দুই সপ্তাহ ধরে দেশে করোনা সংক্রমণ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এক সপ্তাহে সংক্রমণের হার ৮ শতাংশ বেড়ে ১৪ দশমিক ৬৬ শতাংশে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে করোনা রোধে নতুন করে বিধিনিষেধ জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অথচ এ গুলোর একটিও মানা হচ্ছে না বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। সেখানে হোটেল-রেস্তোরাঁ, বাসস্ট্যান্ড-রেলস্টেশন, মার্কেট ও গণপরিবহনসহ সর্বত্র মানুষ চলাফেরা করছে মাস্কবিহীন অবস্থায়। কারও মুখে আবার মাস্ক থাকলেও নেই তার সঠিক ব্যবহার।
এমন পরিস্থিতি দেখে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘বিধিনিষেধ কোথায় চট্টগ্রামে?’
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন মো. ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘বিধিনিষেধের মধ্যেও মানুষ উদাসীন মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধির ক্ষেত্রে। অথচ ১১ দফা নির্দেশনার মূলই হচ্ছে-মাস্কের ব্যবহার।
‘এ ছাড়া রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ, আবাসিক হোটেলে থাকতে করোনা টিকার সনদ প্রদর্শনের নির্দেশনা থাকলেও সে রকম কিছুই মানা হচ্ছে না।’
সরেজমিনে শনিবার দুপুরে নগরীর জিইসির মোড়ে হোটেল জামানের সামনে দেখা যায়, যে যার মতো ভেতরে ঢুকে খাবার খাচ্ছেন। বিধিনিষেধের বালাই নেই। প্রবেশের সময় টিকা সনদের বিষয়েও কিছু বলা হচ্ছে না।
পতেঙ্গায় ঘুরতে আসা পর্যটকদের বেশির ভাগেরই মুখে মাস্ক নেই। ছবি: নিউজবাংলা
হোটেলের ক্যাশিয়ার আমিনুল হক এ বিষয়ে বলেন, ‘এখানে আসা সবাই পরিচিত ও শিক্ষিত। এভাবে কি টিকার সনদ দেখা যায়?’
নগরীর আগ্রাবাদ আক্তারুজ্জামান সেন্টারের সামনের সবগুলো রেস্তোরাঁয় স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই খাবার নিতে দেখা গেছে উপস্থিত সবাইকে।
এ সময় নগরীর অভিজাত মার্কেটগুলো বন্ধ থাকলেও তার চারপাশে দোকান, ফুটপাত ও সড়কে ভ্যানগাড়িতে করে বিকিকিনিতে প্রচুর ভিড় জমে। সেখানেও দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতা অধিকাংশই মাস্কবিহীন। এ চিত্র দেখা যায়, নিউমার্কেট মোড়, আগ্রাবাদ মোড়, মুরাদপুর, জিইসির মোড়, বহদ্দারহাট মোড় ও বহদ্দারহাট স্বজন সুপার মার্কেটের সামনে।
এ ছাড়া বিধিনিষেধের মধ্যে সকাল থেকে মানুষের ভিড় জমতে থাকে সাত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। দুপুর গড়ার সঙ্গে এ সংখ্যা আরও বাড়ে।
পতেঙ্গা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘ছুটির দিনগুলোতে সকাল থেকে সৈকতে আসতে শুরু করে পর্যটকরা। বিকেলের দিকে এ সংখ্যা লাখ পেরিয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘শীতকাল আমাদের ব্যবসার সময় হলেও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে মানুষের সমাগম হোক সেটা আমরা চাই না। নিজেদের জায়গা থেকে আমরা সচেতন থাকার চেষ্টা করছি।’
এ দিকে সরেজমিনে বার্মিজ মার্কেটের পাশে ব্যারিকেড দিয়ে গাড়ি প্রবেশে বাধা দিতে দেখা যায় পতেঙ্গা থানার পুলিশকে। কিন্তু মাস্ক না পরে সৈকতের পাড়ে প্রবেশ করলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
একইসঙ্গে সৈকতে দল বেধে ছবি তোলা, স্পীড বোটে চড়া, দোকানপাটে ভিড় জমিয়ে চলছে কোনাকাটা। তাদের অধিকাংশই স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী। তবে পুরো পরিবার নিয়েও এসেছেন অনেকে।
বেড়াতে আসা গৃহবধূ শাহনাজ সুলতানা বলেন, ‘এতো সমাগম হবে ভাবিনি। এখন মানুষের ভিড়ে হাঁটার জায়গা নেই। বেশির ভাগ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। কেউ নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখছে না। তাই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।’
স্বাস্থ্যবিধি মানছে না যাত্রীরাও। ছবি: নিউজবাংলা
ঢাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ৮ বন্ধু ঘুরতে এসেছেন সৈকতে। তারা বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় লকডাউন আসতে পারে তাই ঘোরাঘুরি করে নিচ্ছি। এখানে এসে দেখছি কেউ বিধিনিষেধ মেনে চলছে না।’
শুধু পতেঙ্গা সৈকত নয়, মানুষের ভিড় চোখে পড়েছে নগরীর ফয়েজ লেক, শিশু পার্ক, চিড়িয়াখানা, স্বাধীনতা পার্কসহ সবকটি বিনোদন কেন্দ্রে। এসব স্থানেও মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি।
এ বিষয়ে পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, ‘বিধিনিষেধে সৈকত-পার্ক নিয়ে তেমন কোনো নির্দেশনা নেই। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে ও মাস্ক পড়তে আমরা সবাইকে সচেতন করছি।’
একই কথা বলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তার। তিনি বলেন, ‘সভা সমাবেশ হলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারতাম। পর্যটন এলাকা নিয়ে সরকার এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা দেয়নি, তাই আমরা এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। তবে যাই করুক স্বাস্থ্যবিধি মেনেই করতে হবে। আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি।’
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে রোববার থেকে মাঠে নেমেছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।’
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, রোববার জেলায় অ্যান্টিজেন টেস্টসহ ১৬টি ল্যাবে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৯৮৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ৫৫০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে করোনা শনাক্তের হার বেড়েছে দ্বিগুণ।