মানুষকে খাইয়ে আনন্দ পেতেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী ও সাধক সৈয়দ এস এম জাহিদুল হক। বিশাল এক পাতিলে রান্না হতো সে খাবার। দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের বছর ২০২০ সালে সংক্রমণে জাহিদুলের মৃত্যুর পর সে আয়োজনে ভাটা পড়ে। এতে পাতিলটিও অকেজো হয়ে পড়ে থাকে। এমন বাস্তবতায় বিশাল পাত্রটি কাউকে উপহার দেয়ার চিন্তা করেন জাহিদুলের তিন সন্তান।
এত বড় পাতিল কাদের দরকার হবে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনার পর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দের কথা মাথায় আসে তাদের। সে ভাবনা থেকেই বিদ্যানন্দের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন তিনজন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ জানুয়ারি পাতিলটি এক টাকায় আহার করানো সংগঠনকে উপহার দেয়া হয়।
পাতিলটির বিশেষত্ব
বিদ্যানন্দের হেড অফ কমিউনিকেশন সালমান খান ইয়াসিন নিউজবাংলাকে জানান, ১২ ফুট ব্যাস ও ৬ ফুট গভীর এ পাত্রে একবারে ১০ হাজার মানুষের খাবার রান্না সম্ভব। ২০ বছর আগে স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি পাতিলটি ডুববে না। বন্যাদুর্গত এলাকায় প্রয়োজনে এটি ভাসিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য কোথাও নেয়া যাবে।
রান্না শুরু কবে
দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চরসুভরকুটি গ্রামে এরই মধ্যে পাতিলটি বসানো হয়েছে। শিগগিরই এতে রান্না শুরু হবে।
বিদ্যানন্দের কর্মকর্তা সালমান জানান, সংগঠনটির আগে থেকে বড় একটা পাতিল ছিল। তাতে সাড়ে তিন হাজার মানুষের রান্না করা যেত। আরও বড় পাতিল পাওয়ায় এখন তিন গুণের বেশি মানুষকে খাওয়ানো যাবে।
তিনি আরও জানান, আগের পাতিলের মতো এটিতেও গ্যাসে রান্না হবে। একসঙ্গে বেশি মানুষের খাবার আয়োজনের সুবিধা থাকায় এর মাধ্যমে জনবল ও খরচ কমে আসবে বিদ্যানন্দের।
পাতিলে কি নিয়মিত রান্না হবে
এ বিষয়ে বিদ্যানন্দের হেড অফ কমিউনিকেশন সালমান খান জানান, বর্তমানে ছয় বিভাগীয় শহর ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও রংপুর এবং নারায়ণগঞ্জ জেলায় বিদ্যানন্দের কিচেনে রান্না হয়। দিনে গড়ে তিন হাজার মানুষ এক টাকার এসব খাবার খান। এ কারণে রোজই এত বড় পাতিল ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না, তবে যেকোনো উৎসব বা বিশেষ মুহূর্তের আয়োজনে এমন পাতিলের প্রয়োজন হবে। সে সময় এটি ব্যবহার করা হবে।
তিনি আরও জানান, বিদ্যানন্দ দুই ঈদ, দুর্গাপূজা, বৌদ্ধ পূর্ণিমা কিংবা বড়দিনের মতো বড় ধর্মীয় উৎসবে ৫ হাজারের বেশি মানুষের খাবারের আয়োজন করে। এর বাইরে বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষের খাবার রান্না করা হয়। এমন মুহূর্তগুলোতে উপহারের পাতিলটি ব্যবহার করা হবে, তবে প্রয়োজনে যেকোনো সময় এটি ব্যবহার করা হবে।