একটি সদ্যমৃত ব্যক্তির অঙ্গ দিয়ে ১৪ জন মৃত্যুপথযাত্রীর জীবন বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব। মরণোত্তর অঙ্গ রোগীর দেহে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে রোগী ফিরে পেতে পারে সুস্থ জীবন।
এক বছরের মধ্যে দেশে মরণোত্তর অঙ্গ প্রতিস্থাপন শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম। এই চিকিৎসক এরই মধ্যে ১ হাজার ৪৪টি কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন। তার প্রতিষ্ঠান শ্যামলীর সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে মরণোত্তর দান করা অঙ্গ প্রতিস্থাপন হবে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কে-৪০ ব্যাচের আয়োজনে রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে শুক্রবার রাতে গুণী এই চিকিৎসককে সম্মাননা জানানো হয়। অনুষ্ঠান শেষে এই চিকিৎসক একান্ত আলাপে নিউজবাংলাকে মরণোত্তর অঙ্গদানের বিষয়ে তথ্য দেন।
কামরুল ইসলাম বলেন, ‘সবকিছু ঠিক থাকলে সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতাল মরণোত্তর অঙ্গদান শুরু করা হবে।’
অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন ১৯৯৯ প্রণয়ন করা হয়। এটি সংশোধন করা হয় ২০১৮ সালে। এর মাধ্যমে অঙ্গদানের পরিধি বাড়লেও এখনও মরণোত্তর অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। তবে আশা করি এই বছরের মধ্যে মরণোত্তর দান করা অঙ্গ প্রতিস্থাপন সম্ভব হবে। এটা নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ট অনেক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার বিশ্বাস, আমরা সবাই মিলে কাজ করলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’
ডা. কামরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এতদিনেও অঙ্গ প্রতিস্থাপন শুরু না হওয়ার অন্যতম কারণ সামাজিক সচেতনতার অভাব। এমনকি ডাক্তারদের মধ্যেও সচেতনতার অভাব আছে৷ আইনে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কিডনি, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, অন্ত্র, যকৃৎ, অগ্ন্যাশয়, অস্থি, অস্থিমজ্জা, চোখ, চর্ম, টিস্যুসহ মানবদেহে সংযোজনযোগ্য যেকোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করার সুযোগ রয়েছে। দেশে কিডনি, চোখ, যকৃতের মতো অল্প কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন সম্ভব। তার মানে, কেউ মরণোত্তর দেহদান করলেও তার মাত্র কয়েকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অন্যের দেহে সংযোজন করার সুযোগ রয়েছে, বাকি সবই নষ্ট হয় শুধু ব্যবস্থাপনার অভাবে৷’
এই কাজে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কে-৪০ ব্যাচ ও সরকারের পক্ষ থেকে সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালও মরণোত্তর দেহ প্রতিস্থাপন কাজে সহযোগিতা করতে চায়। দরিদ্র ও অসহায় রোগীর চিকিৎসায় ব্যয় করার জন্য একটি ফান্ড দিতে চান তারা । যেকোনো সহযোগিতা আমরা করতে চাই। যেহেতু আমি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কাজ করি, তাই সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালের যদি কোনো সহাযোগিতা প্রয়োজন হয়, আমি আমার কর্মক্ষেত্রে থেকেও যথাসাধ্য করার চেষ্টা করব।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে এখনও মৃত্যুর পর দান করা শরীর থেকে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। সচেতনতার অভাব এবং মানুষের অনাগ্রহের কারণে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়াটি ফলপ্রসূ হয়ে ওঠেনি। তবে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে এবার এই উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন কিডনি ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশন, সোসাইটি অফ অর্গান ট্রান্সপ্লান্টেশন ও ইউরোলজি অ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্টেশন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। তবে সেটা এখনও আলোর মুখ দেখেনি।