আলোচিত লেখক তসলিমা নাসরিনের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট জানাচ্ছে তিনি মারা গেছেন। তার আইডিতে ‘রিমেম্বারিং’ লিখে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি। কারও মৃত্যু হলে এই ব্যবস্থা নেয় তারা।
বিষয়টি সামাজিকমাধ্যমে ঝড় তোলার মধ্যেই তসলিমা সামাজিক যোগাযোগের আরেক মাধ্যম টুইটারে বক্তব্য দিয়ে তসলিমা জানান, তিনি বেঁচে আছেন বেশ ভালোভাবেই।
মঙ্গলবার তসলিমা নাসরিনের অফিশিয়াল ফেসবুক অ্যাকাউন্টের টাইমলাইনে যেতে দেখা যায়, রিমেমবারিং দেখাচ্ছে। এর অর্থ হলো, ওই অ্যাকাউন্টের মালিক মারা গেছেন।
ফেসবুকে একটি অপশন রয়েছে যার মাধ্যমে অ্যাকাউন্টের মালিক একজনকে দায়িত্ব দিয়ে যেতে পারবেন, যাতে তিনি মারা গেলে সেটা ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে জানানো যায়। আর তার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েই ফেসবুক ‘রিমেমবারিং’ অপশনটি চালু করে দেয়। যাতে ফ্রেন্ডলিস্ট ও ফলোয়ারে থাকা সবাই তার মৃত্যু সম্পর্কে জানতে পারে।
তবে তার অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে গিয়ে অবশ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে, তিনি বেঁচে আছেন। বরং ফেসবুককাণ্ডে ক্ষোভ ঝেরেছেন।
বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টার দিকে একটি টুইটে তিনি লিখেন, ‘@Meta @fbsecurity @facebookapp @MetaNewsroom @Facebook আমি বেঁচে বর্তে আছি। কিন্তু তুমি আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টকে স্মরণীয় করে ফেলেছ। কী এক বিষাদময় খবর! কীভাবে তুমি এটা করতে পারলে? দয়া করে, আমার অ্যাকাউন্ট আমাকে ফিরিয়ে দাও।’
ফেসবুকের সমালোচনা করে তসলিমার টুইট
এর এক ঘণ্টা আগে ফেসবুকের এমন আচরণের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে আরও একটি টুইট করেন তসলিমা। সেখানে তিনি লেখেন, ‘#ফেসবুক আমাকে হত্যা করেছে। আমি জীবিত। এমনকি আমি অসুস্থও না, শয্যাশায়ীও না, হাসপাতালেও ভর্তি হইনি। কিন্তু আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মেমোরিয়ালাইজড করে ফেলেছে ফেসবুক।’
নারী অধিকার ও ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে খোলামেলা বক্তব্য ও বই লিখে আলোচিত তসলিমা নিজের দেশ থেকে বহু দূরে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে সামাজিকমাধ্যমের সুবাদে তার নানা বক্তব্য ও অবস্থান গোপন থাকছে না মোটেও।
তসলিমার বিষয়ে তার বিরোধীরাও তুমুল আগ্রহ বোধ করেন। তিনি কোনো বক্তব্য দিলেই সেটি নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দেয়।
আগের দিন রাতে তসলিমা এক স্ট্যাটাসে তার মৃত্যু নিয়ে কথা বলেছিলেন। জানিয়ে রাখেন, মৃত্যুর পর তার দেহ ব্যবহার হবে বৈজ্ঞানিক গবেষণায়।
মৃত্যু নিয়ে আগের দিনের স্ট্যাটাস
তসলিমার আইডি রিমেমবারিংয়ে দেয়ার পর তার মৃত্যুর গুঞ্জন আরও ছড়িয়ে যাওয়ার কারণ আগের দিন ফেসবুকে তার দেয়া একটি স্ট্যাটাস।
সেদিন তিনি লেখেন, ‘আমি চাই আমার মৃত্যুর খবর প্রচার হোক চারদিকে। প্রচার হোক যে আমি আমার মরণোত্তর দেহ দান করেছি হাসপাতালে, বিজ্ঞান গবেষণার কাজে। কিছু অঙ্গ প্রতিস্থাপনে কারও জীবন বাঁচুক। কারও চোখ আলো পাক। প্রচার হোক, কিছু মানুষও যেন প্রেরণা পায় মরণোত্তর দেহ দানে।
‘অনেকে কবর হোক চান, পুড়ে যাক চান, কেউ কেউ চান তাঁদের শরীর পোড়া ছাই প্রিয় কোনো জায়গায় যেন ছড়িয়ে দেয়া হয়। কেউ কেউ আশা করেন, তাদের দেহ মমি করে রাখা হোক। কেউ আবার বরফে ডুবিয়ে রাখতে চান, যদি ভবিষ্যতে প্রাণ দেওয়ার পদ্ধতি আবিষ্কার হয়!’
আগের দিন তসলিমা তার সম্ভাব্য মৃত্যু নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন
তসলিমা জানান, অসুখ-বিসুখে তিনি আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের ওপর নির্ভর করেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত করবেন।
তিনি লেখেন, ‘কোনো প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতিতে তার বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই। ঠিক যেমন বিশ্বাস নেই কোনো কুসংস্কারে।’
জীবনের একটি মুহূর্তের মূল্যও তসলিমার কাছে অনেক জানিয়ে তিনি লেখেন, ‘তাই কোনো মুহূর্তই হেলায় হারাতে চাই না।’
পরকাল বলে কিছু নেই উল্লেখ করেন তসলিমা। বলেন, ‘মরার পর আমরা কিন্তু কোথাও যাই না। পুনর্জন্ম বলে কিছু নেই। মৃত্যুতেই জীবনের সমাপ্তি। আমার জীবন আমি সারা জীবন অর্থপূর্ণ করতে চেয়েছি। মৃত্যুটাও চাই অর্থপূর্ণ হোক।’