কেরানীগঞ্জের এক গ্লাস (কাচ) কোম্পানিতে চাকরি করতেন সুমন। ভালো গ্লাস কাটতে পারতেন এবং ভাঙা গ্লাস দিয়ে মানুষকে বিভিন্ন সময় আক্রমণ ও জখম করার কারণে নাম হয় গ্লাস সুমন। পরবর্তীতে গ্লাস কোম্পানির চাকরি ছেড়ে ‘গ্লাস কোম্পানি’ নামে একটি মাদক সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন তিনি।
কিছুদিন আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওই মাদক সিন্ডিকেটের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। সুমন ও তার সহযোগীরা সন্দেহ করেন, নূরে আলম সায়মন নামে এক তরুণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তথ্য দিয়েছেন।
এর ফলে প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তারা সায়মনকে হাত ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১০ রোববার রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে কেরানীগঞ্জে সুমন ওরফে ‘গ্লাস সুমন’সহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃত অন্য সদস্যরা হলেন: মো. সোহাগ, মো. শরীফ, মো. জনি ও মো. হারুন। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় হত্যার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে র্যাব।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, গত ১৫ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জ এলাকায় নুরে আলম ওরফে সায়মনকে বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র দিয়ে হাত ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় সায়মনের ভাই আরস আলম কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় সাত-আটজন অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। র্যাব ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত সুমন একটি মাদক সিন্ডিকেটের হোতা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কেরানীগঞ্জসহ এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় তিনি ‘গ্লাস কোম্পানি’ নামে একটি মাদক সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। এই চক্রের সক্রিয় সদস্যসংখ্যা ১২ থেকে ১৫।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওই মাদক সিন্ডিকেটের কয়েকজন কারবারিকে কিছুদিন আগে গ্রেপ্তার করে। সুমন ও তার সহযোগীরা এ জন্য ভিকটিম সায়মনকে সন্দেহ করেন। ফলে তারা প্রতিহিংসার বশে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।
ঘটনার কয়েক দিন আগে মুক্তিরবাগ বালুর মাঠ এলাকায় সুমন ও তার সহযোগী সোহাগসহ আরও কয়েকজন হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত পরিকল্পনা করেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন গ্রেপ্তারকৃতরা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৫ জানুয়ারি সুমন ও তার সহযোগীরা সায়মনকে পাশের নির্মাণাধীন ভবন থেকে ধরে নিয়ে আসেন মুক্তিরবাগ বালুর মাঠ এলাকায়। ভিকটিমকে চেপে ধরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার হাত ও পায়ের রগ কেটে দেন তারা। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে সায়মনকে গুরুতর আহত করে তারা পালিয়ে যান। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন সায়মনকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত সুমন হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী এবং হত্যাকাণ্ডের সময় সশরীরে উপস্থিত ছিলেন। তিনি নিজে ভিকটিমের রগ কেটেছেন বলে স্বীকার করেছেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তারকৃত সোহাগ ও শরীফ রগ কাটায় অংশগ্রহণ করেন এবং গ্রেপ্তারকৃত জনি ও গ্লাস সুমন পরবর্তীতে ধরে রাখেন।
র্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃত সুমনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক ও ছিনতাই সংক্রান্ত পাঁচটি মামলা রয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধেও রাজধানীর বিভিন্ন থানায় রয়েছে একাধিক মামলা।