বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ‘উশৃঙ্খল’ শিক্ষার্থীর হামলার পর সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের চরআইচা গ্রামের মানুষের আতঙ্কে দিন কাটছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া না হলে আগামীতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটবে।
তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের এক নেতা বলছেন, এক ছাত্রীকে মারধরের পর অভিযুক্তরা নিজেদের ঘরবাড়ি ভেঙে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন।
কর্তৃপক্ষ বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে যারা বসবাস করছেন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে তারা জোর দিচ্ছেন। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, গ্রামবাসীর কেউ আতঙ্কে থাকার কথা তাদের জানায়নি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে।
ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করাসহ নানা কারণে চরকাউয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাইদুল আলম লিটন ও তার অনুসারী জাহিদ হোসেন জয়ের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিরোধ। এর জেরে ১১ জানুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আনন্দ বাজার ও চরআইচা গ্রামে যান শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা লিটন ও জয়ের বসতঘর ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এতে আহত হন তাদের পরিবারের সদস্যরাও।
কয়েকজন গ্রামবাসীর দাবি, ২০১৭ ও ২০১৮ সালেও হামলা করেছিল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু উশৃঙ্খল শিক্ষার্থী।
চরকাউয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আনন্দ বাজার এলাকার বাসিন্দা সবুজ মোল্লা। তিনি বলেন, ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এতদিন আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু কিছু শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ডের কারণে আমাদের আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। কিছু শিক্ষার্থী মনে যা চায়, তাই এসে করে। এসব বিষয়ে বাধা দিলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।’
জাকারিয়া নামের এক দোকানি বলেন, ‘লিটন মেম্বার ও জয় যে ভালো সেটা বলার কোনো সুযোগ নেই। সেদিন তাদের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে শিক্ষার্থীদের, মানলাম। কিন্তু তাদের বৃদ্ধ বাবা-মা কী করেছে ? তাদের কেন মারধর এবং ঘর ভাঙচুর করল শিক্ষার্থীরা। তাদের কাছ তো আমরা জিম্মি দশায় পড়ে গেছি।’
শাহনাজ পারভীন নামে এক নারী বলেন, ‘হুনছি সেদিন তো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী আর হ্যার (তার) স্বামী মারামারি করতে করতে বালুর মধ্যে গড়াগড়ি খাইতে আছিল। হেইয়া ছাড়াইতে যাইয়াই তো যত ঝামেলা বাজছে। মোগো এলাকার লোকজনের দোষ থাকতে পারে। তয় এক্কারে বাসা বাড়িতে ঢুইকা ভাঙচুর চালাইবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা হর্তাকর্তা আছে হ্যারা কী বইয়া বইয়া তামশা দ্যাহে।’
উৎপল মন্ডল নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অন্যায় হলে তারা প্রতিবাদ করবে, আন্দোলন করবে। কিন্তু হামলা বা ভাঙচুর করাটা তাদের মানায় না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ভাঙচুরকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। নতুবা এমন ঘটনা আবারও ঘটবে।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ নেতা আল আমিন বলেন, ‘ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্রই গ্রামে ঢুকে বসত বাড়িতে হামলা ভাঙচুর করেনি। শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানিয়ে ফিরে এসেছে। তবে গ্রামের যারা নানা অপকর্মে জড়িত তারা আমাদের ছাত্রীকে মারধর করে নিজেরা বাঁচতে কৌশল নেয়। নিজেদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে তারা। এখানে গ্রামবাসীর আতঙ্কের কোনো কারণ নেই।
‘তাদের সঙ্গে আমাদের অনেক ভালো সম্পর্ক। ওই গ্রামের কিছু দুষ্কৃতিকারীর জন্য একাধিকবার ঝামেলা হয়েছে, তবে সেটা গ্রামবাসীদের সঙ্গে নয়। আমাদের শিক্ষার্থী, সহপাঠীরা তো গ্রামের দোকানগুলোর নিয়মিত গ্রাহক। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক।’
আনন্দ বাজারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও তার স্বামীকে মারধরের ঘটনায় করা মামলায় কারাগারে আছেন লিটন ও জয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর খোরশেদ আলম বলেন, ‘১১ জানুয়ারি বাড়ি ঘরে হামলার ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। ছাত্ররা বিক্ষুদ্ধ ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করেই বসতি ও ব্যবসা। আশপাশের মানুষের সঙ্গে এই ধরনের ঝামেলার অবসান করতে আমরা কাজ করছি। এ জন্য স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।’
বরিশাল বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘গ্রামবাসী আতঙ্কে আছেন, এই ধরনের অভিযোগ এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাজুড়ে আমাদের নজরদারি রয়েছে।’