বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আইভীর ‘শক্তি’ শামীম ওসমানবিরোধিতা

  •    
  • ১৫ জানুয়ারি, ২০২২ ১৮:৩১

নারায়ণগঞ্জের সাধারণ ভোটার ও বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায়, মেয়র হিসেবে নারায়ণগঞ্জ শহরের উন্নয়ন বা ব্যক্তি আইভীর জনপ্রিয়তার চেয়েও বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে আইভীর ওসমান পরিবারবিরোধী মনোভাব। নানা সময়ে প্রভাবশালী শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে সাহসী ভূমিকার কারণে সাধারণ ভোটারদের অনেকের সমর্থন আইভীর প্রতি।

দুই মেয়াদে নারায়ণগঞ্জের সিটি মেয়র হিসেবে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে বেছে নিয়েছে নারায়ণগঞ্জবাসী। তৃতীয় নির্বাচনে তিনি মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পেয়েছেন দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেয়া বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত তৈমূর আলম খন্দকারকে।

ভোটের আগে সব জায়গায় আলোচনা, কে হচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের এবারের মেয়র। সবাই স্বীকার করছেন, ভোটের মাঠে এবার অনেকগুলো সমীকরণ কাজ করছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে সেই শামীম ওসমান ও আইভীর দ্বন্দ্ব।

মেয়র হিসেবে শহরের উন্নয়ন বা ব্যক্তি আইভীর জনপ্রিয়তার চেয়েও বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে তার ওসমান পরিবারবিরোধী মনোভাব। নানা সময়ে প্রভাবশালী শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে সাহসী ভূমিকার কারণে সাধারণ ভোটারদের অনেকের সমর্থন আইভীর প্রতি।

নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় সাধারণ মানুষ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে সিটি নির্বাচনের গতি-প্রকৃতির হিসাব কষেছে নিউজবাংলা।

রাজধানীর পার্শ্ববর্তী বন্দর শহর নারায়ণগঞ্জে খান সাহেব ওসমান আলী পরিবার ও আলী আহম্মদ চুনকা পরিবারের বিরোধ অনেক পুরোনো।

খান সাহেব ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের দাদা। আর চুনকা হলেন আইভীর বাবা। ১৯৭২ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ও ১৯৭৩ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের দ্বন্দ্ব সামনে আসে। এর পর থেকে দুই পরিবারের সদস্যরা বিরোধে জড়িয়ে আছেন। এটি আরও তীব্র হয়েছে শামীম ও আইভীর মধ্যে।

২০১১ সালের প্রথম নির্বাচনে আইভী ও শামীম দুজনই নামেন জনপ্রিয়তার লড়াইয়ে। আইভী এক লাখের বেশি ভোটে জিতে যাওয়ার পর শামীম ওসমান দৃশ্যত রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়েছেন।

নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এই দুই পরিবার আওয়ামী ঘরানার হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগও দুই ভাগে বিভক্ত। এখানে রাজনীতির খেলাটাও যেন আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ, অন্য কোনো দলকে খুব একটা সুবিধা পেতে দেখা যায়নি কখনও। এর বাইরে শামীম ওসমানের বড় দুই ভাইয়ের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলায় জাতীয় পার্টির প্রভাবও কিছুটা দেখা যায়।

স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন, যুগ যুগ ধরে প্রভাব বিস্তারের কারণে সাধারণদের মাঝে ওসমান পরিবারবিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছে। এ কারণে ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে ওসমান পরিবারের বিপরীত প্রার্থীকে বেছে নেয়ার প্রবণতা দেখা যায় অনেকের মধ্যে, যার শুরুটা হয়েছিল ২০১১ সালের সিটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রফিউর রাব্বি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টানা ক্ষমাতায় থাকা ও প্রভাবের কারণে প্রায় প্রতিটি সেক্টরে ওসমান পরিবারের সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছিল। চাঁদাবাজিসহ নানা দুর্নীতি নারায়ণগঞ্জে জেঁকে বসেছিল। সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ একচেটিয়াভাবে চলে গিয়েছিল ওসমান পরিবারের হাতে।

‘২০১১ সালের সিটি নির্বাচনে আইভীর জয়ের কারণ মানুষ ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদী রূপটিকে খুব পছন্দ করেছিল। তাকে দ্বিতীয়বারও নির্বাচিত করার কারণও ওইটাই, মানুষের কাছে ওসমান পরিবারবিরোধী আর কোনো অপশন নেই।‘

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে মার্কার চেয়ে ব্যক্তিকে গুরুত্বসহকারে দেখেন ভোটাররা। মেয়র আইভী বেশ কিছু উন্নয়ন করেছেন ও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ নেই। এগুলোর পাশাপাশি ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী রূপ তাকে সাধারণদের মাঝে আলাদা জায়গা করে দেবে।’

আইভিপন্থি একজন যুবলীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আইভী আপা শামীম ওসমানকে কয়েক দফা প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ করেছেন। অন্যরা যেমন ভয়ে শামীম ওসমানকে এড়িয়ে চলেন, অথবা মিলিয়ে চলেন, উনি সেটা করেন না। এ কারণে মানুষ তার প্রতিবাদী রূপটাকে গ্রহণ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আইভী আপার সময়কালে নারায়ণগঞ্জ সিটিতে অনেক উন্নয়ন হয়েছে, তা দৃশ্যমান। টানা ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়ন হবে, সেটা খুবই স্বাভাবিক। তবে আইভী আপাকে মানুষ বেশি চায় শামীম ওসমানকে প্রতিহত করার জন্য। কারণ মানুষ বিশ্বাস করে সিটি করপোরেশনের মতো একদিন পুরো নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের ত্রাসের রাজত্ব শেষ হবে।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি বলেন, ‘ওসমান পরিবারের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ওসমান পরিবারের সঙ্গে মিলমিশ করে চলে। অনেক বিএনপির নেতাকে প্রকাশ্যে তাদের সঙ্গে চলতেও দেখা যায়। সে কারণে নানা সময়ে দল থেকে অনেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন।

‘সে জন্য সাধারণ মানুষ মনে করে, শামীম ওসমানের প্রার্থী হলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার। বিএনপি নির্বাচনে এলে তৈমূর আলম খন্দকার যে পরিমাণ ভোট পেতেন, এখন দেখা যাবে শামীম ওসমানের কারণে কিছু ভোট চলে যাবে আইভীর কাছে।’

এই মতের প্রভাব যে জনগণের মধ্যে আছে, সেটিও স্পষ্ট। শহরের চাষাঢ়া মোড়ে একজন চায়ের দোকানি বলেন, ‘আইভীই পারব তারে (শামীম ওসমান) কন্ট্রোলে রাখতে। আর সবাইত তারে ডরায়।’

একজন রিকশাচালক বলেন, ‘আইভী আপা নাকি অনেক জায়গায় চান্দাবাজি বন্ধ করছে। আমগো তো জায়গায় জায়গায় চান্দা দিতে হয়। সামনে যদি এইডাও বন্ধ করতে পারে, তাইলে ভালো হইব।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা ব্যবসার স্বার্থে প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি, রাখতে হয়, তাই সব কথা সব সময় বলা যায় না। তবে সেলিনা হায়াৎ আইভী মেয়র হওয়ার পর অনেক উন্নতি হয়েছে রাস্তাঘাটের ক্ষেত্রে; নগরে শৃঙ্খলা এসেছে। আগে যেভাবে একচেটিয়া ওসমান পরিবারের রাজত্ব ছিল, সেটা এখন সিটি করপোরেশনে নেই।’

নারায়ণগঞ্জে দলীয় প্রতীককে ভোটাররা কমই বিবেচনায় রাখছেন। আবার কেউ কেউ শুধু প্রতীক দেখে ভোট দেবেন বলেও জানিয়েছেন। তবে দিন শেষে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিবেশে সুন্দর নির্বাচন আশা করেন তারা।

২০১১ সালের পর ২০১৬ সালের নির্বাচনে আইভী পূর্ণ শক্তির বিএনপিকে মোকাবিলা করেন। সে বছর তিনি ৮০ হাজারের মতো ভোটে জয় পেয়ে নিজের জনভিত্তির প্রমাণ দেন। তবে এবার ভোটের ফল পাল্টে দিতে চান দলের আনুষ্ঠানিক সমর্থন জিতে নিতে ব্যর্থ হওয়া বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার। তার দল এই ভোট বর্জন করায় তিনি প্রার্থী হয়েছেব স্বতন্ত্র হিসেবে। মার্কা বেছে নিয়েছেন হাতি।

এ বিভাগের আরো খবর