বাংলাদেশে সার্কুলার (বৃত্তাকার) অর্থনীতির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এটি বিকাশের জন্য অপরিহার্য হচ্ছে পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প। এটি আনুষ্ঠানিক শিল্পের মর্যাদা পাওয়া উচিত বলে মনে করেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
রোববার মতিঝিলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘সার্কুলার অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
সার্কুলার বা বৃত্তাকার অর্থনীতি হচ্ছে সম্পদ পুনঃব্যবহার করা। একে রি-সাইক্লিং শিল্পও বলে।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী জানান, সার্কুলার অর্থনীতি নিয়ে কাজ করতে মন্ত্রণালয়ে আলাদা একটি সেল গঠন করা হবে। এই সেলে সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধিদের যুক্ত করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ুমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে ৪০ শতাংশ প্লাস্টিক পুনঃপ্রক্রিয়াজাত হচ্ছে। বাকি ৬০ শতাংশকেও এর আওতায় আনতে হবে।
টেকসই উন্নয়নে সার্কুলার অর্থনীতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ২০৩০ সালে এসডিজি অর্জন, ২০৩১ সাল নাগাদ উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হবার লক্ষ্য রয়েছে বাংলাদেশের।
এসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আর সে জন্য সার্কুলার অর্থনীতির বিকাশ অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
তিনি বলেন, দেশে নির্মাণ শিল্প, টেক্সটাইল, মোটরগাড়ি, কৃষি, আসবাব, তেল ও গ্যাস, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতকে সার্কুলার ইকোনমিতে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ রয়েছে।
ব্যবসায়ীদের এ শীর্ষ নেতা আরও বলেন, বাংলাদেশে মাথাপিছু বার্ষিক প্লাস্টিক ব্যবহার মাত্র ৭ থেকে ৮ কেজি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর পরিমাণ ১৩০ কেজি। পুনঃপ্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে প্লাস্টিক বর্জ্যকে পুনরায় সম্পদে রূপান্তর করছে দেশটি। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো সার্কুলার অর্থনীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে। ইউরোপীয় কমিশন এরই মধ্যে সার্কুলার অর্থনীতি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করেছে। এ ছাড়া চীন, ব্রাজিল, কানাডা ও জাপান তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রুপান্তরের জন্য কাজ করছে। বাংলাদেশেরও একই উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সুজাউদ্দিন। তিনি জানান, যে হারে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার হচ্ছে, তাতে কয়েক বছরের মধ্যে মূল্যবান বিভিন্ন খনিজের মজুদ শেষ হয়ে যাবে। তবে সম্পদের পুনঃব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে এ বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব।
এই খাতকে শিল্প হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিলে দেশের সার্কুলার অর্থনীতির বিকাশ আরও গতিশীল হবে বলে জানান তিনি।
প্যানেল আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র এনভায়রনমেন্টাল স্পেশালিস্ট ইয়ুন জো অ্যালিসন ই বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি খুবই প্রশংসনীয়। কিন্তু এটি পরিবেশবান্ধব প্রবৃদ্ধির দিকে যাবে কিনা এখন তা নির্ধারণ করার সময় এসেছে। কেননা, সম্পদের অবক্ষয় শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াবে কিংবা প্রবৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, বরং ভবিষ্যতকেও চরম ঝঁকিতে ফেলবে। টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য আরও বিনিয়োগ করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
প্যানেল আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের উপ-পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজান আর খান, এফবিসিসিআই-এর প্যানেল উপদেষ্টা ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ কে এনামুল হক।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই-এর সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী, মো. হাবীব উল্লাহ ডনসহ অন্যান্য পরিচালকরা।
সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন এফবিসিসিআই-এর মহাসচিব মাহফুজুল হক।