সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত ছাত্রীরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে রোববার দুপুরে অবরুদ্ধ হন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
ভবনের বাইরে অবস্থান নিয়ে প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবি আদায়ে স্লোগান দিচ্ছেন বেগম সিরাজুন্নেসা হলের ছাত্রীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বেলা তিনটার দিকে আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক জহির উদ্দিন ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি তুলশি কুমার দাস। তারা দাবি পূরণের বিষয়ে সময় চাইলে ছাত্রীরা তা প্রত্যাখান করেন।
বেলা ৩টা ১০ মিনিটে নিজ কার্যালয় থেকে বের হয়ে বাসভবনের দিকে যাচ্ছিলেন উপাচার্য। সে সময় তার সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যায় ছাত্রীরা। এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে ঘেরাও করে স্লোগান দিতে থাকেন তারা। এক পর্যায়ে ছাত্রীদের ধাওয়ায় উপাচার্য আইআইসিটি ভবনে গিয়ে অবস্থান নেন।
আন্দোলনকারি শেগুগতা শারমিন বলেন, ‘আমাদের দাবি পুরণ না করে উপাচার্য সময়ক্ষেপণ করছিলেন। আমরা তার সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম, কিন্তু তিনি আমাদের দেখেই দৌড়ে আইআইসিটি ভবনে গিয়ে গেট বন্ধ করে দেন। আমরা এখন ওই ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছি।’
বিকাল ৪টার দিকে আইআইসিটি ভবনের সামনে পুলিশ সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে। তাদের দেখে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তারা ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘উপাচার্যকে অবরুদ্ধের খবর পেয়ে আমরা এখানে এসেছি। ছাত্রীদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।’
তিন দফা দাবি আদায়ে চতুর্থ দিনের মতো চলছে সিরাজুন্নেসা হলের ছাত্রীদের এই আন্দোলন। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সহপাঠীরাও।
শনিবার মধ্যরাতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে রোববার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেয় তারা।
এতে বন্ধ হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সড়কের যান চলাচল। কোনো গাড়ি ক্যাম্পাসে প্রবেশ বা বের হতে পারছে না।
তাদের দাবির মধ্যে আছে, সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজা ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ, অবিলম্বে হলের যাবতীয় অব্যবস্থাপনা দূর করে সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রাধ্যক্ষ কমিটি নিয়োগ দেয়া।
শুক্রবার উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে দাবি মেনে নেয়ার জন্য শনিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সময় বেধে দেয় ছাত্রীরা। এরপর শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরের সামনে ফের অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন তারা।
রাতে আন্দোলনরত ছাত্রীদের সাথে কথা বলতে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম ও প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবির।
তারা ছাত্রীদের দাবি পর্যায়ক্রমে মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়ে তাদের হলে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। তবে ছাত্রীরা প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত হলে না গিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানায়।
শনিবার ছাত্রীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে শাবি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজা অসুস্থতার কারণে ছুটিতে থাকায় হলে ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ হিসেবে আরেকজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আর ছাত্রীদের সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে।’