বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

একমাত্র ‘ভাঙা’ নেবুলাইজারে শত শত রোগীর চিকিৎসা

  •    
  • ১৬ জানুয়ারি, ২০২২ ১৭:০৬

হাসনা হেনা বলেন, ​‘বাচ্চার জ্বর, শ্বাসকষ্ট। ডাক্তার বলেছে প্রতিদিন নিয়ম করে নেবুলাইজার দিতে। কিন্তু নেবুলাইজার দিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে। হাসপাতালে একটি নেবুলাইজার আছে; তাও আবার ভাঙা। একজন ধরে আরেকজন দেয়। ফলে বাচ্চারা ঠিকমতো সেবা পাচ্ছে না।’

উপকূলীয় জেলা ভোলায় শীত কিছুটা বেড়েছে। কয়েক দিন ধরে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শীতের তীব্রতা যেন বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ। এতে হাসপাতালে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। হাসপাতালে নিউমোনিয়াসহ সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি।

এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়ার কথা জানিয়েছেন ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী-স্বজনরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালে একটিমাত্র নেবুলাইজার; তাও আবার ভাঙা। এতে নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্তদের পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে। নির্দিষ্টসংখ্যক বেডের বিপরীতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় শিশুরা ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছে না। এ ছাড়া হাসপাতালের পরিবেশ নিয়েও অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে শয্যাসংখ্যা ২৪। অথচ গড়ে ভর্তি থাকছে ৫০ থেকে ৭০ জন। ফলে এক বেডে দুই থেকে তিনজন করে রাখতে হচ্ছে। হঠাৎ রোগীর চাপ বাড়ায় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক-নার্সদের। তাই জনবল বাড়ানোর দাবি তাদের।

ভোলা সদর হাসপাতাল ঘুরে জানা যায়, হাসপাতালে দুই সপ্তাহ ধরে ডায়রিয়া-নিউমোনিয়াসহ সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে উন্নত চিকিৎসার অন্য তাদের এখানে নিয়ে আসছেন স্বজনরা।

তেমনি একজন তজুমদ্দিন উপজেলা হাসপাতাল থেকে আসা শেফালি বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাচ্চার ৫ দিন ধরে শ্বাসকষ্ট। তাই তজুমদ্দিন থেকে রেফার করে ভোলা হাসপাতালে পাঠাইছে।

‘এখানে ডাক্তার ৬ মাসের আমার এই বাচ্চাকে নেবুলাইজার দিতে বলছে। কিন্তু এখানে একটিমাত্র নেবুলাইজার, তাও আবার ভাঙা। এতে বাচ্চাদের শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা দিতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সিরিয়াল দিয়ে সেবা নিতে হচ্ছে।’

অনেক ঝুঁকির মধ্যে থেকে সেবা নিতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে আরও দুটি নেবুলাইজার দিলে ভর্তি হওয়া রোগীরা স্বাভাবিকভাবে সেবা নিতে পারত।’

আলীনগর থেকে আসা হাসনা হেনা তার ছেলে ৮ মাস বয়সের রাইহানকে ভর্তি করেছেন এ হাসপাতালে। ভাঙা নেবুলাইজারে দুর্ভোগের কথা জানালেন তিনিও। বলেন, ​‘বাচ্চার জ্বর, শ্বাসকষ্ট। ডাক্তার বলছে প্রতিদিন নিয়ম করে নেবুলাইজার দিতে। কিন্তু নেবুলাইজার দিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। হাসপাতালে একটি নেবুলাইজার আছে; তাও আবার ভাঙা। একজন ধরে আরেকজন দেয়। ফলে বাচ্চারা ঠিকমতো সেবা পাচ্ছে না।’

চিকিৎসা নিতে আসা অনেকে আবার হাসপাতালের পরিবেশ নিয়েও অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।

শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৫ মাসের রাফসানের বাবা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভোলা সদর হাসপাতালের পরিবেশ খুবই নোংরা। এখানে সুস্থ মানুষ আসলে অসুস্থ হয়ে যাবে। হাসপাতালে আসলে বমি আসে। ওয়ার্ডে এত দুর্গন্ধ যে বাচ্চার পাশে বসে থাকই অসম্ভব হয়ে পড়ে।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল সরকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য এত বরাদ্দ দেয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না। শিশু ওয়ার্ডের অবস্থা খুবই নাজুক। এক বেডে একজনের বিপরীতে তিনজন করে রাখা হচ্ছে। ছোট্ট বাচ্চা, কিছু তো বলতেও পারে না। অনেক কষ্ট হয়।

‘তিন দিন ধরে হাসপাতালে আছি। এখানে এত রোগীর চাপ। ঠিকমতো হাঁটাচলার জায়গা নেই।’ যোগ করেন তিনি।

নিউজবাংলাকে হাসপাতালের সিনিয়র নার্স মৌসুমি রায় বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ায় প্রতিদিন ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলছে। বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। শিশু ওয়ার্ডের শয্যাসংখ্যা ২৪। অথচ গড়ে ভর্তি থাকছে ৫০ থেকে ৭০ জন। ফলে এক বেডে দুই থেকে তিনজন করে রাখতে হচ্ছে।’

হঠাৎ রোগীর চাপ বাড়ায় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক-নার্সদের। তাই জনবল বাড়ানোর দাবি তাদের।

নিউজবাংলাকে ভোলা সদর হাসপাতাল সিনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু বিশেষজ্ঞ) ডা. সালাউদ্দিন জানান, গত এক সপ্তাহে ৪ শতাধিক শিশু ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ভোলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে। মাঝে মাঝে বৃষ্টিও হচ্ছে। এতে হঠাৎ ঠান্ডাজনিত শিশু রোগীর সংখ্যা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে।’ এ অবস্থায় অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি শিশুদের বাড়তি যত্ন নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

এসব বিষয়ে নিউজবাংলাকে ভোলা সদর হাসপাতালের নবনিযুক্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. লোকমান হাকিম বলেন, ‘শীত বাড়ায় হাসপাতালে রোগীর চাপ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কিছুটা বেশি। রোগীর চাপ সামাল দিতে চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিশু ওয়ার্ডে একটিমাত্র নেবুলাইজার রয়েছে, এটা ঠিক। আশা করি, দ্রুত এখানে আরও একটি নেবুলাইজার মেশিনের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা নিতে কোনো সমস্যা না হয়।’

হাসপাতালের পরিবেশের অভিযোগের বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক বলেন, ‘হাসপাতালের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য মনিটরিং বাড়ানো হবে। পাশাপাশি জনবল সংকটের বিষয়টি জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে; যেন দ্রুত পর্যাপ্তসংখ্যক নার্স নিয়োগ দেয়া হয়।’

এ বিভাগের আরো খবর