চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুকে হত্যার পর স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম নোবেল গাড়িতে তার মরদেহ নিয়ে ঘুরছিলেন রাস্তায়। দুই দফা চেষ্টার পর একটি ঝোপের মধ্যে শিমুর মরদেহ ফেলতে সক্ষম হন তিনি।
সোমবার সকালে এই অভিনেত্রীর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় নোবেলসহ দুজনকে। থানায় নোবেলকে জিজ্ঞাসাবাদে মরদেহ গুমের চেষ্টার তথ্য পাওয়া যায়।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. কামরুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদ শিমুর মরদেহ গুমের চেষ্টার বর্ণনা দেন বলে জানায় পুলিশ।
পুলিশ বলছে, নোবেল ও ফরজাদ জানিয়েছেন- রোববার সকালে শিমুকে হত্যার পর ফরহাদকে বাসায় ডেকে আনেন নোবেল। সকালেই গাড়িতে করে মিরপুর বেড়িবাঁধের দিকে মরদেহটি ফেলে আসার জন্য যান। কিন্তু সুবিধামতো জায়গা না পেয়ে বাসায় ফিরে আসেন। একইদিন রাতে তারা আবার গাড়ি নিয়ে বের হন এবং কেরানীগঞ্জের আলীপুর ব্রিজের কাছে ঝোপের মধ্যে ফেলে আসেন।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার জানান, পারিবারিক বিষয় ও দাম্পত্য কলহের কারণে শিমুকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করেছেন নোবেল এবং মরদেহ গুম করতে সহায়তা করেছেন ফরহাদ।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে শিমুর স্বামী বলেছেন, রোববার সকাল ৭-৮টার দিকে পারিবারিক কলহের জেরে তিনি তিনি শিমুকে গলাটিপে হত্যা করেন। এরপর ফরহাদকে মোবাইলে কল করে ডেকে নেন।
পরে ফরহাদ ও নোবেল পরিকল্পনা করে বাইরে থেকে বস্তা এনে শিমুর মরদেহ লম্বালম্বিভাবে দুটি পাটের বস্তায় ভরে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করেন। এরপর বাড়ির দারোয়ানকে নাশতা আনতে বাইরে পাঠিয়ে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনের আসনে শিমুর মরদেহ নিয়ে বেরিয়ে যান।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রথমে নোবেল ও ফরহাদ মিরপুরের দিকে গিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে লাশ গুমের উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে তারা আবার বাসায় ফেরেন। সন্ধ্যায় আবার তারা মরদহে গুম করতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বছিলা ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার হযরতপুর ইউনিয়নের কদমতলী এলাকার আলীপুর ব্রিজের ৩০০ গজ দূরে সড়কের পাশে ঝোপের ভেতর মরদেহ ফেলে চলে যান। তখন রাত সাড়ে নয়টা। মরদেহটি পরদিন সোমবার উদ্ধার করে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ।
সুতার সূত্রে নোবেল ধরা
নিহতের পরিচয় শনাক্তের পর রাজধানীর কলাবাগান গ্রিনরোডের বাসায় যায় পুলিশ।
পুলিশ জানায়, বাসায় গিয়ে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা হয়। এ সময়ই একটি প্লাস্টিকের সুতার সূত্র ধরে উদঘাটিত হয় হত্যার মূল রহস্য। মরদহে গুম করতে দুটি বস্তা যে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করা হয়েছিল, সেই সুতারই হুবহু এক বান্ডিল শিমুর স্বামী নোবেলের গাড়িতে পাওয়া যায়।
পুলিশ বলছে, গাড়িটি ধোয়া ছিল এবং দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোবেলকে আটক করে পুলিশ। পরে ফরহাদকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে শিমু হত্যার ঘটনায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় হত্যা মামলা করেছেন ভাই শহীদুল ইসলাম খোকন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নোবেল, তার বন্ধু ফরহাদ ও আরেকজনকে আসামি করে এই মামলা হয়।
শিমু হত্যার ঘটনায় করা মামলায় তার স্বামী নোবেল ও নোবেলের বন্ধু আব্দুল্লাহ ফরহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। হত্যার কারণ সম্পর্কে নোবেল অনেক কিছুই বলেছে বলে জানান কেরানীগঞ্জ থানার পরিদর্শক(তদন্ত) কাজী রমজানুল হক।