প্রথম নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা, এরপর সিটি করপোরেশনের তিনটি নির্বাচন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের উড়িয়ে দিচ্ছেন প্রতিবার। তবে প্রতিটি নির্বাচনেই তার ভোট কমছে। যদিও এখনও প্রতিদ্বন্দ্বীরা তার ধারে কাছেও আসতে পারছেন না।
রোববার আইভী চতুর্থবারের মতো জনতার মন জয়ের লড়াইয়ে উত্তীর্ণ হন বেশ ভালোভাবে। তবে প্রথমবার তিনি যত হারে ভোট পান, পরের প্রতিবার ভোটের হার কমছে।
আইভী যখন প্রথম ভোটে দাঁড়ান, তখন তিনি তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর আড়াই গুণের বেশি ভোট পান। দ্বিতীয় নির্বাচনেও ভোটের হার অনেকটা এমনই ছিল। তবে সে বছর তিনি রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সমর্থন পেয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়।
তৃতীয়বার তিনি ভোটে নেমে আইভী প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর দ্বিগুণেরও কিছু কম ভোট পান। চতুর্থবার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর দেড় গুণের কিছু বেশি ভোট পান তিনি।
আইভী টানা জয় পেলেও এবার গতবারের চেয়ে ভোট কম পাওয়া ও ব্যবধান কমে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তার প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনাোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের প্রার্থীর ভোট কম পাওয়ার দুইটা কারণ। একটা হলো বয়স্কদের ইভিএম না বোঝা, আরেকটা হলো এখানে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ। যদি এসব সমস্যা কাটানো যেত, তাহলে আরও অনেক ভোট পেতেন আইভী।’
আইভীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আধিনাথ বসু জানান, ‘আমি বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে গিয়েছি, সেখানে দেখেছি অনেক ভোটারের ইভিএম বুঝতে কষ্ট হয়েছে। এ কারণে ভোটগ্রহণে ধীরগতি হয়েছে।’
শামীম ওসমান ও আইভীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব ভোটে কোনো প্রভাব ফেলেছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এ ব্যপারে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। কারণ, ভোট শেষ।’
পৌরসভার প্রথম ভোটেই, সিটির প্রথম নির্বাচনে শামীমের মুখোমুখি
নিউজিল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে আইভী প্রথম ভোটের লড়াইয়ে নামেন ২০০৩ সালের পৌরসভা নির্বাচনে। নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নেই ভোটে তিনি ৩০ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে পাস করেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ভোট পান ১২ হাজারের কিছু বেশি।
তবে সেই নির্বাচন সেভাবে আলোচিত হয়নি, যতটা আলোচিত হয়েছিল ২০১১ সালের সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন।
সে সময় আইভীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হন তার দলের নেতা এ কে এম শামীম ওসমান। সেই ভোট দলীয় প্রতীকে হয়নি। তবে রাজনৈতিক দলগুলো একজন করে প্রার্থীকে সমর্থন দিন।
আইভী ও শামীম-দুই জনই ক্ষমতাসীন দলের সমর্থন চাওয়ার পর আওয়ামী লীগ তাদের মধ্যে সমন্বয় করতে সফল না হওয়ার পর নির্বাচনটি উন্মুক্ত করে দেয়।
সেই নির্বাচনে বিএনপি সমর্থন দেয় তৈমূর আলম খন্দকারকে। তবে ভোটের আগের রাতে দলের নির্দেশে তিন সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন।
সেই নির্বাচনে ১৬৩টি ভোটকেন্দ্রে আইভী পান ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৮ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমান পান ৭৮ হাজার ৭০৫ ভোট। ব্যবধান ছিল ১ লাখ এক হাজার ৩৪৩।
ওই নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৬৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। ভোট দেন ২ লাখ ৭৬ হাজার ৩২৯ জন। এর মধ্যে ৬৫ দশমিক ১৫ শতাংশ ভোট পড়ে আইভীর বাক্সে।
সে বছর বড় ধরনের কোনো অভিযোগ ছাড়া বিএনপির সরে দাঁড়ানোর পেছনে শামীম ওসমানকে ঠেকানোর ইচ্ছাই কারণ ছিল বলে ধারণা করা হয়।
ধানের শীষকে গুঁড়িয়ে দেয়া
২০১৬ সালের সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচন হয় দলীয় প্রতীকে। সে বছর সরাসরি লড়াই হয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির।
সেই নির্বাচনেও আইভী জয় পান বিপুল ব্যবধানে। কিন্তু তার ভোট এবং প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ব্যবধান কমে আসে। যদিও ভোটের হারও কিছুটা কমে।
আগের নির্বাচনের তুলনায় ভোটের হার কিছুটা কমে হয় ৬২ দশমিক ২২ শতাংশ। মোট ভোট পড়ে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২৫টি। এর মধ্যে ৫৯ দশমিক ৩২ শতাংশ ভোট পান আইভী।
সেই নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র বেড়ে হয় ১৭৪টি। আইভীর নৌকায় পড়ে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬১১ টি। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির সাখাওয়াত হোসেন খান পান ৯৬ হাজার ৪৪ ভোট।
২০১১ সালের তুলনায় সেবার তার ভোট কমে ৪ হাজার ৪৩৭টি। আর ভোটের ব্যবধান কমে হয় ৭৯ হাজার ৫৬৭টি।
এবার নির্বাচনে ভোট কমল ১৬ হাজারের বেশি
গত রোববারের ভোটে ভোটকেন্দ্র আরও বেড়ে হয়েছে ১৯২টি। এবার আইভী পেয়েছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৯৭টি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৈমূর আলম খন্দকার পেয়েছেন ৯২ হাজার ১৬৬ ভোট।
অর্থাৎ ৫ বছর আগের তুলনায় এবার আইভীর ভোট কমেছে ১৬ হাজার ৫১৪টি। এবার ভোটের ব্যবধান আরও কমে হয়েছে ৬৬ হাজার ৯৩১টি।
এবার মোট ভোট পড়েছে ৫৬ দশমিক ৩২ শতাংশ। ভোট দিয়েছেন মোট ২ লাখ ৯০ হাজার ৯১১ জন। এর ৫৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ পেয়েছেন আইভী।