শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন শিক্ষক সমিতির নেতারা। তবে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন তারা।
শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের আন্দোলনে যারা সংহতি প্রকাশ করবেন কেবল তাদের সঙ্গেই আলোচনা করা হবে।
শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পুলিশের করা মামলা প্রত্যাহারে রাত ১০টা পর্যন্ত সময়ও বেঁধে দিয়েছেন তারা।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক তুলসী কুমার দাস ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মুহিবুল আলমের নেতৃত্বে শিক্ষক সমিতির কয়েকজন নেতা মঙ্গলবার বিকেলে আলোচনা করতে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে যান।
আলোচনার প্রস্তাব শিক্ষার্থীরা ফিরিয়ে দিলে চলে যান শিক্ষক নেতারা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব বলেন, ‘আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। গুলি করা হয়েছ। এখন আমাদের সঙ্গে কীসের আলোচনা। এখন উপাচার্য পদত্যাগের ঘোষণা দেবেন- এটিই আমরা চাই।’
তিনি বলেন, ‘কেউ আলোচনা করতে চাইলে আগে আমাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করতে হবে।’
শিক্ষার্থীদের প্রস্তাব দেয়ার আগে এদিন দুপুরে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের সঙ্গে তার বাসভবনে গিয়ে দেখা করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি তুলসী কুমার দাস।
উপাচার্য কার্যালয় থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘আলোচনার মাধ্যমে সবকিছুর সমাধান সম্ভব। আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই। এভাবেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।’
শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পুলিশের করা মামলা প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য রাত ১০টার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। বিকেলে উপাচার্য ভবনের সামনে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের এই ঘোষণা মাইক থেকে জানানো হয়।
সোমবার রাতে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হান্নান বাদী হয়ে সিলেটের জালালাবাদ থানায় এই মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় দুই-তিন শ শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
তিন দফা দাবিতে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রোববার সন্ধ্যায় পুলিশের সংঘর্ষ হয়। অবরুদ্ধ উপাচার্যকে মুক্ত করতে গিয়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করলে এই সংঘাত বাধে। এতে পুলিশ, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের নির্দেশে পুলিশ তাদের ওপর হামলা ও গুলি করে।
তবে এবার শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেই হামলার অভিযোগ এনে মামলা করল পুলিশ।
এজাহারে বলা হয়, রোববার আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ২০০ থেকে ৩০০ ‘উচ্ছৃঙ্খল’ শিক্ষার্থী পুলিশের কাজে বাধা দেয়।
সরকারি আগ্নেয়াস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এ ছাড়া পুলিশকে লক্ষ্য করে শিক্ষার্থীরা গুলি ছোড়ে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।
তবে এই মামলায় কাউকে হয়রানি করা হবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল। মঙ্গলবার দুপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে এসে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেবে না। এ ছাড়া একটি মামলা হলেও কাউকে হয়রানি করা হবে না।’
আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করতে এসে আলোচনার মাধ্যমে যাতে সমাধানে পৌঁছা যায় সেই পথ খোলা রাখার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান নাদেলও।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার আজবাহার আলী শেখও জানিয়েছেন, ‘কোনো ঘটনা ঘটলে মামলা করাটা আমাদের রুটিন কাজ। এ জন্য কোনো শিক্ষার্থীকে হয়রানি করা হবে না।’