প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) আবেদনকারীদের মধ্যে শেয়ার বরাদ্দ দিলো ইউনিয়ন ব্যাংক। ১০ হাজার টাকা আবেদনের বিপরীতে ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে ৭৯২টি শেয়ার। প্রবাসী আবেদনকারীরা পেয়েছেন ৫৩৭টি শেয়ার।
টাকার অংকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের দিতে হবে ৭ হাজার ৯২০ টাকা আর প্রবাসী আবেদনকারীদের আবেদনের বিপরীতে কাটা হবে ৫ হাজার ৩৭০ টাকা। রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ব্যাংকটির শেয়ার বরাদ্দ শেষে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এম. সাইফুর রহমান মজুমদার, ইউনিয়ন ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান, ডিএসইর সিআরও (ইনচার্জ) ও উপ-মহা ব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম ভূইয়া, ডিএসইর ট্রেনিং অ্যাডেমির প্রধান ও উপ-মহা ব্যবস্থাপক আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ।
গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে আইপিও আবেদনের নতুন নির্দেশনা কার্যকর করে বিএসইসি। যেখানে আবেদন করলেই শেয়ার পাবার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। তবে এজন্য নূন্যতম ২০ হাজার টাকার বিনিয়োগ থাকতে হবে পুঁজিবাজারে।
সোনালী লাইফকে দিয়ে যখন আইপিওতে প্রথম সবার জন্য শেয়ারের ব্যবস্থা চালু হয়, সে সময় থেকে ন্যূনতম ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আবেদনের সুযোগ দেয়া হয় একেকজন বিনিয়োগকারীকে। পরে কেবল ১০ হাজার টাকার শেয়ারের জন্য আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়।
ইউনিয়ন ব্যাংককে গত ৫ সেপ্টেম্বর দুই শর্তে পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
শর্ত হিসেবে বলা হয়, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তির আগে ব্যাংকটি কোনো প্রকার লভ্যাংশ ঘোষণা, অনুমোদন বা বিতরণ করতে পারবে না। এছাড়া ব্যাংকটিকে ২০২১ সালের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।
গত এক বছরের বেশি সময়ে ইউনিয়ন ব্যাংক সহ মোট তিনটি ব্যাংক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এর আগে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে লেনদেন শুরু করেছে।
ইউনিয়ন ব্যাংক পুঁজিবাজারে মোট ৪২ কোটি ৮০ লাখ শেয়ার ছেড়ে ৪২৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালু হবে ১০ টাকা। উত্তোলন করা টাকা দিয়ে ব্যাংকটি এসএমই ও প্রজেক্ট অর্থায়ন, সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয়, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও আইপিওর করতে খরচ করবে।
২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী পুনর্মূল্যায়ন ছাড়া নেট অ্যাসেটভ্যালু ১৬ টাকা ৩৮ পয়সা। শেয়ারপ্রতি আয় ১ টাকা ৭৭ পয়সা। বিগত ৫ বছরের ভারিত গড় হারে শেয়ারপ্রতি আয় ১ টাকা ৮২ পয়সা।
ব্যাংকটিকে পুঁজিবাজারে আনতে ইস্যু ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেছে প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
কোন কোম্পানির আবেদনে কত শেয়ার মিলেছে
লটের বদলে আইপিওতে সবার জন্য শেয়ার ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত একেকজন সাধারণ বিনিয়োগকারী প্রতিটি আবেদনের বিপরীতে ৫৪টি শেয়ার পেয়েছেন বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের।
বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির একেকটি শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পেয়েছেন ২৯ টাকা করে। এই হিসাবে প্রতিজনের লেগেছে ১ হাজার ৫৬৬ টাকা।
৬০টি করে শেয়ার পেয়েছেন সাউথবাংলা ব্যাংকের বিনিয়োগকারীরা। এ জন্য ১০ হাজার টাকা আবেদন করলেও বিনিয়োগকারীর সেই আবেদন থেকে কেটে নেয়া হয়েছে ৬০০ টাকা।
সর্বোচ্চ ৪০টি করে শেয়ার পাওয়া গেছে একটি পেস্ট্রিসাইডসের। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের এই শেয়ারের বিপরীতে কেটে রাখা হয়েছে ৪০০ টাকা।
সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার পাওয়া গেছে ১৯টি করে, বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে কেটে নেয়া হয়েছে ১৯০ টাকা আর একেকজন সোনালী লাইফের শেয়ার বরাদ্দ পেয়েছেন ১৭টি করে, একেকজনের কাছ থেকে কাটা হয়েছে ১৭০ টাকা।
গত ১ এপ্রিল থেকে আইপিওতে সবার জন্য শেয়ার বরাদ্দের পদ্ধতি চালু হওয়ার আগে স্থিরমূল্যে আইপিওতে আসা বিনিয়োগকারীরা ৫০০টি শেয়ার বরাদ্দের জন্য আবেদন করতেন ৫ হাজার টাকায়। আর বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে যেসব কোম্পানি শেয়ার ইস্যু করেছে, সেগুলোর আইপিওতে টাকার পরিমাণ ভিন্ন হতো।
ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের আবেদনে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পেয়েছিলেন ৩০টি শেয়ার। আর প্রবাসী আবেদনকারীরা পেয়েছিলেন ২২টি শেয়ার।
ইউনিয়ন ব্যাংকের আগে সর্বশেষ ১১ জানুয়ারি শেয়ার বরাদ্দ দেয়া হয় বিডি থাই ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানির। সেখানে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ১০ হাজার টাকায় আবেদনের বিপরীতে শেয়ার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৬টি, প্রবাসীদের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২০টি।