সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর উপাচার্যের নির্দেশে হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।
ক্যাম্পাসে পুলিশ-শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলা প্রায় ৩০ মিনিটের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গুলির ঘটনার পর রোববার সন্ধ্যায় ফটকে তালা ঝুলিয়ে বাইরে অবস্থান নিয়ে রেখেছেন তারা। উপাচার্য ও পুলিশের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিচ্ছেন।
ক্ষুদ্ধ ছাত্র সাত্তার আহমদ বলেন, ‘পুলিশ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করেছে। ছাত্রীদের মারধর করেছে। গুলি ছুড়েছে।ভিসির নির্দেশেই এই হামলা চালানো হয়েছে। এর বিচার চাই আমরা।’
তিনি জানান, তিন দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
শিক্ষার্থীরা ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিলেও ভেতরে অবস্থান নিয়ে রেখেছে পুলিশ; আছেন সংবাদমাধ্যম কর্মীরাও।
এই বিষয়ে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সন্ধ্যায় যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ জানান, উপাচার্যের বাসভবনে চলছে জরুরি সিন্ডিকেট সভা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করতে গিয়েছিলাম। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরা আলোচনার চেষ্টা করি, কিন্তু তারা আমাদের উপর ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করে। এ কারণে পুলিশ বাধ্য হয়ে লাঠিচার্জ করে এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে।’
এর আগে সন্ধ্যায় গুলি ছোড়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করলেও রাতে জানান, পুলিশ ২১টি সাউন্ড গ্রেনেড ও ৩০ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়েছে।
প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা হলের ছাত্রীরা বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে তারা সরে যান। দাবি পূরণ না হওয়ায় শনিবার সন্ধ্যায় ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়ক আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন।
মধ্যরাতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সরে গেলেও রোববার সকাল থেকে ফের শুরু হয় তাদের বিক্ষোভ। তাতে যোগ দেয় সহপাঠীরাও।
বেলা ৩টার দিকে নিজ কার্যালয় থেকে বের হয়ে বাসভবনের দিকে যাওয়ার পথে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যান আন্দোলনকারী ছাত্রীরা। এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে উপাচার্যকে ঘেরাও করে স্লোগান দিতে থাকেন তারা। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় আইআইসিটি ভবনে গিয়ে অবস্থান নেন উপাচার্য ফরিদ।
ভবনের বাইরে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি।
বিকেল ৪টার দিকে সেখানে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নিলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তারা ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। কোষাধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম ও অন্য শিক্ষকরা গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করেন।
উত্তেজনা বাড়তে থাকলে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। শিক্ষার্থীরাও ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। এরপর শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।
শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে কয়েকটি রাবার বুলেট ছোড়া হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ গুলিবিদ্ধ হন।
এর মধ্যেই বিক্ষোভকারীদের আইআইসিটি ভবন থেকে হটিয়ে উপাচার্যকে বের করে তার বাসভবনে নিয়ে যায় পুলিশ।
মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ সে সময় জানান, পুলিশের গুলিতে অধ্যাপক জহির গুলিবিদ্ধ হননি। ওই গুলি কারা ছুড়েছে তা তিনি জানেন না। তাকে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এক নারী কনস্টেবলও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ইটের আঘাতে তিনিও আহত হয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলমগীর কবীর জানান, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় শিক্ষক, পুলিশ ও শিক্ষার্থীসহ অন্তত অর্ধশত আহত হয়েছে। তাদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রক্টর আরও জানান, গুলিবিদ্ধ অধ্যাপক জহিরকে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি শঙ্কামুক্ত।