। এখন সিদ্ধান্ত দেবে সরকার। সরকার যা বলবে, আমরা তাই শুনব।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, কারিগরি কমিটি বিভিন্ন রিফাইনারি পরিদর্শন করে সেখানে গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য ইউটিলিটি ব্যয় গত এক দশকে অনেকটা বেড়ে যাওয়ার প্রমাণ পেয়েছে। এই বাড়তি দাম তেলের মূল্য নির্ধারণে সমন্বয় হয়েছে। এ ছাড়া মূল্য নির্ধারণের অন্যান্য কারিগরি দিকেও বড় কোনো অসংগতি দেখেনি কমিটি।
ফলে সরাসরি দাবি করা না গেলেও বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অনেকটাই আঁচ করতে পারছেন সংশ্লিষ্টরা।
মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষের বৈঠকে ভোজ্যতেল বিষয়ে আয়োজিত আজকের বৈঠকে এফবিসিসিআিই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ও বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিসহ সিটি, মেঘনা, এস আলম ও টিকে গ্রুপের চেয়ারম্যান, বসুন্ধরা গ্রুপের এডিবয়েল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, এনএসআই, ডিজিএফআই, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, টিসিবি, দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাষ সেলের বাণিজ্য পরামর্শকসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।