শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে স্বামীর রেখে যাওয়া ভিটেবাড়ি থেকে অঞ্জলী গাঙ্গুলি নামের এক বৃদ্ধাকে মারধর ও ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়ার ঘটনায় বৃদ্ধার নাতনি ও ছেলের বউকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার দুপুরে তাদের আদালতে নেয়া হয়েছে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন নালিতাবাড়ী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বছির আহম্মেদ বাদল।
এর আগে রোববার রাতে বৃদ্ধার ছোট ছেলে অনুজ গাঙ্গুলি থানায় মামলা করার পর ওই দুজনকে তাদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অঞ্জলী গাঙ্গুলিকে তার বড় ছেলের বউ উমা গাঙ্গুলি ও নাতনি অথৈ গাঙ্গুলি ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। পরে জানা যায়, গত ১৪ জানুয়ারি বিকেলে পৌর শহরের উত্তর বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
বৃদ্ধাকে ছুড়ে ফেলার খবর পরে নিউজবাংলাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এর জেরেই রোববার রাতে বৃদ্ধার ছোট ছেলে অনুজ গাঙ্গুলি তার বড় ভাই অসীম গাঙ্গুলি, ভাবি উমা গাঙ্গুলি ও ভাতিজি অথৈ গাঙ্গুলির বিরুদ্ধে থানায় নির্যাতনের মামলা করেন।
ওসি বছির আহম্মেদ বাদল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। রোববার রাতে মামলার পরই মা ও মেয়েকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কিন্তু অসীম গাঙ্গুলি পলাতক রয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে তোলা হয়েছে।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, নালিতাবাড়ীর উত্তর বাজার মহল্লার অমল কান্তি গাঙ্গুলি গত বছর ১৫ মে মারা যান। তার দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী আছেন। তিনি প্রধান সড়কের পাশে ৪ শতাংশ জমিতে বাড়ি ও দোকান রেখে যান।
অমল কান্তির মৃত্যুর পর দুই ছেলে জমি বণ্টন করতে গেলে বড় ছেলে অসীম গাঙ্গুলি বাড়ির সব জমি তার নামে লেখা রয়েছে বলে দাবি করেন। ছোট ভাই অনুজ গাঙ্গুলি বিষয়টি সমাধানের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও সমাজের মুরব্বিদের কাছে আবেদন করেন।
স্থানীয়রা জানান, জনপ্রতিনিধিরা দুই ভাইকে সমান ভাগ করে বাসার সীমানায় ইটের দেয়াল তুলে দেন। এ ছাড়া বাবার জীবদ্দশায় তার কাছ থেকে কৌশলে লিখে নেয়া সব জমির অর্ধেক ছোট ভাইকে লিখে দেয়ার নির্দেশ দেন। অসীম তখন লিখে দিতে রাজি হলেও পরে গড়িমসি শুরু করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তাদের ৭০ বছর বয়সী মা অঞ্জলী গাঙ্গুলি বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত স্বামীর রেখে যাওয়া দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তার বড় ছেলে অসীমের স্ত্রী উমা গাঙ্গুলি ও কন্যা (বৃদ্ধার নাতনি) অথৈ গাঙ্গুলি ধাক্কা দিয়ে পাকা রাস্তায় দাদিকে ছুড়ে ফেলে দেন। বৃদ্ধা রাস্তায় পড়ে মাথা ফেটে গুরুতর আহত হন।
স্থানীয়রা আহত বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে প্রথমে নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তবে অভিযোগের বিষয়ে অসীম বলেন, ‘আমার দোকানের সামনে অবস্থান করায় মাকে সরিয়ে দিতে যাই। এ সময় মা আমাদের লাঠিপেটা করেছেন। আমরা তাকে মারধর করিনি।’