স্থানীয় সরকারের আয় বাড়াতে করণীয় ঠিক করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কাছে প্রস্তাব চেয়েছে সরকার।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়াতে হবে এবং তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। কথায় এসেছে তাদের কিছু কর্মী লাগবে। ইউনিয়ন পরিষদে আরও লোকবল লাগবে, এটি করতে গেলে তাদের আয় বাড়াতে হবে।
‘আয় বাড়ানোর জন্য এখানে কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এখানে ইউনিয়ন পরিষদের যে আয়ের উৎস, একেক জায়গায় একেক রকম।’
তিনি বলেন, ‘সব জায়গার সম্ভাবনা এক রকম না। পার্বত্য চট্টগ্রামের কথা যদি বলি তাহলে সেখানকার জনগণের আয়, সেখানে ঘনত্ব কম এবং মানুষের আয়ও কম। সেখানে হয়তো আমাদের ভর্তুকি দিতে হবে।
‘আবার অনেক ইউনিয়নে শিল্পকারখানা আছে, সেখানে আয় বেশি হবে। যেখানে আয় নেই সেখানে আয় বৃদ্ধি করার জন্য কী দরকার সরকারকে তারা যেন তা জানায়, তাহলে সরকার সেখানে থেকে সেই প্রকল্পগুলো নেবে আয় বাড়ানোর জন্য।’
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা প্রশাসকরা তাদের মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতাগুলো তুলে ধরেছেন, কিছু কিছু প্রস্তাবও এসেছে। সেখানে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালী করার জন্য কী ব্যবস্থাপনা হাতে নেয়া যায় সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের পৌরসভাকে শক্তিশালী করা এবং গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন করার জন্য সেখানে আলোচনা হয়েছে।
‘পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু কিছু সমস্যা আছে, সেখানে অবকাঠামো নির্মাণে স্বাভাবিক জায়গার চেয়ে বেশি ব্যয় হয়। সেগুলোর জন্য আরো বেশি বরাদ্দ দেয়ার কথা হয়েছে। এগুলো যৌক্তিকতার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির জন্য বলা হয়েছে।’
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সকালে এ কথাগুলো বলেছেন। আমিও আমার বক্তব্যে গুরুত্ব দিয়েছি। আমি বলেছি জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তা, বিভিন্ন পেশাজীবী সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
‘এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকদের অত্যন্ত আন্তরিক বলে পরিলক্ষিত হয়েছে। সবাই মিলে কাজ করলে, আমাদের লক্ষ্য উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা, আমরা আমাদের লক্ষ্যে দ্রুত পৌঁছাতে পারব।’
স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করা বলতে মূলত তাদের আয় বৃদ্ধির বিষয়টিকে বোঝানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘এখানে শক্তিশালী অর্থ হলো তাদের আয় বাড়ানো। আমি একটি বিষয় পরিষ্কার করেছি। জনগণের আয় বাড়ানো সরকারের দায়িত্ব। জনগণের আয় বাড়লে সেখান থেকে একটি সংখ্যা সরকার নেবে রাজস্ব আকারে। সেটা সকলের কল্যাণে ব্যবহার করা হবে।
‘সেখানে জেলা প্রশাসকসহ তাদের স্ব স্ব এলাকায় যে সম্ভাবনা আছে সেগুলো আমাদের যেন জানান। আর মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসকদের যারা কাজ করেন, তাদের অভিজ্ঞতা আছে, যেহেতু তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেশেন, মানুষের কী সমস্যা আর কাজ করতে গিয়ে কী অসুবিধা হয় সবগুলো চিহ্নিত করবেন। সেগুলো গ্রহণ করে আমরা কাজ করার চেষ্টা করব।’
মাঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের কারণে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী তাজুল বলেন, ‘সব জায়গায় একই রকম সমস্যা হয় এটা বলা যাবে না। অনেক জায়গায় ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যান একসঙ্গে অনেক ভালোভাবে কাজ করছেন। আবার কোথাও সমস্যা হয়।
‘ক্ষেত্রবিশেষে যেখানে যেখানে জটিলতা আছে, সেখানে কাজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল, আর আমি নিজেও এটাকে গুরুত্ব দিয়েছি। আমাদের সবাইকে বিশ্বাস করতে হবে। এখানে কোনো বিতর্ক করার সুযোগ নেই। সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এগুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশটা পরিচালিত হয় রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে। রাজনীতিতে নীতি তৈরি করা, আইন তৈরি করা, জনগণের দাবি আদায় করা, প্রশাসনিক কর্মকতাদের অধিকার আদায় করা সবার জন্যই রাজনীতি প্রয়োজন। রাজনীতির সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। কোথাও কোথাও ব্যক্তিগতভাবে সমস্যা তৈরি হলে এটাকে অবশ্যই রাষ্ট্র বিবেচনা করবে।
‘এই অঙ্গীকার রাষ্ট্রের আছে এবং আমরাও অঙ্গীকারবদ্ধ। আমাদের প্রশাসকরা যারা দূর-দূরান্তে বিভিন্ন জায়গায় যাবেন তারা যেন শান্তিপূর্ণভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, এ জন্য রাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ।’