বাবা বাচ্চু ভুইয়া চায়ের দোকানি। যা আয় তাতে চলে পাঁচজনের সংসার। এরপর কিছুই সঞ্চয় থাকে না। সুরাইয়ার চিকিৎসা নিয়মিত করার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধিসহ নানা কারণে তার আর হয়নি।
যারা কথা দিয়েছিল মেয়েটির চিকিৎসার দায়িত্ব নেবেন তাদের কেউ আর যোগাযোগ করেননি।
এর মধ্যে ২ জানুয়ারি স্কুলে ভর্তি হয় মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ সেই সুরাইয়া। বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের সহযোগিতায় অবশেষে তার চিকিৎসা শুরু হয়েছে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) সাভার শাখায়।
চিকিৎসার বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন সুরাইয়ার বাবা বাচ্চু ভুইয়া।
প্রায় ছয় বছর আগে ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই মাগুরা শহর এলাকার দোয়ারপাড়ায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন বাচ্চুর স্ত্রী নাজমা বেগম। সে সময় গর্ভে থাকা সুরাইয়া গুলিবিদ্ধ হয়।
মাগুরা সদর হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার জন্ম হয়। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েই সে বেড়ে উঠছে। হাঁটতে পারে না মেয়েটি। একটি চোখ অন্ধ অন্যটিতেও সমস্যা।
সুরাইয়ার বাবা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই ঘটনার পর গুলিতে সুরাইয়ার ডান চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে। বাম চোখের অবস্থাও ভালো না। শরীরের ডান পাশটিও ঠিকভাবে কাজ করছে না। সে কিছুই পারে না। কারও সাহায্য ছাড়া হাঁটতে পারে না।’
মাগুরা পুলিশ লাইনস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে সুরাইয়ার ভর্তি রোল ৩২। এর মধ্যে একবার স্কুল গিয়ে নতুন বই নিয়েছে মেয়েটি। তবে করোনার কারণে ক্লাস বন্ধ থাকায় আর শ্রেণি কক্ষে বসা হয়নি।
স্কুলে ভর্তির দিন সুরাইয়াকে প্রথম দেখেন শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদাউস। মেয়েটিকে দেখে তার খারাপ লাগাটা বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে সুরাইয়ার ছবি তুলে নিজের ফেসবুকে আপলোড করেন।
এই শিক্ষক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কথা ঠিক মতো বলতে না পারলেও সুরাইয়ার মেধা আছে। ভাবলাম বাচ্চাটার শারীরিক এসব সমস্যা চিকিৎসা করালে হয়তো ভালো হয়ে যাবে।
‘ফেসবুকে ছবি আপলোডের পর সুরাইয়ার বিষয়টি আবারও সবার সামনে আসে। আমাকে ফোন করেন সমাজকর্মী ওহিদুর রহমান টিপু ভাই। তিনি সহায়তার হাত বাড়ান। সোমবার মেয়েটি ভর্তি হয়েছে হাসপাতালে।’
হাসপাতালে সুরাইয়ার সঙ্গে আছেন তার বাবা-মা। বাবা বাচ্চু ভুইয়া বলেন, ‘মেয়ে ভালো আছে। সিআরপিতে চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, ১৫ দিন চিকিৎসা চলবে। এরপর বাড়ি নিতে পারব। এরপর প্রতি মাসে একবার করে হয়তো নিয়ে আসতে হবে। স্কুলের ম্যাডাম সব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আমার মেয়ের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন তা চালু হওয়ায় আমাদের আনন্দের শেষ নেই।’
সুরাইয়ার স্কুলে ভর্তি নিয়ে ৩ জানুয়ারি একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় নিউজবাংলাতে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক রোখসানা আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সুরাইয়ার মেধা ভালো। আমাদের ভর্তির দিন মুখস্থ ছড়া শুনিয়েছে। আশা করি সে আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠবে।’