শেষ হলো উত্তেজনাপূর্ণ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। টানা ১৯ দিনের নির্বাচনি উত্তেজনা শেষে আবার চিরচেনা রূপে ফিরেছে ঢাকার নিকটতম এই বন্দরনগরী। নির্বাচনি উত্তেজনা থেকে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচছে শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য খ্যাত শহরটি।
ভোটযুদ্ধে আগের দুই বারের মতো এবারও আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভীকে মেয়র হিসেবে বেছে নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জবাসী।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচনে ১৯২টি কেন্দ্রে আইভীর প্রাপ্ত ভোট ১ লাখ ৫৯ হাজার ৯৭। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার পেয়েছেন ৯২ হাজার ১৬৬ ভোট।
নারায়ণগঞ্জের এবারের নির্বাচনকে পরিচ্ছন্ন ও সুষ্ঠু বলে উল্লেখ করেছেন সবাই। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে বিদায়লগ্নে এমন একটি ভোটের পরিবেশে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন মাহবুব তালুকদার। তার দৃষ্টিতে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের পর এটি ‘সর্বোত্তম’।
প্রচারণা ও ভোটের দিন নারায়ণগঞ্জে ঘটেনি কোনো সহিংসতা। ভোটের পরের দিন নগরীর পরিবেশ যেন আরও শান্ত। নির্বাচন-ভোট নিয়ে কোনো হাঁকডাক নেই, যে যার কর্ম নিয়ে ব্যস্ত।
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায় বলেন, ‘নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের মানুষ শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে বিশ্বাস করে। নির্বাচনের সময় প্রার্থীদের প্রচারণায় পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে মিছিল-স্লোগানে উল্লাস ছিল। গতকাল নির্বাচন হয়ে গেছে। নারায়ণগঞ্জও আগের জায়গায় ফিরে যাচ্ছে।’
তার মতে, নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দাদের সুষ্ঠু মানসিকতা ও তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নিতে পারায় পরিবেশ সুন্দর রয়েছে। সকাল থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলেছে। যারা বাইরে থেকে এসে চাকরি করেন, তারা তাদের কাজে যোগদান করেছেন।
১৩ নম্বর ওয়ার্ডের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী নজরুল মিয়া বলেন, ‘প্রথমে ভাবছিলাম ভোটের দিন জামেলা অইব, কিন্তু আমি এর আগে কখনও এত সুন্দর একটি ভোট দেখিনি। অনেক ভালোভাবে ভোট হইছে, কোনো সমস্যা হয় নাই। সকাল থেকে দোকান খুলছি।’
সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মেহরুন নেছা। তিনি বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা থেকে রেলযোগে নারায়ণগঞ্জে নেমে দেখি পরিবেশটা ঠিক আগের মতোই। সব কিছু স্বাভাবিক রয়েছে। এক দিনের মধ্যে ঠিক আগের সেই নারায়ণগঞ্জ দেখতে পেলাম। ভোট সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়েছে, এ কারণেই পরিবেশটা ভালো আছে।’
১৮ নম্বর ওয়ার্ডের রিকশাচালক ইউসুফ আলী বলেন, ‘ভোট শেষ হইয়া গেছে। তাই সকাল থ্যাইকা গাড়ি নিয়া বের হইছি। শহরে এখনও পোস্টার, ফেস্টুন আছে, কিন্তু পরিবেশটা আগের মতো।
‘আমি এই শহরের '১১ ও '১৬ সালের নির্বাচনে ভোট দিছি, কিন্তু এবারের ভোটের মতো ভালো লাগে নাই। দেখেন না, ভোটের এক দিন পরই আগের নারায়ণগঞ্জ হইয়া গেছে।’
পোশাক কারখানার শ্রমিক রোকসানা বলেন, ‘গার্মেন্টসে কাজে যাইতাছি ভাই। ভোটের জন্য গতকাল কারখানা বন্ধ ছিল, আজকে থেকে সব কিছু আগের মতো হয়ে গেসে। গত কিছুদিন ঘুম ভাঙত মিছিল আর নির্বাচনের গান শুইন্না। ভোট শেষ, আজ সকালে আগের মতো ঘুম ভাঙছে।’
সারা দেশে ইউপি নির্বাচনের পর বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা হলেও নারায়ণগঞ্জে ছিল শান্তির পরিবেশ। প্রার্থী যে যার মতো তাদের পরাজয় মেনে নিয়েছেন। এতে স্বস্তি পাচ্ছেন ভোটার ও নাগরিকরা। এরপরও কিছু কিছু এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান দেখা গেছে।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তির ভোট শেষ হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে ভালো হয়েছে। কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তাই নারায়ণগঞ্জ এখন শান্তি বইছে।’