সব জায়গায় তেলাপোকার দৌড়াদৌড়ি। প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীটি এমন রাজত্ব গেড়ে বসেছে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কয়েকটি ওয়ার্ডে; কাজে আসছে না তেলাপোকা তাড়ানোর কোনো উপায়। অসহায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বেডে বেডে ঘুরছে তেলাপোকা, কখনও কখনও উঠে যাচ্ছে রোগীর গায়েও। হেঁটে বেড়াচ্ছে খাবারের মধ্যেও। তিতিবিরক্ত রোগী ও তাদের স্বজনরা। কোনোভাবেই ভাঙা যাচ্ছে না তেলাপোকার ঘরবসতি।
তেলাপোকা তাড়ানো নিয়ে ব্যর্থতার সুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কণ্ঠে। তারা বলছে, তেলাপোকা তাড়ানোর সব উপায় ব্যর্থ হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বেকায়দায়ই আছেন তারা।
এমনিতেই নানা সমস্যায় জর্জরিত উত্তরাঞ্চলের সব থেকে বড় চিকিৎসাকেন্দ্র রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এর মধ্যে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তেলাপোকার উৎপাত। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ছড়িয়ে পড়েছে এগুলো। তেলাপোকা নিয়েই থাকতে হচ্ছে রোগী, স্বজন ও স্বাস্থ্যকর্মীদের।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কয়েকটি ওয়ার্ডে তেলাপোকার এমন উৎপাত নিত্য দিনের চিত্রএখানকার কয়েকটি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, রোগীর বিছানার নিচের দিকে বাসা বেঁধেছে অগণিত তেলাপোকা। কোনোটি বড়, কোনোটি সদ্য ফোটা বাচ্চা। এগুলো বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে হাসপাতালজুড়ে।
১০ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেল রোগীর বেশ কয়েকজন স্বজন তেলাপোকা তাড়াতে ব্যস্ত। এগুলো এখানকার মেঝে ও দেয়ালে দৌড়ে বেড়াচ্ছে, খাবার রাখার র্যাকে খেলে বেড়াচ্ছে, রোগীর খাবারের বাটি, থালাতেও হেঁটে বেড়াচ্ছে। রোগী ও তাদের স্বজনরা বলছেন, ভয়ংকর এক পরিস্থিতি এখানে। তেলাপোকা যেন আতঙ্ক তৈরি করে দিয়েছে রোগীদের মধ্যে।
ঐ ওয়ার্ডে জসিম উদ্দিন নামের এক রোগীর স্বজন বললেন, ‘আমরা পোকার দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ। রোগী ও রোগীর স্বজন সবাই ভয়ের মধ্যে আছি। কোনো খাবার রাখা যাচ্ছে না। রোগীর শরীরের ওপরেও হেঁটে বেড়াচ্ছে। পা বেয়ে শরীরে উঠে যাচ্ছে।
‘ছোট ছোট বাচ্চা এখানকার রোগী। তাদের কানে বা নাকে ঢুকে যায় কি না- এটা নিয়ে সব সময়ই ভয়ের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। শত শত বাচ্চা রোগী আছে, তাদের কানে বা নাকে-মুখে প্রবেশ করলে কী বিপদ হতে পারে একবার ভেবে দেখেন।’
মেডিসিন ওয়ার্ডের এক রোগীর স্বজন আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এমনিতেই এই হাসপাতালের সেবা নিয়ে মানুষের মুখে নানা অভিযোগ শুনি। এখানে এসে তেলাপোকার উৎপাত দেখতে পাচ্ছি। চরম বিরক্তিকর। কোনো খাবার রাখা যাচ্ছে না। অনেকটা অরুচিকর বিষয়। সব থেকে ভয়ের বিষয় এগুলো যেকোনো সময় নাকে-মুখে ঢুকে যেতে পারে।’
এই সমস্যার কথা স্বীকার করে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘তেলাপোকা নিয়ে আমরা বেকায়দায় আছি। বলতে পারেন ব্যর্থই হয়েছি।’
তেলাপোকার উৎপাত নিয়ে তিনি জানান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না রাখতে পারার কারণেই এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে। হাসপাতালে রোগীর যে চাপ, ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকেন রোগী বা তাদের স্বজনরা। ওয়ার্ডগুলো ঠিকভাবে পরিষ্কার করাও যায় না। এসব কারণেই এই সমস্যাটা বেশি হয়েছে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘যারা তেলাপোকা মারে আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তারা এসে দেখে গেছেন। তারা এক একটি ওয়ার্ড ঠিক করতে ৬-৭ লাখ টাকা করে চেয়েছিল। আমরা সেটাও দিতে চেয়েছি।
‘তারা বলছেন, যেদিন যে ওয়ার্ডে কাজ করবেন সেদিন ওই ওয়ার্ড ফাঁকা রাখতে হবে। এটা আসলে আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। কারণ আমাদের এখানে এমনিতেই জায়গার অভাব। ওয়ার্ড বন্ধ করে কাজ করানো যাবে না। আবার রোগী রেখেও এগুলো মারার ওষুধ দেয়া যাবে না। এখন দেখি বিকল্প কিছু করা যায় কি না।’