নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হ্যাটট্রিক জয়ের পর জীবনের শেষ দিনটিও নগরবাসীর জন্য উৎসর্গ করার বাসনা প্রকাশ করেছেন মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী।
নির্বাচনে তিনি উন্নয়নের যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেগুলোও পূরণ করার অঙ্গীকার করেছেন তিনি। ভোটগ্রহণ ধীরগতি না হলে ভোটের ব্যবধান অন্তত এক লাখ হতে পারত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
টানা তৃতীয় জয়ের পর রোববার রাতে নগরীর দেওভোগে নিজ বাড়ির বারান্দায় বসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আইভী।
সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘তারা (নারায়ণগঞ্জবাসী) আমাকে আগামী পাঁচ বছর কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। আগামী পাঁচ বছর আমি আমার নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করতে চাই। আমি আমার জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত তাদের উৎসর্গ করতে চাই।’
নিজের জয়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি আরও বলেন, ‘এই জয় আমার মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনার জন্য। এই জয় নারায়ণগঞ্জের সব নিবেদিত প্রাণের, যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে ভোট দিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করেছেন। এটি মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের জয়। আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমার নেত্রীর প্রতি, যিনি আমাকে নৌকা তুলে দিয়েছেন। আমার দলের প্রতি, যারা আমার সঙ্গে কাজ করেছেন।’
নারায়ণগঞ্জবাসীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আইভী বলেন, ‘সব কটি নির্বাচন ছিল চ্যালেঞ্জিং। একেকটার ধরন একেক রকম ছিল। আমি এত চ্যালেঞ্জের কথা বলতে চাই না। নির্বাচন মানেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রতিযোগিতা। সব অতিক্রম করে এ জয়টা নিয়ে আসার মধ্যেই আমাদের সাফল্য।’
আর জনগণের আস্থাকে নিজের সাফল্যের ‘নেপথ্য নায়ক’ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
নবনির্বাচিত মেয়র বলেন, ‘আমার যত কিছু হয়েছে বা অতীতেও যে বিজয় হয়েছে, সবকিছুর মূলে কিন্তু আমার জনশক্তি, জনস্রোত এবং জনসমর্থন। জনসমর্থন যদি না থাকত, তাহলে আমি নারায়ণগঞ্জে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম না।’
কেন এই জনসমর্থন তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন নৌকা প্রতীকের এই বিজয়ী প্রার্থী। তিনি বলেন, ‘এটা সত্য যে, জনগণের যে আস্থা আমার প্রতি, তার কারণ মানুষকে কখনও মিথ্যে বলিনি, কখনও অযথা আশ্বাস দিইনি। আমি গতানুগতিকের বাইরে গিয়ে আপনাদের সঙ্গে মিশেছি, কাজ করেছি। যেটা পেরেছি, সেটা করেছি; যেটা পারিনি, সেটা বলিনি। সবচেয়ে বড় কথা হলো নিঃস্বার্থভাবে মানুষকে ভালোবেসেছি। মানুষ প্রতিবারই আমাকে প্রতিদান দিয়েছে।’
দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতিও কৃতজ্ঞতা ফুটে উঠেছে তার কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘আমার দল আমার প্রতি আস্থা রেখেছে। আমার নেত্রী আমাকে নৌকা দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জবাসী তাকে বিমুখ করেনি। এই নারায়ণগঞ্জ প্রমাণ করল- এটা আওয়ামী লীগের ঘাঁটি এবং বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের জন্ম এই নারায়ণগঞ্জেই হয়েছিল।
‘তারই ধারাবাহিকতা রক্ষা পেরেছি বলে নিজেকে গর্বিত মনে করি। শেখ হাসিনার একজন ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে সারা জীবন আমি এই দল করব। জয় বাংলা বলব। কিন্তু সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে আমি নারায়ণগঞ্জের মানুষের সেবা করব। দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে জনকল্যাণে কাজ করব।’
সোমবার ভোটের মাঠে কাকা হিসেবে অভিহিত করা নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাতি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের বাসায় যাওয়ার ঘোষণা দেন আইভী। তিনি বলেন, ‘আমি কাকার বাসায় যাব। উনি অনুমতি না দিলেও আমি যাব।’
তৈমূর আলমের আনা অভিযোগের উত্তরও দেন তিনি। আইভী বলেন, ‘আমি তো জানি না উনি কী অভিযোগ করেছেন। কী হয়েছে সেটা তো আপনারা দেখেছেন। এত গণমাধ্যম, আমি তো আগে কখনও দেখিনি। আমার গত দুটি নির্বাচনে গণমাধ্যমের এত উপস্থিতি দেখিনি। আপনারা সারাদিন নারায়ণগঞ্জে ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রচুর সদস্য ছিলেন। ইঞ্জিনিয়ারিংটা কোথায় হলো?’
ভোটের গতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সকাল থেকে অভিযোগ করেছি ভোটগ্রহণ ধীরগতিতে হচ্ছে। যদি ভোট স্লো না হতো, তাহলে এক লাখ ভোটে ডিফারেন্স হতো।’
সর্বশেষে নারায়ণগঞ্জবাসীর উদ্দেশে আইভী বলেন, ‘তারা আমাকে সুযোগ দিয়েছেন আমি কাজ করব। উন্নয়ন যেগুলো করেছি, সেগুলো করব। যেগুলো বলেছি, সেগুলো করার চেষ্টা করব। আর তৈমূর কাকা যেগুলো বলেছেন, সেগুলোও চেষ্টা করব, তার সঙ্গে কথা বলে।’