চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তদের রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা কমে যাচ্ছে। রোগীর ডায়রিয়া ও বমি উপসর্গও দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন টাইফয়েডেও।
এর আগে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এমন উপসর্গ কখনও দেখা যায়নি। এসব উপসর্গ করোনার নতুন কোনো ধরনের কারণে হতে পারে বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকরা।
তবে বন্দরনগরীতে পাওয়া করোনার বর্তমান নমুনাগুলোর জিনোম সিকোয়েন্স এখনও সেভাবে হয়নি। ফলে সেখানে নতুন কোনো ধরন সংক্রমণ ঘটাচ্ছে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নন চিকিৎসকরা।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বী এ বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের এখানে জিনোম সিকোয়েন্স করার সুবিধাটা অত বেশি না। তাই রোগীদের উপসর্গ দেখে আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি।’
ফজলে রাব্বী আরও বলেন, ‘সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়া করোনা আক্রান্ত নতুন রোগীদের মাঝে ডায়রিয়া ও বমির আধিক্য দেখা যাচ্ছে। এমনকি কেউ কেউ টাইফয়েড পজিটিভও হচ্ছেন। এদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ঠিক থাকলেও রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা হ্রাস পাচ্ছে, যা আগে তেমন দেখা যায়নি।’
রোববার বিকেলে একই রকম উপসর্গের বিবরণ দিয়ে করোনার নতুন ধরনের সন্দেহ পোষণ করেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল সেন্টারের (সিএমসি) চিকিৎসক কামরুল আলম।
তিনি বলেন, ‘নগরীর বাসিন্দা ৬৮ বছরের নাসিমা বেগম সাত দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। সঙ্গে তীব্র ডায়রিয়া ও বমি। হাসপাতালে ভর্তির পর পরীক্ষায় দেখা যায়, তিনি করোনার পাশাপাশি টাইফয়েডেও আক্রান্ত।’
ডা. কামরুল জানান, নাসিমার ক্ষেত্রে রেস্টলেস বা অস্থিরতা ছাড়াও ডেলেরিয়ামের উপসর্গ ছিল। ডেলিরিয়ামে রোগীর মানসিক অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন হয়। তার রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা কমে হয় ১১৬ মিলিমোল। কিন্তু তার অক্সিজেনের মাত্রা ছিল স্বাভাবিক।
একইভাবে ৭১ বছরের মহিউদ্দিন আহমেদ করোনা পজিটিভ হওয়ার পর বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। শুরুতেই কয়েক দফা তার বমি ও ডায়রিয়া হয়। রাতের বেলা হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যান। মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে শুরু করে। একটু পর আবার ঠিক হয়ে যায়।
এমন অস্বাভাবিকতা দেখে স্বজনরা মহিউদ্দিনকে (সিএমসি) হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরীক্ষা করে দেখা যায়, তার রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা ১২৬ মিলিমোলে নেমে এসেছে। কিন্তু অক্সিজেন স্যাচুরেশন স্বাভাবিক আছে।
এ দুটি ঘটনার বিবরণ দিয়ে ডা. কামরুল করোনাভাইরাসের ধরন বদলে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘করোনার আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোতেও ডায়রিয়া বা বমি হতো। কিন্তু বর্তমানে এই লক্ষণগুলো প্রকট আকারে দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে টাইফয়েড ও রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা কমে যাওয়া হতে পারে নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্টের কারণেই।’
তবে নতুন ধরনের বিষয়ে তিনি এখনও নিশ্চিত নন। যেহেতু এখন পর্যন্ত পাওয়া নমুনাগুলোর জিনোম সিকোয়েন্সও সেভাবে হয়নি।
চিকিৎসকদের মতে, রক্তের ঘনত্ব নির্ভর করে রক্তের সোডিয়ামের পরিমাণের ওপর। তাই রক্তে কোনো কারণে সোডিয়ামের মাত্রা এদিক-সেদিক হলে রক্তের ঘনত্ব পাল্টে যায়। রক্তে সোডিয়ামের স্বাভাবিক মাত্রা থাকে প্রতি লিটারে ১৩৬-১৪৫ মিলিমোল। রক্তে সোডিয়াম কমে গেলে তাকে হাইপোনেট্রেমিয়া বলা হয়। হাইপোনেট্রেমিয়ায় বমি ভাব, নিস্তেজ ভাব, দুর্বলতা, অসংলগ্ন কথাবার্তা, চিন্তাভাবনা থেকে শুরু করে খিঁচুনি; এমনকি অজ্ঞান হয়ে পড়ার মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে।
নতুন উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের চিকিৎসা কীভাবে হচ্ছে জানতে চাইলে ডা. কামরুল আলম বলেন, ‘করোনা চিকিৎসার গাইডলাইন অনুযায়ী আমরা চিকিৎসা দিই। তবে নতুন ভ্যারিয়েন্টের জন্য নতুন কোনো গাইডলাইন আমরা এখনও পাইনি। নতুন যে রোগীগুলো পেয়েছি, তাদের উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দিচ্ছি। পানিশূন্যতা দূর করতে আর লবণের ঘাটতি কাটাতে তাদের স্যালাইন দেয়া হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. অলক নন্দী বলেন, ‘এই ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে স্যালাইন খাওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, বমি হলে আর স্যালাইন খেয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে না। তখন রোগীকে সুইয়ের মাধ্যমে স্যালাইন দিতে হবে। বমি হলে টেস্ট করতে হবে। আর চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আর এমনিতে পানিশূন্যতা যাতে তৈরি না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’