সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন হলে নিশ্চিতভাবে আবারও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র হবেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী।
বাবার কবর জিয়ারত করে রোববার সকাল পৌনে ১১টার দিকে নগরীর শিশুবাগ বিদ্যালয়ে ভোট দিয়ে তিনি এমন প্রত্যাশার কথা জানান। সেই সঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচন ভোট অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে যথাযথ ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান আইভী।
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে যথাযথ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তার জয় নিশ্চিত।
আইভী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী অনেক পরিশ্রম করছে। আমি চাই, আরেকটু পরিশ্রম করে নির্বাচনটা নিরপেক্ষ করা হোক। ইনশাল্লাহ আমি জিতবই, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমি জিতবই।’
ভোটের প্রথম তিন ঘণ্টার পরিবেশ নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেন আইভী। তিনি বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ এখনও ঠিক আছে। আমি জানি না একটু পরে কী হবে। আমি চাই ভোটার দ্রুত ভোট দিতে পারুক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে বলব, আপনারা সহযোগিতা করুন। সহযোগিতা করলে ফল যেটাই হোক মেনে নেব।’
ধীরগতিতে ভোট গ্রহণ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন আইভী। দ্রুতগতিতে ভোট নিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবিও জানান নৌকার প্রার্থী।
তিনি বলেন, ‘ওয়ার্ড নম্বর ৩, ৫, ১৮, ১৭, ২০ এসব জায়গায় খুবই স্লো ভোট কাস্টিং হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সহযোগিতা চাচ্ছি। যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে আমার লোকগুলো ভোট দিতে পারে।’
নৌকার নিশ্চিত বিজয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আইভী ইনশাল্লাহ জিতবেই। কারণ এই শহরের মানুষের সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক। তারা আমাকে ভোট দিতে এসেছেন। আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে অনুরোধ জানাব, তারা যেন ভোটদান সহজ করে দেয়। কোনো কেন্দ্র যেন স্লো না থাকে। সবাই যেন দ্রুত ভোট দিতে পারেন।’
ভোট গ্রহণ ধীরে হওয়ার কারণ জানতে চাইলে আইভী বলেন, ‘ইভিএম নতুন, ভোটারদের কাছেও বিষয়টি নতুন। তাদের ট্রেইন-আপ করে গতি বাড়াতে হবে। দিন ছোট, শীতকাল। সব কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি আছে।’
কয়েকটি কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার এজেন্ট বের করে দেয়ার যে অভিযোগ এনেছেন তা অস্বীকার করেন আইভী। বলেন, ‘আমি যদ্দুর জানি, হাতির এজেন্ট সব জায়গায় আছে। দুয়েকটি কেন্দ্রে আমার এজেন্ট ছিল না।’
নিজের ভোট দিতে পারার স্বস্তিও ছিল তার কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘আমি আমার ভোট সুন্দরভাবে দিয়েছি। ইভিএম এ দিয়েছি। নারায়ণগঞ্জের মানুষ নির্ধারণ করে ফেলেছেন আমাকেই ভোট দেবে। ইনশাল্লাহ নৌকার জয় হবেই হবে। আইভীর জয় হবেই হবে।’
এর আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নারায়ণগঞ্জ ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দেন আইভীর সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী তৈমূর আলম খন্দকার।
ভোট দিয়ে তৈমূর লক্ষাধিক ভোটে জয় পাবেন বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত সব ঠিক আছে, তবে ভোটগ্রহণ শেষে বলা যাবে পরিবেশ কেমন ছিল। আমি আমার জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। সবকিছু ঠিক থাকলে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জিতব।’
এর আগে সকাল ৮টায় শুরু হয় ভোটগ্রহণ। ১৯২টি কেন্দ্রে ভোট একটানা চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। সব কটি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হচ্ছে।
গত ৩০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তারা হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী (নৌকা), খেলাফত মজলিসের এ বি এম সিরাজুল মামুন (দেয়াল ঘড়ি), স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার (হাতি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ (হাতপাখা), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জসীম উদ্দিন (বটগাছ), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মো. রাশেদ ফেরদৌস (হাতঘড়ি) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলাম (ঘোড়া)।
এ ছাড়া সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন এবং সংরক্ষিত ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে রয়েছেন ৩২ জন প্রার্থী।
সিটি এলাকার ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটারসংখ্যা ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন। এর মধ্যে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৬ জন পুরুষ ও ২ লাখ ৫৭ হাজার ১১১ জন নারী ভোটার এবং ৪ জন ট্রান্সজেন্ডার ভোটার রয়েছেন।