নতুন শিল্পনীতিতে সেবা খাতকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি বলে মনে করছে ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
রাজধানীর মতিঝিলে সোমবার এফবিসিসিআই কার্যালয়ে শিল্প নীতিবিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির এক বৈঠকে এমন মন্তব্য করা হয়। স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
খসড়া শিল্পনীতি-২০২১-এর ওপর মতামত জানাতে এ সভার আয়োজন করা হয়।
অর্থনীতির বিকাশে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ-পিপিপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও শিল্পনীতিতে তা উল্লেখ নেই বলে জানায় এফবিসিসিআই।
এফবিসিসিআইয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা বলেন, সরকারের বিভিন্ন নীতির মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। নতুন শিল্পনীতির খসড়ায় এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখা ও একই সঙ্গে শিল্পনীতিকে সর্বোচ্চ নীতি হিসেবে গুরুত্ব দেয়ার সুপারিশ করেন তারা।
এ ছাড়া নতুন শিল্পনীতির খসড়ায় স্বল্পোন্নত (এলডিসি) পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ, দক্ষ জনশক্তি তৈরি, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার ও এসএমই খাতকে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেন কমিটির সদস্যরা।
সভায় স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, ‘অর্থনীতিতে ৫০ শতাংশের বেশি অবদান রাখে সেবা খাত। অথচ খসড়া শিল্পনীতিতে এ খাত সম্পর্কে কোনো কিছু বলা হয়নি।’
অর্থনীতি বিকাশের স্বার্থে সেবা খাতকে নতুন শিল্পনীতিতে গুরুত্ব দেয়ার প্রস্তাব করেন তিনি।
এফবিসিসিআই স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা বলেন, জাতীয় শিল্পনীতি ২০২১ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে বর্তমান নীতিতে থাকা অনেক সুবিধার সুফল নিতে পারছেন না উদ্যোক্তারা। দেশে বিদ্যমান বিভিন্ন নীতি একে অন্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
কমিটির সদস্যরা মনে করেন, দেশে দ্রুত শিল্পায়ন ও বিনিয়োগ বাড়াতে হলে বিদ্যমান অন্যান্য নীতির সঙ্গে সামাঞ্জস্য রেখে নতুন শিল্পনীতি করতে হবে। তা না হলে এর সুফল মিলবে না।
বৈঠকে এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি ও শিল্প নীতিবিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির ডিরেক্টর-ইন-চার্জ মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘শিল্পনীতি বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় থাকা জরুরি। বিসিক শিল্পনগরীতে কোনো সেবা না পেলেও সার্ভিস চার্জ বেশি গুনতে হয় উদ্যোক্তাদের।’
বিসিকের বিভিন্ন শিল্পনগরীতে জমির উচ্চমূল্যের কারণে শিল্পায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দেশ সার্কুলার অর্থনীতির দিকে হাঁটছে এবং এ বিষয়ে এফবিসিসিআইও কাজ করছে বলে জানান কমিটির সদস্যরা।
নতুন শিল্পনীতিতে সার্কুলার অর্থনীতিকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা দিয়ে তা অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া শিল্পের বিকাশে জমির সহজলভ্যতা ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের নিশ্চয়তা চান স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা।
এফবিসিসিআই বলছে, বর্তমানে ২২৭টি পণ্য দেশে উৎপাদন করতে বিএসটিআইয়ের মানসনদ লাগে। অথচ আমদানির বেলায় এই মানসনদ লাগে মাত্র ৫৫টি পণ্যের। এই বৈষম্যের সুযোগ নিয়ে অনেক নিম্নমানের বিদেশি পণ্য দেশীয় বাজার দখল করেছে।
এ ছাড়া দেশে শিল্প স্থাপনে ৩০টি সনদ লাগে, যা প্রতি বছর নবায়ন করতে হয়। অথচ ভিয়েতনামে এ সংখ্যা মাত্র পাঁচটি এবং নবায়ন করার কোনো বিধান নেই। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশে সনদের সংখ্যা পাঁচটিতে নামিয়ে আনা এবং নবায়ন করার বিধান বাতিলের সুপারিশ করা হয় বৈঠকে।
বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (নীতি) মো. সেলিম উল্লাহ খসড়া শিল্পনীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। অন্যদের মধ্যে সভায় উপস্থিত ছিলেন স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রাজ্জাক ও আসিফ ইব্রাহিম এবং এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আবুল কাশেম খান, ড. নাদিয়া বিনতে আমিন, আব্দুল হক, এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি নিহাদ কবীর, এফবিসিসিআইয়ের উপদেষ্টা মনজুর রহমান, বিল্ডের সিইও ফেরদৌস আরা বেগম প্রমুখ।