বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘আমরা কি টিকা পাব না?’

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১৮ জানুয়ারি, ২০২২ ১৮:০০

শুধু জগলু, সোহেল বা শরীফের মা নন, টিকা পাওয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন শাহেদ, জসিম, নয়ন, কাকলির মতো সুবিধাবঞ্চিত অনেক পথশিশু ও কিশোরের।

সরকারি নির্দেশনায় ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হচ্ছে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম ও রীমা কমিউনিটি সেন্টারে। এর মধ্যেই ঘটল এক বিপত্তি!

গত ১৫ জানুয়ারি টিকার জন্য নির্ধারিত লাইনে স্কুলশিক্ষার্থীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে যায় সুবিধাবঞ্চিত কিছু পথশিশু ও কিশোর। কিন্তু জন্মনিবন্ধন না থাকায় শেষ পর্যন্ত টিকা পায়নি তারা। ফিরে যায় নিরাশ হয়ে।

সোমবার বেলা ১১টার দিকে নগরীর সিআরবি এলাকায় এমন কয়েকজন পথশিশুর দেখা মেলে। এর মধ্যে জগলু নামে ১৩ বছরের এক পথশিশু বলে, ‘জন্মনিবন্ধন ছাড়া করোনার টিকা নাকি দেয়া যাবে না। আমার জন্মনিবন্ধন নাই। মা-বাবাও নাই। তাহলে আমি কি টিকা পাব না?’

এ সময় বায়েজীদ এলাকা থেকে সিআরবি এলাকায় বোতল কুড়াতে আসা ১৫ বছরের কিশোর সোহেল বলে, ‘১২ থেকে ১৮ বছরের ছেলেমেয়েদের টিকা দিচ্ছে শুনে গত শনিবার (১৫ জানুযারি) আমি লাইনে দাঁড়াই। দীর্ঘক্ষণ পর তারা আমার কাছে জন্মনিবন্ধন আছে কি-না জানতে চায়। নাই বলায় আমাকে লাইন থেকে বের করে দেয়। এটা ছাড়া কি টিকা পাব না?’

সোহেল আরও বলে, ‘ঘূর্ণিঝড়ের (সিডর) সময় আমি ছোট ছিলাম। বাবা তখন মারা গেছেন। মা আমাদের তিন ভাইবোনকে নিয়ে বরগুনা থেকে চট্টগ্রাম চলে আসেন। এখন গার্মেন্টসে চাকরি করে। আমি বোতল কুড়াই। জন্মনিবন্ধন কীভাবে করব?’

নগরীর খুলশী থানার কাজীর দেউরি এলাকায় পথশিশু শরীফের মা হাফছা বেগম জানান, তার ১৩ বছর বয়সী ছেলের কোনো জন্মনিবন্ধন নাই; স্কুলেও যায় না, বোতল কুড়ায়। এ অবস্থায় ছেলের টিকা পাওয়া নিয়ে তিনি এখন দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন।

হাফছা বলেন, ‘আমার কোনো ঘর-দুয়ার নাই। দুই বেলা ঠিকমতো খাওন জোটে না। শুনছি, জন্মনিবন্ধন করতে অনেক খরচ লাগে। এত খরচ আমি কোথায় পাব? করোনাভাইরাসে মানুষ মারাও যায়। কিন্তু টিকা কীভাবে দেব। আল্লাহ ছাড়া কোনো উপায় নাই।’

শুধু জগলু, সোহেল বা শরীফের মা নন, টিকা পাওয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন শাহেদ, জসিম, নয়ন, কাকলির মতো সুবিধাবঞ্চিত অনেক পথশিশু ও কিশোরের। পেটের তাগিদে সারা দিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে হয় বলে তাদেরও করোনাভাইরাসের ভয় আছে।

চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গা, বন্দর এলাকা, আগ্রাবাদ, টাইগারপাস, নিউ মার্কেট, চকবাজার, শাহ আমানত সেতু, দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, মতিঝর্না, সিআরবি, কাজীর দেউড়ি, ঝাউতলা, সিইপিজেড, কেইপিজেডসহ সব বাসস্টেশন, রেলস্টেশন, অফিস চত্বর, পার্ক ও ফুটপাতে এমন হাজারও সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু-কিশোর রয়েছে। তারাও করোনাভাইরাসের বাহক হতে পারে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউশন অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) ও ইউনিসেফের ২০০৫ সালে পরিচালিত জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট ৯ লাখ ৭৯ হাজার ৭২৮ পথশিশু রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে রয়েছে ৫৫ হাজার ৮৫৬ পথশিশু।

আইন অনুযায়ী, শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক। কিন্তু দেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের একটি বড় অংশ এখনও জন্মনিবন্ধনের বাইরে। নানা জটিলতার কারণে জন্মসনদ নিয়ে তারা চরম ভোগান্তির মধ্যে আছে।

বেসরকারি এনজিও সোসাইটি ফর সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট অব রুরাল পিপলের (সার্প) নির্বাহী পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিয়োজিত ১২ হাজার ৫০০ শিশুকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণের জন্য সরকারিভাবে ২০টি এনজিও নিযুক্ত রয়েছে।

এ ছাড়া ব্যক্তিগত ও সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে পথশিশুদের প্রাথমিক অক্ষরজ্ঞান দেয়া হলেও জন্মনিবন্ধন না থাকায় এসব শিশু বেশি দূর এগোতে পারে না। তাদের পিতা-মাতার পরিচয়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় জন্মনিবন্ধন করাতে গেলে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, ‘জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে প্রথম ধাপে ১২ থেকে ১৮ বছরের শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা জন্মনিবন্ধন সনদ না থাকাসহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে টিকার জন্য অনলাইনে যাদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ নেই, এ ধরনের জনগোষ্ঠীকেও টিকার আওতায় আনার কার্যক্রম চলছে।

এ বিভাগের আরো খবর