মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ফাঁকির অভিযোগে কুমিল্লা শহরের দুটি মার্কেটে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা অধিদপ্তর।
সোমবার অভিযান চালানো এ দুই মার্কেট হলো কুমিল্লা টাউনহলের কান্দিরপাড়ে প্লানেট এসআর মার্কেট এবং কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে ময়নামতি সুপার মার্কেট।
কুমিল্লায় ভ্যাট গোয়েন্দার উপ-পরিচালক মুনাওয়ার মুরসালীন ও সহকারী পরিচালক আলমগীর হুসেনের নেতৃত্বে এটি বিশেষ গোয়েন্দা দল এই অভিযান চালায়।
ভ্যাট নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
মার্কেট দুটিতে অভিযান চালিয়ে ভ্যাট গোয়েন্দারা ওই মার্কেটের দোকানগুলোতে হিসাব সংরক্ষণ না করা ও বিক্রির প্রকৃত তথ্য গোপন করে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার প্রমাণ পেয়েছেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, ‘অভিযানের পাশাপাশি দুটি মার্কেটে জরিপ চালানো হয়। তাতে দেখা যায়, কোনো প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন গ্রহণ করেনি, ভ্যাটও দেয়নি।’
ভ্যাট গোয়েন্দার তথ্য মতে, কুমিল্লার প্লানেট এসআর মার্কেটে ৮০ টি দোকান রয়েছে। এর মধ্যে ৫৬ টি দোকানের কোনো নিবন্ধন নেই।
অন্যদিকে, ক্যান্টনমেন্টের ময়নামতি সুপার মার্কেটে মোট ১২০ টি দোকান রয়েছে। এর মধ্যে ৬৪টি দোকানের নিবন্ধন নেই।
ড.মইনুল খান বলেন, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশে ২০২১ সালের ২৫-৩১ মে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের চারটি জরিপ দল মাঠে নেমে রাজধানী ও রাজধানীর বাইরের মার্কেটগুলোতে জরিপ করে।
‘জরিপের পর পর সারাদেশে ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায়। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হলেও কুমিল্লার এই দুটি মার্কেটের কোনো প্রতিষ্ঠানেরই ভ্যাট নিবন্ধন পাওয়া যায়নি।’
মাতৃভান্ডারের ভ্যাট ফাঁকি
এ দিন কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে মিষ্টির দোকান ‘মাতৃভান্ডার’- এ অভিযান চালায় ভ্যাট গোয়েন্দার দলটি।
প্রতিষ্ঠানটিতে মিষ্টি বিক্রির সময় ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেলেও মাতৃভান্ডারে গড়ে মাত্র ২০-২২ টি চালান কাটার তথ্য পাওয়া যায়।
ভ্যাট গোয়েন্দার দু্ইজন কর্মকর্তা ওই প্রতিষ্ঠানের বিক্রি পর্যবেক্ষণের জন্য সকাল ১১ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত অবস্থান করেন।
দেখা যায়, এক দিনে ভ্যাট গোয়েন্দাদের উপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানটি ৩১৮টি চালান ইস্যু করে, যেখানে বিক্রিমূল্য পাওয়া যায় প্রায় তিন লাখ টাকা। অর্থ্যাৎ ভ্যাট চালান না দিয়ে মাতৃভান্ডার মিষ্টির দোকান বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
গোয়েন্দাদের অভিযানে জব্দ করা কাগজপত্রে দেখা গেছে, নতুন বছরের ১ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত মাতৃভান্ডার মিষ্টান্ন ভান্ডার মাত্র ৩৫৪ টি ভ্যাট চালান ইস্যু করে।এর বিপরীতে বিক্রিমূল্য দেখানো হয়েছে প্রায় ৭ লাখ টাকা। অথচ, ভ্যাট গোয়েন্দার একদিনের পর্যবেক্ষণে ৩১৮ টি চালানে ৩ লাখ টাকা বিক্রির হিসাব পাওয়া গেছে।
এভাবে প্রতিষ্ঠানটি চালান ইস্যু না করেই সরকারের বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান।
গোয়েন্দারা বলছেন, কুমিল্লা শহরের অনেক মার্কেট রয়েছে যেগুলোর প্রতিষ্ঠান এখনও নিবন্ধন গ্রহণ করেনি। শিগগিরই এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।