বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আইভী না তৈমূর: সকাল হলেই ভোট

  •    
  • ১৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:২৪

রাত পোহালেই নির্বাচনি দ্বন্দ্বে অবতীর্ণ হচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের সাত মেয়র প্রার্থী। নানা হিসাব-নিকাশের ছক কষছেন ভোটাররা। কারণ যোগ্য প্রার্থীকেই অভিভাবক হিসেবে নগর ভবনে দেখতে চান নগরবাসী। তবে স্থানীয়দের মতে, ভোটের লড়াই হবে মূলত সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তৈমূর আলম খন্দকারের মধ্যে।

শেষ হলো অপেক্ষা। রাত পোহালেই শুরু হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে একটানা চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

ভোটের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জবাসী নির্বাচিত করবেন তাদের পছন্দের মেয়র। নির্বাচনে মেয়র পদে নাম আছে সাত প্রার্থীর। কিন্তু সব আলোচনা সীমাবদ্ধ দুই প্রার্থীর মধ্যে। তারা হলেন: আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার।

সুখে-দুঃখে যাকে কাছে পাবেন তাকেই বিজয় উপহার দিতে চান নগরবাসী। শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত প্রার্থীরাও ছুটে গেছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের কাছে টানার চেষ্টা করেছেন আইভী ও তৈমূর।

নিজের চলমান উন্নয়ন এগিয়ে নেয়া, বন্দর আর শহরকে সংযোগ করতে কদম রসুল সেতু নির্মাণ, সুপেয় পানির ব্যবস্থাসহ নানা আশ্বাসে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করেছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী।

বিপরীতে সিটি করপোরেশরেন ঠিকাদারি সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া, হোল্ডিং ট্যাক্স কমানো, হকারদের পুনর্বাসন, জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তৈমূর আলম খন্দকার।

নির্বাচনি প্রচারে গিয়ে এসব প্রতিশ্রুতি দিলেও ভোটারদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের ইশতেহার তুলে ধরেননি কোনো প্রার্থী। এ নিয়ে কিছুটা ক্ষুব্ধ নগরবাসী। কারণ সুনিশ্চিত উন্নয়ন পরিকল্পনা পাননি তারা।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। ছবি সংগৃহীত

মোট ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ ভোটার রয়েছেন এই বন্দরনগরীতে। পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৬। আর নারী ভোটার আছেন ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১১ জন।

শুক্রবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে প্রার্থীদের প্রচার। এরপর ৩২ ঘণ্টার নীরবতা। এই সময়টাতে নানা হিসাব-নিকাশের ছক কষছেন ভোটার। কারণ যোগ্য প্রার্থীকেই অভিভাবক হিসেবে নগর ভবনে দেখতে চান নগরবাসী।

তবে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় কিছুটা ভিন্নতা তো আছেই। জায়গাটি নারায়ণগঞ্জ হওয়ায় সেখানে সমীকরণটি আরেকটু জটিল। সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। মর্যাদার লড়াইয়ে হারতে নারাজ আওয়ামী লীগ। আইভী-শামীমের চিরায়ত দ্বন্দ্ব ঘুচিয়ে ভোটে জয় পেতে কেন্দ্রীয় নেতারা ছিলেন আইভীর পাশে। শেষ দিন পর্যন্ত দলের কেন্দ্রীয় নেতারা চষে বেড়িয়েছেন নারায়ণগঞ্জ শহরে। শামীম ওসমানও শেষ পর্যন্ত সংবাদ সম্মেলন করে সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে নিজের সমর্থনের কথা তুলে ধরেছেন।

আওয়ামী লীগের আরও বড় মাথা ব্যথার কারণ হয়েছে বিএনপির দৃশ্যত মাঠে না থাকা। এই অবস্থায় নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত প্রার্থীর কাছে হেরে যাওয়াটা রাজনীতির অঙ্কে তাদের জন্য হবে বড় পরাজয়।

বিএনপির অনেক নেতা প্রকাশ্যে তৈমূরের বিরোধিতা করলেও শেষ পর্যন্ত তারা ভোটে গেলে সেটি হাতির ভাগ্যে যুক্ত হতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তার ওপর ওসমান পরিবারের আশীর্বাদ তার সঙ্গে যুক্ত হলে ঘুরে যেতে পারে ভোটের হিসেব-নিকেশ।

তবে শেষ বিচার জনগণের হাতেই থাকছে। শেষ পর্যন্ত ভোটাররা কী সিদ্ধান্ত নেবেন তার ওপরই নির্ভর করবে কে হবেন বিজয়ী।

২৭টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীর সংখ্যা ১৪৮। আর ৯টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থীর সংখ্যা ৩২।

কে কোথায় ভোট দেবেনআওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী তার বাড়ি লাগোয়া দেওভোগের শিশুবাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দেবেন।জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সেলিনা হায়াৎ আইভীর প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট আদিনাথ বসু বলেন, ‘রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় নগরীর দেওভোগের শিশুবাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দেবেন আইভী।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, মাজদাইরের আদর্শ স্কুলে ভোট দেবেন তিনি। কখন ভোট দেবেন জানতে চাইলে নির্দিষ্ট করে কোনো উত্তর দেননি তিনি। বলেন, ‘আমি পৌনে ৮টার দিকে বাসা থেকে বের হব।’

নির্বাচনি প্রস্তুতিএই নির্বাচনে মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৯২টি। সবকটি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। রোববার সকাল ৮টা থেকে নির্বিঘ্নে ভোটগ্রহণ শুরু করতে শনিবার দুপুর থেকে শুরু হয় কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইভিএমসহ নির্বাচনি সরঞ্জাম পাঠানোর কাজ।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার জানিয়েছেন, মরগ্যান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে দেয়া হয়েছে ১০ থেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সরঞ্জাম। ১ থেকে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার হাউস স্কুল থেকে। আর বন্দর থানার সরঞ্জাম বিতরণ করা হয় বন্দর থেকে।

প্রতিটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা এসে নির্ধারিত পয়েন্ট থেকে বুঝে নেন এসব সরঞ্জাম। তারপর পুলিশের পাহারায় সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়া হয় নির্ধারিত কেন্দ্রে।নির্বাচনি প্রচারের শেষ দিনে এসে দুই প্রার্থীই ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা বলেছেন। তবে ১৭ দিনের প্রচারে কখনও কোনো অরাজক বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখা যায়নি।

প্রার্থীরা দাবি করলেও নির্বাচনি পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার কোনো শঙ্কা নেই বলে মনে করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার।সহিংসতা নিয়ে কোনো প্রার্থী অভিযোগ করেছেন কিনা জানতে চাইলে মাহফুজা আক্তার বলেন, ‘না, আমাদের কাছে এরকম কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আসেনি। তবে আমাদের প্রস্তুতি আছে।’

তিনি বলেন, ‘ভোটকে সামনে রেখে আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ডেপ্লয়মেন্ট হয়ে গেছে। বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সবাই তাদের কার্যক্রমে নেমে গেছেন।’

মাহফুজা বলেন, ‘ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে আসবেন। শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে আসবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা ভোট কেন্দ্রে আসবেন, ভোট দেবেন। ভোট শেষে উৎসবমুখর পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্যে ফিরে যাবেন।’

১৯২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩০টি কেন্দ্রকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ’ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন। সেগুলোতে বাড়তি সতর্কতা নেয়া হয়েছে বলেও জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা।

নারায়ণগঞ্জ সিটির একাংশ। ছবি: সংগৃহীত

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিনারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে বহিরাগতদের উৎপাত বন্ধ করে ভোটের সার্বিক পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে রোববার নগরীর ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সবাইকে জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে চলাচলের অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলম বলেন, ‘আমি বলতে চাই, কোনো বহিরাগতকে আমরা আগামীকাল নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ করতে দেব না। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় আমাদের মোবাইল টিম থাকবে, আমাদের চেকপোস্ট থাকবে, জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে আমরা মানুষকে চলাচল করতে দেব। কালকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর এলাকার যে বা যারা বের হবেন, দয়া করে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে বের হবেন, যাদের বয়স ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে।’

টহলে নেমেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। ছবি: নিউজবাংলা

নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে ৫ হাজারেরও বেশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশ সুপার।তিনি বলেন, ‘কেউ যেন নির্বাচনের উৎসব, আমেজ বিনষ্ট করার চেষ্টা না করে। কোনো ধরনের দুষ্কৃতকারী, অতি উৎসাহী মহল যদি ভোটকেন্দ্রে, ভোটকেন্দ্রের বাইরে কোনো পাড়া-মহল্লায় অরাজকতা তৈরির চেষ্টা করে, তাহলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে।’

সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের উদ্দেশ করে এসপি জায়েদুল আলম বলেন, ‘কোনো ধরনের ছাড় আমরা দেব না। কাউকে কোনো ধরনের অরাজকতা করতে দেব না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে আছে, থাকবে।’

শনিবার বিকেল থেকে নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে টহলে নেমেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা।

এ বিভাগের আরো খবর